শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

না ফেরার দেশে সাংবাদিক রাহাত খান

সাংবাদিক ও কথাসাহিত্যিক রাহাত খান

আজকের দেশবার্তা রিপোর্টঃ না ফেরার দেশে চলে গেলেন একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রখ্যাত সাংবাদিক ও কথাসাহিত্যিক রাহাত খান। গতকাল ২৮ আগষ্ট শুক্রবার রাত সাড়ে আটটার দিকে তিনি রাজধানীর ইস্কাটন গার্ডেনের নিজ বাসায় মৃত্যুবরণ করেন (ইন্নালিল্লাহি…রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর ৮ মাস।তিনি ডায়াবেটিসসহ নানা বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন। রাহাত খানের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে তার স্ত্রী অপর্ণা খান জানান, শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টায় বাসাতেই তিনি মারা যান। রাহাত খানের শেষ ইচ্ছা কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা। আমরা দায়িত্বশীল সংস্থার সঙ্গে কথা বলে সেই ব্যবস্থা করার চেষ্টা করছি। রাতে তার মরদেহ বারডেম হাসপাতালের হিমাগারে রাখা হয়। আজ সকাল ১১টায় রাহাত খানের লাশ নিয়ে যাওয়া হয় জাতীয় প্রেসক্লাবে। পরে সাংবাদিকদের শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বাংলা একাডেমিতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেও আরেক দফা শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেন শিল্পী-সাহিত্যিকরা। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বুদ্ধিজীবী করবস্থানে দাফনের বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি বলে পারিবারিক সূত্র জানিয়েছে। রাহাত খানের মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গভীর শোক প্রকাশ করে বাণী দিয়েছেন। এছাড়াও তার মৃত্যুতে শোক জানিযেছেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলামসহ বিশিষ্টজনরা। দীর্ঘদিন ধরে হৃদরোগ, কিডনি, ডায়াবেটিসসহ বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন রাহাত খান। যার জন্য তার চিকিৎসা প্রক্রিয়াটা জটিল হয়ে পড়ায় সার্জারি করা যাচ্ছিল না বলে বাসাতেই অবস্থান করছিলেন। গত ২০ জুলাই রাহাত খানকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর আগের দিন বাসায় খাট থেকে নামতে গিয়ে কোমরে ব্যথা পান তিনি। এরপর চিকিৎসকের পরামর্শে এক্স-রে করা হলে পাঁজরে গভীর ক্ষত ধরা পড়ে। এর পাশাপাশি তার শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে জরুরী ভিত্তিতে তাকে বারডেম হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। রাহাত খান বাংলাদেশের একজন খ্যাতিমান কথাশিল্পী। ছোটগল্প ও উপন্যাস উভয় শাখাতেই তার অবদান উল্লেখযোগ্য। কথাসাহিত্যিক হিসেবে সমাদৃত হলেও কর্মসূত্রে রাহাত খান আপাদমস্তকে একজন খ্যাতিমান সাংবাদিক। সাংবাদিক হিসেবেও রাহাত খানের অবদান উল্লেখযোগ্য। তিনি দীর্ঘদিন দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ইত্তেফাকে তিনি ষাটের দশক থেকে কর্মরত ছিলেন। সর্বশেষ তিনি দৈনিক প্রতিদিনের সংবাদ পত্রিকায় সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছিলেন। তিনি ১৯৯৬ একুশে পদকে ভূষিত হন। বিখ্যাত সিরিজ মাসুদ রানার রাহাত খান চরিত্রটি তার অনুসরণেই তৈরি করা।

এছাড়া রাহাত খানের মৃত্যুতে গভীর শোক ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডাঃ মুরাদ হাসান এমপি, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলীয় উপনেতা জিএম কাদের, জাপা মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু,খেলাঘর কেন্দ্রীয় কমিটির চেয়াম্যান অধ্যাপিকা পান্না কায়সার, সাধারন সম্পাদক প্রণয় সাহা, এড. সুণীল কুমার সরকার মিনটু, আব্দুল মতিন ভূইয়া, সাংবাদিক শ্যামল দত্ত, প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান,তারিকুজ্জামান হিমু, সাহাবুল ইসলাম বাবু প্রমুখ।

জন্ম ও শিক্ষা ও কর্মক্ষেত্রঃ রাহাত খান ১৯৪০ সালের ১৯ ডিসেম্বর কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলার পূর্ব জাওয়ার গ্রামের খান পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৬১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন। শিক্ষা জীবন শেষ করে রাহাত খান কিছুদিন জোট পারচেজ ও বীমা কোম্পানিতে চাকরি করে ময়মনসিংহের নাসিরাবাদ কলেজে যোগদান করেন। তারপর একে একে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, চট্টগ্রাম সরকারী কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যাপনা করেছেন তিনি।

১৯৬৯ সালে দৈনিক সংবাদ পত্রিকায় তার সাংবাদিকতা জীবনের হাতেখড়ি। পরে তিনি দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় যোগদান করেন। ২০০৯ সাল থেকে তিনি দৈনিক ইত্তেফাকের সহকারী ও ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৩ সালে তার সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় দৈনিক বর্তমান পত্রিকা। সর্বশেষ তিনি দৈনিক প্রতিদিনের সংবাদ পত্রিকার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন।

লেখা ও প্রাপ্তিঃ বর্ণাঢ্য সাংবাদিকতা জীবনে রাহাত খান কথাশিল্প, ছোটগল্প, প্রবন্ধ-নিবন্ধ ও উপন্যাসের নিপুণ কারিগর হয়ে উঠেছিলেন। ১৯৭২ সালে তার প্রথম গল্পগ্রন্থ অনিশ্চিত লোকালয় প্রকাশিত হয়। তার পরবর্তী উপন্যাস ও গল্পগ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে অমল ধবল চাকরি, ছায়াদম্পতি, শহর, হে শূন্যতা, হে অনন্তের পাখি, মধ্য মাঠের খেলোয়াড়, এক প্রিয়দর্শিনী, মন্ত্রিসভার পতন, দুই নারী, কোলাহল ইত্যাদি। একুশে পদক ছাড়াও তিনি বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (১৯৭৩), সুহৃদ সাহিত্য পুরস্কার (১৯৭৫), সুফী মোতাহার হোসেন পুরস্কার (১৯৭৯), আবুল মনসুর আহমদ স্মৃতি পুরস্কার (১৯৮০), হুমায়ুন কাদির স্মৃতি পুরস্কার (১৯৮২), ত্রয়ী সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৮) লাভ করেছেন ।