শুক্রবার, ০৯ জুন ২০২৩, ২৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০

বেসরকারী ভার্সিটিতে প্রণোদনা চাই করোনা সঙ্কট উত্তরণে

সমিতির সভাপতি শেখ কবির হোসেন

করোনা প্রভাবে বেসরকারী খাতের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আয় নেমে এসেছে প্রায় শূন্যের কোটায়। অনেক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের বেতন ও প্রশাসনিক ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে। করোনা সঙ্কটে বহু শিক্ষার্থীর টিউশন ফি দেয়ার সামর্থ্য কমে গেছে। এছাড়া তৈরি হয়েছে শিক্ষার্থীদের সেশন জটের ঝুঁকি। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য আর্থিক প্রণোদনা প্রয়োজন বলে মনে করেন বাংলাদেশ বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির সভাপতি শেখ কবির হোসেন। তিনি জানিয়েছেন, শীঘ্রই সরকারের কাছে সহযোগিতা চাওয়া হবে। এদিকে, বিশ্বব্যাপী করোনা সংক্রমণের ফলে থমকে গেছে প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থা। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। এই প্রেক্ষিতে বেশি বিপাকে পড়ে গেছে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় খাত। অনলাইনে তাদের যেটুকু শিক্ষাক্রম চালু ছিল সেটা স্থগিত হয়ে গেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)-এর ৬ এপ্রিলের একটি ঘোষণা মোতাবেক। এর মাত্র চারদিন পর গত ১০ এপ্রিল পুনরায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে অনলাইন পরীক্ষা, মূল্যায়ন ও ভর্তি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত জানায় ইউজিসি। সাম্প্রতিক সময়ে ইউজিসি বেশ কয়েকটা সিদ্ধান্ত দিয়েছে। প্রথমবার অনলাইন শিক্ষাক্রম চালু করার কথা বলল। তারপর প্রজ্ঞাপন জারি করে জানাল পরীক্ষা, মূল্যায়ন ও ভর্তি নেয়া যাবে না। এ বিষয়ে শেখ কবির হোসেন বলেন, বেশ কয়েকদিন কথা হয়েছে এ বিষয়টি নিয়ে। তবুও বলছি, এই সঙ্কটের সময়ে প্রথমে ইউজিসি নির্দেশনা দিল অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করার। নির্দেশনা অনুযায়ী বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি’র পক্ষ থেকে সকল সদস্যকে অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করতে বলা হলো। যে সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের যথেষ্ট সুযোগ-সুবিধা নেই তাদের সহযোগিতা করার জন্য বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অনুরোধও জানানো হলো। আমার মনে হয় প্রায় সবাই অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করতে পেরেছে। আমার বিশ্ববিদ্যালয়ও নতুন, তারাও অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করেছে। পরে যখন এক পর্যায়ে পরীক্ষা বা ভর্তির প্রশ্নটা এলো তখন হঠাৎ একটা নোটিস পেলাম। বলা হলো, এরকমভাবে ভর্তি বা পরীক্ষা নেয়া যাবে না। তাহলে শিক্ষা কার্যক্রম চালু করে পরীক্ষা ও ভর্তি বাদ দিয়ে আংশিক কার্যক্রম চালালে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের