শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ইউজিসির তথ্য অনুযায়ী অস্থায়ী ক্যাম্পাসে চলছে ২৭টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়।

ডেস্ক রিপোর্টঃ দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অনিয়ম-দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরতে ২০১০ সালে নতুন আইন করে সরকার। কিন্তু এই আইন প্রণয়নের এক দশক পরও অনেক বিশ্ববিদ্যালয় আইনের তোয়াক্কা করেনা। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাসে না যাওয়া, অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করানো, অননুমোদিত প্রোগ্রাম চালু করা, সরকার কর্তৃক উপাচার্য নিয়োগ না দেওয়সহ এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে রয়েছে নানান অভিযোগ।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন-২০১০ অনুযায়ী, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ২০১০ সালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন হওয়ার পূর্বে অর্ধশতেরও বেশি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হয়। এরপর থেকেই এসব বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে একাধিকবার সময় বেধে দেওয়া হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সর্বশেষ তথ্য মতে, আইনের তোয়াক্কা না করেই বর্তমানে অস্থায়ী ক্যাম্পাসে চলছে ২৭টি বিশ্ববিদ্যালয়। অন্যদিকে, ২৯ বিশ্ববিদ্যালয় স্থায়ী ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। যদিও স্থায়ী ক্যাম্পাসে ফিরে যাওয়া এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে কমিশন অননুমোদিত প্রোগ্রাম/কোর্স চালু রাখাসহ রয়েছে অনেক অভিযোগ।

এদিকে, আইন অনুযায়ী স্থায়ী ক্যাম্পাসে না যাওয়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে লাল তালিকাভুক্তি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইউজিসি। সম্প্রতি কমিশনের এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর চিঠি দিয়ে সব বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দিয়েছে।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর সাত বছরের মধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে হবে। সে অনুযায়ী সাত বছর অতিক্রম করছে ৭৮টি বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু এই ৭৮টির মধ্যে মাত্র ২৯টি বিশ্ববিদ্যালয় স্থায়ী ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। আর ২৭টি বিশ্ববিদ্যালয় স্থায়ী ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে না বলে ইউজিসি জানিয়েছে।

আইন অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর সাত বছরের মধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে হবে। তবে সাত বছরের মধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাসে গিয়ে স্থায়ী সনদ নিতে ব্যর্থ হলে নবায়নের জন্য আবেদন করতে হবে। সরকার পাঁচ বছর নবায়ন বৃদ্ধি করতে পারে। কিন্তু নবায়নেও আগ্রহ দেখাচ্ছে না অনেক বিশ্ববিদ্যালয়। সব মিলিয়ে স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার সময় পাওয়া যায় ১২ বছর। এমন সুযোগ পেয়েও ২৭টি বিশ্ববিদ্যালয় স্থায়ী ক্যাম্পাসে যায়নি। এবার তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হলো।

অন্যদিকে ৭ বছর স্থায়ী ক্যাম্পাসে না যাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নবায়নের জন্য আবেদন করেছেন। এদের অনেককে নবায়নের অনুমতিও দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সম্প্রতি সোনারগাঁও বিশ্ববিদ্যালয় (২০১২ সালে  প্রতিষ্ঠিত) ও ফারইস্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত) তিন বছরের জন্য স্থাপন ও পরিচালনার সাময়িক অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

জানা যায়, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ২০০২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। স্থায়ী ক্যাম্পাস করেছে সাভারে। কিন্তু এখনো রাজধানীর ধানমন্ডি এবং উত্তরায় অস্থায়ী ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। পুরোপুরি শিক্ষা কার্যক্রম স্থায়ী ক্যাম্পাসে নিয়ে যেতে গড়িমসি করছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। এজন্য ইউজিসির ওয়েবসাইটে বিশ্ববিদ্যালয়টির  নামের পাশে লাল তারকা চিহ্ন প্রদান করা হয়েছে।

ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠিত। বাড্ডায় তাদের স্থায়ী ক্যাম্পাসে পুরোপুরিভাবে শিক্ষা কার্যক্রম চললেও বনানী ও গ্রিন রোডের অস্থায়ী ক্যাম্পাসেও চলছে শিক্ষা কার্যক্রম।

