শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আন্দোলনে আগুন জ্বালিয়েছিল নাসিমের যে ছবি

বাংলাদেশের সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা মোহাম্মদ নাসিম ৭২ বছর বয়সে শনিবার সকাল ১১ টা ১০ মিনিটে মারা গেছেন। সিরাজগঞ্জ-১ আসন (কাজীপুর ও সদর উপজেলার একাংশ) থেকে তিনি পাঁচবারের নির্বাচিত সাংসদ তিনি। আওয়ামী লীগের হুইপ থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময় স্বরাষ্ট্র, ডাক ও টেলিযোগাযোগ, গৃহায়ন ও গণপূর্ত এবং সর্বশেষ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। সর্বশেষ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম কমিটির সদস্য মোহাম্মদ নাসিম ১৪ দলের মুখপাত্র হিসাবেও দায়িত্ব পালন করছিলেন।

দেশের বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে মোহাম্মদ নাসিমের অবদান অনেক। তিনি স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭৫ সালের পর জেল হত্যাকাণ্ডে বাঙালি হারায় চার জাতীয় নেতাকে। নাসিম হারান তাঁর পিতাকে। এর কোনো কিছুই তাকে রাজনীতি থেকে বিচ্যুতি ঘটাতে পারেনি। বরং সময়ে সময়ে হয়ে ওঠেছেন আন্দলনের এক নায়ক। পঁচাত্তরের হত্যাকাণ্ডের পর মোহাম্মদ নাসিমকেও গ্রেপ্তার করা হয়। সেইসময় দীর্ঘদিন তাকে কারাগারে থাকতে হয়েছে।

আশির দশকে তিনি স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের এক পরিচিত মুখ। রাজপথে ছিলেন লড়াকু সৈনিক। তার নেতৃত্বে অসংখ্য মিছিল-মিটিং হয় আন্দোলন সংগঠিত করতে। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের সময় তিনি আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।

২২১-২০০৬ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত সরকারের আমলে হরতালের ডাক দেয় তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগ। সেই আন্দোলন রাজপথে তৎকালীন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাধার মুখে লাঠিপেটার মুখোমুখি হন তিনি। পুলিশের রাবার বুলেট আর লাঠিচার্জে রাজপথে লুটিয়ে পরেন নাসিম আর অগ্নিকন্যা খ্যাত মতিয়া চৌধুরী। রাজপথে নাসিমের লুটিয়ে পড়ার সে দৃশ্যই পরবর্তী সময়ে আন্দোলনের শক্তি জুগিয়েছে তৃণমূলে।

রাজনীতির বিভিন্ন পর্যায়ে মোহাম্মদ নাসিমকে অনেকবার কারাবন্দী হতে হয়েছে। প্রথম তাকে কারাগারে যেতে হয় ১৯৬৬ সালে, যখন তিনি এইচএসসি পড়ছিলেন। সেই সময় পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে ভুট্টা খাওয়ানোর চেষ্টার বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে পিতা এম মনসুর আলীর সঙ্গে কারাগারে যেতে হয় মোহাম্মদ নাসিমকেও। একবছর পরে তিনি ছাড়া পান।

১৯৭৫ সালে সপরিবারে শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা ও জাতীয় চার নেতার হত্যাকাণ্ডের পরে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল মোহাম্মদ নাসিমকে। ২০০৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অভিযানে আরো অনেক রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে তাকেও গ্রেপ্তার করা হয়।

সেই সময় অবৈধভাবে এক কোটি ২৬ লাখ টাকার সম্পদ অর্জন ও ২০ লাখ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করার অভিযোগে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একটি মামলায় বিশেষ জজ আদালত ২০০৭ সালে মোহাম্মদ নাসিমকে ১৩ বছরের কারাদণ্ড দেয়। তবে ২০১০ সালে উচ্চ আদালত ওই সাজা ও মামলা বাতিল করে দেন।

কিন্তু মামলায় সাজা হওয়ার কারণে ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি মোহাম্মদ নাসিম। সেই আসনে তার ছেলে অংশ নিয়ে বিজয়ী হন। মামলা ও সাজা উচ্চ আদালতে বাতিল হয়ে যাওয়ার পরে ২০১৪ সালের নির্বাচনে অংশ নিয়ে পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন মোহাম্মদ নাসিম। এরপর তাকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী করা হয়, ২০১৮ সাল পর্যন্ত তিনি স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকেন।

সর্বশেষ ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে তিনি পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। মন্ত্রী না হলেও তিনি আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ১৪ দলের মুখপাত্র হিসাবে তিনি দায়িত্ব পালন করেন।