খুব একটা উৎসাহ থাকে না। এসব চিন্তা করে ইউজিসির মাননীয় চেয়ারম্যান মহোদয় বরাবর প্রজ্ঞাপনটি রিভিউ করার জন্য আমরা আবেদন করি। এই চিঠির একটি অনুলিপি মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী মহোদয় বরাবরও দেয়া হয়। তারপর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আমাদের আবেদনের উত্তরে ইউজিসি থেকে বলা হয়, অনলাইনে পরীক্ষা বা ভর্তি নেয়ার কোন অবকাশ আইনে নেই। এটিতে আমরা কিছুটা হতবাক হয়ে যাই। এই বিষয়টি নিয়ে ইউজিসির চেয়ারম্যানের সঙ্গে আমার আলাপ হয়। একইসঙ্গে মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী মহোদয়, উপ-মন্ত্রী মহোদয় ও সচিব মহোদয়ের সঙ্গেও বিষয়টি নিয়ে কথা বলি। এরপর মন্ত্রী মহোদয়ের সম্মতিক্রমে তার বরাবর আমরা চিঠি দিয়েছি। মাননীয় মন্ত্রী আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন, মে মাসের প্রথম সপ্তাহে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে একটা সমাধানে পৌঁছানোর। এদিকে, ইউজিসির এধরনের সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে তার স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলাপ করে নেয়াটা কতটা জরুরী জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি মনে করি ইউজিসি একটা কমিশন। উচ্চশিক্ষার বিষয়ে তারাই রেগুলেটরি অথরিটি। তারা যা রেগুলেট করবে সেভাবে আমরা চলব। কমিশন যখনই মনে করবে নির্দেশ দেবে। সেটা আমরা মানতে বাধ্য। তবে আমরা মনে করি যে কোন আইন বা নিয়ম করতে গেলে বা কোন ধারা-উপধারা বা কোন পলিসি করতে গেলে সেটা যদি সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে করা হয় তাহলে সেটা আরও গ্রহণযোগ্য হয়। একইভাবে কার্যকর করতেও সুবিধা হয়, ফলাফলও ভাল আসে। যদিও আমাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করার জন্য ইউজিসি বাধ্য নয়। তবুও আমরা অনুরোধ করব, আসুন আলাপ-আলোচনা করে ভাল সিদ্ধান্ত যেটা হয় সেটাই কার্যকর করার ব্যবস্থা আমরা গ্রহণ করব। তাহলেই দেশ ও জাতি উভয়েই উপকৃত হবে। এদিকে, শিক্ষার্থীদের একটা অংশ বলছে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ইন্টারনেটের যে অবকাঠামো আছে, সেখানে অনলাইনে ক্লাস বা পরীক্ষা নেয়া একই সঙ্গে খুব কঠিন হবে এবং যথাযথ হবে না। এ প্রসঙ্গে তিনি জানান, এই কথাটা একেবারে ফেলে দেয়ার মতো না। অনেক জায়গায় এমন আছে। প্রথমত, যারা পরীক্ষা দিতে পারবে না, তাদের পরীক্ষা আমরা পরে নেব। দ্বিতীয়ত, অনলাইন শিক্ষার জন্য কিন্তু ফোরজি অত্যাবশ্যক নয়। ইতোমধ্যে আমরা গবেষণা শুরু করেছি দেখতে যে কেউ যদি শুধু ফিচার ফোন এবং টুজি কানেকশন দিয়েও পড়তে বাধ্য হয় তাহলে তার জন্য অনলাইন শিক্ষার রূপটা কী হবে। পরীক্ষার ব্যাপারে শুধু এটাই বলব যে আমাদের প্রচলিত পরীক্ষার ধারাই সবচাইতে ভাল নিয়ম এটাও কিন্তু এখন আর কেউ বলে না। আপনার ‘ওপেন বুক টেস্ট’ পদ্ধতি আছে, এ্যাসাইনমেন্ট ভিত্তিক ও প্রজেক্ট ভিত্তিক মূল্যায়ন আছে- যেখানে কে কী মুখস্ত করে এসেছে, কে