স্থায়ী ও অস্থায়ী উভয় ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম চলছে এমন ১৭টি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। ড্যাফোডিল ও ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ছাড়া বাকিগুলো হলো- দি পিপলস ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, প্রিমিয়াম বিশ্ববিদ্যালয়, নর্দান ইউনিভার্সিটি, সাউদার্ণ ইউনিভার্সিটি, শান্ত মারিয়াম বিশ্ববিদ্যালয়, গ্রিন বিশ্ববিদ্যালয়, উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়, সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি, আশা ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি, স্টেট ইউনিভার্সিটি। ইউজিসির তথ্যমতে, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশও  ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাসে স্থানাস্তর করা কথা ছিল। এরপর ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি থেকে অস্থায়ী ক্যাম্পাসে পরিচালিত এসব প্রোগ্রামে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ রাখার সুপারিশ করা হয়েছিল। 

কিন্তু বর্তমানে ঢাকার মোহাম্মদপুরে নির্মানাধীন স্থায়ী ক্যাম্পাসে আংশিক শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। ধানমন্ডির অস্থায়ী ক্যাম্পাস ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেলেও লিখিত কোন বক্তব্য ইউসিজির কাছে দেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের বাড্ডায় নিজস্ব ভবনে ১০টি ফ্লোর তৈরি সম্পন্ন হয়েছে। তবে মহাখালীর অস্থায়ী ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব প্রোগ্রামের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। ২০০১ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাপারে ইউজিসি বলছে, ২০টি প্রোগ্রামের শিক্ষা কার্যক্রম ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাসে স্থানাস্তর করা কথা ছিল। এরপর ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি থেকে অস্থায়ী ক্যাম্পাসে পরিচালিত এসব প্রোগ্রামে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ রাখার সুপারিশ করেছিল। কিন্তু এরপরও অস্থায়ী ক্যাম্পাসে চলছে সব প্রোগ্রামের শিক্ষা কার্যক্রম।

নির্ধারিত পরিমাণ জমি কিনেছে তাবে এখনও নির্মাণ কাজ শুরু করেনি এমন ৬টি বিশ্ববিদ্যালয় হলো-স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রয়েল বিশ্ববিদ্যালয়, ভিক্টোরিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, ইউনির্ভাসিটি অব সাউথ এশিয়া এবং প্রেসিডেন্সি ইউনির্ভাসিটি।

নির্ধারিত পরিমানের চেয়ে কম জমিতে নির্মিত ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে সেন্ট্রাল ইউমেন’স ইউনির্ভাসিটি এবং প্রাইম ইউনির্ভাসিটি।

দি মিলেনিয়াম ইউনির্ভাসিটির নিজস্ব কোন জমিতে স্থায়ী ক্যাম্পাস নেই। ফাউন্ডেশনের নামে জমিতে ক্যাম্পাস পরিচালনা করছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। তাছাড়া একবারে নিজস্ব জমি নেই এমন দুটি বিশ্ববিদ্যালয় হলো-ইউনিভার্সিটি অব ডেভলপমেন্ট অল্টারনেটিভ ও ইবাইস ইউনিভার্সিটি।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে আইন পালনের আহবান জানিয়ে ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ বলেন, বেশ কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিদ্যমান আইন ও বিধি অনুসরণ করছে না। ইউজিসির নির্দেশনা তারা দেখেও না দেখার ভান করেন। বিদ্যমান আইন ও বিধি বাস্তবায়নে কমিশন প্রয়োজনে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

জানতে চাওয়া হলে কমিশনের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের সদস্য অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ বলেন, অস্থায়ী এবং স্থায়ী ক্যাম্পাসের তথ্যগুলো নিয়মিত আপডেট করা হয়। সেখানে দেখা যায় প্রতিবছর দুয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার তথ্য থাকে। সর্বশেষ ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি ও ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটি তাদের স্থায়ী ক্যাম্পাসে চলে গেছে। এমন তথ্য উঠে এসেছে। এছাড়া আমরা নতুনভাবে আরেকটি বিষয় সংযোজন করেছি, সেটা হচ্ছে আচার্য কর্তৃক নিয়োগকৃত উপচার্য না থাকা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে তারকা দিয়ে চিহ্নিত করা। ইউজিসির ওয়েবসাইটে নিয়মিত এসব তালিকা হালনাগাদ করা হয়।