বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বাসভবন থেকেই রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব সামলাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী

করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে মানুষকে ঘরে থাকার নির্দেশনা দেওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেও বাসভবন থেকে বের হচ্ছেন না। তাই বলে রাষ্ট্রীয় কোনো কাজই থেমে নেই। সরকারি বাসভবন গণভবনে থেকেই শেখ হাসিনা সামলাচ্ছেন দাপ্তরিক সব কাজ। নিয়মিত সভা করছেন তিনি। ভিডিও কনফারেন্সে নিচ্ছেন মাঠপর্যায়ের খোঁজ-খবর, সংশ্নিষ্টদের দিচ্ছেন নানা নির্দেশনা।

দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঘটার পর গত ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। গণপরিবহনও বন্ধ করে সবাইকে বলা হয় ঘরে থাকতে। ওই ছুটির মেয়াদ ইতোমধ্যে কয়েক দফায় বাড়িয়ে ৩০ মে পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে।

এর মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী তার ত্রাণ তহবিলে অনুদান গ্রহণ করেছেন। তবে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সহায়তা দিতে এলে তাদের সঙ্গে সরাসরি দেখা না করে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হন তিনি। শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে সরাসরি উপস্থিত থেকে আপনাদের কাছ থেকে দরিদ্র মানুষের সেবায় দেওয়া অনুদান গ্রহণ করতে পারলাম না। যেহেতু আমরা নিজেই সবাইকে ঘরে থাকার নির্দেশ দিয়েছি। সুতরাং সেটা ভঙ্গ করা উচিত নয়।’

এর মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্যবিধি মেনে করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবিলায় সরকারের কার্যক্রমের নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন তার প্রেস সচিব ইহসানুল করিম। সমকালকে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী সারাদেশে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন। এরই মধ্যে গণভবনেই বসেছে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠক, যাতে সভাপতিত্ব করেছেন শেখ হাসিনা।

গত সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে জানানো হয়, ঈদ উপলক্ষে দেশের আট বিভাগে ছয় হাজার ৯৭০ কওমি মাদ্রাসাকে আট কোটি ৬৩ লাখ ৪৫ হাজার টাকার অনুদান বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। বরাদ্দ করা এই অনুদান গত ১৭ মে জেলা প্রশাসকদের ব্যাংক হিসেবে ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার (ইএফটি) পদ্ধতিতে পাঠানো হয়েছে। এর আগে রোজা উপলক্ষে দেশের ছয় হাজার ৯৫৯টি কওমি মাদ্রসায় আর্থিক সহায়তা হিসেবে আট কোটি ৩১ লাখ ২৫ হাজার টাকা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে রংপুর বিভাগে ৭০৩টি, খুলনা বিভাগে এক হাজার ১১টি, বরিশাল বিভাগে ৪০২টি, ময়মনসিংহ বিভাগে ৩৯৭টি, ঢাকা বিভাগে এক হাজার ৭৮০টি, চট্টগ্রাম বিভাগে এক হাজার ৪৮১টি এবং সিলেট বিভাগে ৪৮১টি কওমি মাদ্রাসা রয়েছে। ঈদের আগে সারাদেশের মসজিদগুলোতেও আর্থিক সহায়তা দেবে সরকার।

কভিড-১৯ মহামারির বিস্তার নিয়ন্ত্রণে অফিস-আদালত ও যানবাহন চলাচল বন্ধের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত ৫০ লাখ পরিবারকে ঈদ উপলক্ষে আড়াই হাজার টাকা করে নগদ সহায়তা দিচ্ছে সরকার। গত বৃহস্পতিবার গণভবন থেকে এসব সুবিধাভোগীদের মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টে নগদ অর্থ পাঠানোর কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। একই সময়ে সরকারপ্রধান গণভবন থেকে মোবাইল ব্যাংকিং/অনলাইন ব্যাংকিং ব্যবস্থা সংবলিত বোতাম টিপে স্নাতক ও সমমান পর্যায়ের ২০১৯ সালের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি ও টিউশন ফি বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন।

প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব হাসান জাহিদ তুষার বলেছেন, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এরই মধ্যে বিভিন্ন বাহিনীর প্রধানদের নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এ ছাড়া রমজান উপলক্ষে বাজারে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতেও নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন তিনি। পাশাপাশি কভিড-১৯ মোকাবিলায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে বিভিন্ন নির্দেশনা দেওয়া এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কাজের তদারকিও করছেন প্রধানমন্ত্রী। পাশাপাশি সারাদেশের দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে এ মহামারি মোকাবিলায় দেশের মানুষকে ত্রাণ বিতরণ করতে প্রয়োজনীয় নির্দেশনাও দিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

এদিকে, কভিড-১৯ মোকাবিলায় সরকারের ত্রাণ বিতরণে কয়েকটি জেলায় অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি কঠোর হস্তক্ষেপে সেই অভিযোগও এখন আর শোনা যাচ্ছে না বলে বিভিন্ন সূত্র থেকে খবর মিলেছে।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক (প্রশাসন) আহসান কিবরিয়া সিদ্দিকী বলেন, গণভবনে থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে মন্ত্রিপরিষদ বৈঠক থেকে শুরু করে আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট বিষয়েও প্রয়োজনীয় সভা নিয়মিত করে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ছাড়া তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে তার দাপ্তরিক কাজ সম্পন্ন করছেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার স্বাস্থ্যবিষয়ক নির্দেশনা মেনে কাজ চলছে বলেও জানান আহসান কিবরিয়া।

কভিড-১৯ প্রতিরোধে প্রধানমন্ত্রী গত ৩১ মার্চ ৬৪ জেলার জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং বিভিন্ন দপ্তরের মাঠপর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে একযোগে ভিডিও কনফারেন্সে গণভবন থেকে সরাসরি কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস বলেন, ভিডিও কনফারেন্সে সংযুক্ত হয়ে বিভিন্ন জেলার কর্মকর্তাদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেছেন সরকারপ্রধান। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর থেকে প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মাঠপর্যায়ের কার্যক্রমও সমন্বয় করে আসছেন। সংকট মোকাবিলায় ১ এপ্রিল ৩১টি, ১৬ এপিপ্রল ১০টি, ২০ এপ্রিল ১৩টি এবং ২৭ এপ্রিল ১০টি নির্দেশনা দেন তিনি।

এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের আয়োজনে ‘এনহ্যান্সিং রিজিওনাল কো-অপারেশন ইন সাউথ এশিয়া টু কমব্যাট কভিড-১৯ রিলেটেড ইমপ্যাক্ট অন ইটস ইকোনমিকস’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল সম্মেলনে গণভবন থেকে যোগ দেন শেখ হাসিনা। ওই সম্মেলনে করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে এই পৃথিবী শতবছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় সংকটে পড়েছে মন্তব্য করে বিশ্বকে এক হয়ে এটা মোকাবিলা করার আহ্বান জানান তিনি। এর আগে গত ১৫ মার্চ কভিড-১৯ ঠেকানোর লড়াইয়ে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে সার্ক নেতাদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে গণভবন থেকে যোগ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।