কী দেখে লিখল এসব একেবারেই অপ্রাসঙ্গিক। অতএব অনলাইনে পরীক্ষা শুধু সম্ভবই নয়, শিক্ষার পদ্ধতি হিসেবেও আমাদের আরও আধুনিক পর্যায়ে যাওয়ার সুযোগ এখানে আছে। যেমন, জুম এ্যাপের মাধ্যমে ক্লাস নেয়া যায়। সারাবিশ্বেই এটা চলছে। এখানে সরকার ও টেলিকম কোম্পানি বড় ভূমিকা রাখতে পারে। দেশের অব্যবহৃত ব্যান্ডউইথের সামান্য অংশ উন্মুক্ত করে দিলেও অতি কম দামে টেলিকম সেটুকু সংযোগ করিডর ‘বিশেষ শিক্ষা প্যাকেজ’ হিসেবে দিতে পারে। এতে করে শিক্ষার্থীরা কম খরচে পর্যাপ্ত কানেকটিভিটি পাবে। ধরুন কোন একটি এলাকায় বিদ্যুত চলে গেল। সেক্ষেত্রে সমাধানটা কীভাবে হবে কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ে কিভাবে পাঠদান চলবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনলাইনে সর্বনি¤œ যেটুকু যোগাযোগ সকল শিক্ষার্থীর পক্ষে পাওয়া সম্ভব সেটা মাথায় রেখেই শিক্ষাক্রম সাজাতে হবে। অনলাইন মানেই কিন্তু লাইভ ভিডিও নয়। এখানে অনেক ধরনের ‘লো ফাই’ উপায় আছে। এসব নিয়ে আমাদের শিক্ষক-অধ্যাপকরা ইতোমধ্যেই পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করেছেন। আমার মনে হয় এসবের জন্য পরীক্ষা স্থগিত রাখা ঠিক নয়। কারণ এই পরিস্থিতি কতদিন চলবে তার কোন ঠিক নেই। এতে শিক্ষা কার্যক্রম যদি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায় তাহলে কী হবে? গোটা জাতি কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আমাদের তো বের করতে হবে সমস্যা সমাধানের কী কী উপায় আছে। সবাইকে সঙ্গে নিয়েই একটা পথ বের করতে হবে যেন সারাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে গতিশীল করা যায়। যেখানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গণভবনে বসে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সারাদেশের করোনাভাইরাস রোধে কার্যক্রম পরিচালনা করছেন সেখানে আমাদের দেশে অনলাইনে পড়াশোনা কিংবা পরীক্ষা-মূল্যায়ন কেন সম্ভব হবে না? এটাই আমি বুঝি না। না হওয়ার কোন কারণ আমি দেখি না। এদিকে, বর্তমান পরিস্থিতির ফলে অনেক শিক্ষার্থীর পক্ষে টিউশন ফি বা ভর্তি ফি দেয়া সম্ভব নয়। এ অবস্থায় কীভাবে ভর্তি পদ্ধতিটা সম্ভব হবে প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অনেকের ভর্তি ফি দেয়ার সামর্থ্য নেই বলা হচ্ছে, কিন্তু আবার অনেকের তো আছে। আমাদের শিক্ষক, কর্মকর্তা বিশেষ করে সাধারণ যে কর্মচারীরা আছেন, তারাও তো আর্থিক সঙ্কটে পড়ে যাবেন। তাদের তো আয়ের অন্য কোন পথ তো নেই। এটাও তো আমাদের ভাবতে হবে। সেখানে যদি কেউ টিউশন ফি দেয়, ভর্তি ফি দেয়, তাহলেও তো সেই টাকাটা বিশ্ববিদ্যালয়ের খাতে ব্যয় করা যাবে। যারা এখন দিতে পারবে না, আমরা তাদের কাছ থেকে পরে নেব। তাই ফিস নিয়ে এই মুহূর্তে আমরা কোন চাপ দিচ্ছি না। পেমেন্ট সিস্টেমের অনেক ধরনের পদ্ধতি আছে। যেমন, প্রথমে সেমিস্টারের শুরুতে ফিসের কিছু অংশ দেয়া যায় পরে আস্তে আস্তে টিউশন ফি পরিশোধ করার সুযোগও আছে। এই পরিস্থিতিতে সবকিছু অবশ্যই মানবিক দৃষ্টিতে দেখা হবে।