বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ইনকিলাবের সম্পাদকের বিরুদ্ধে সাবেক নৌমন্ত্রী শাহজাহান খানের মামলা

আজকের দেশবার্তা রিপোর্টঃ আদালতে ইনকিলাব সম্পাদকসহ দুই জনের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেছেন আলোচিত সাবেক নৌপরিবহন মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাহাজান খান। আজ ১৬ আগস্ট, রবিবার ঢাকা মহানগর হাকিম মো. মঈনুল ইসলামের আদালতে দায়ের করা হয় এই মামলাটি। আসামিরা হলেন ইনকিলাব সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দিন ও কাদেরিয়া পাবলিকেশন্স অ্যান্ড প্রোডাক্টস লিমিটেডের পরিচালক আব্দুল কাদের। গত ২৮ জুলাই শাহাজাহান খানের মেয়ে ঐশী খানকে জড়িয়ে মিথ্যা সংবাদ প্রকাশের অভিযোগে এই মামলাটি দায়ের করা হয়। উল্লেখ্য, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েও ভুয়া নেগেটিভ সার্টিফিকেট দেখিয়ে বিদেশ ভ্রমণ করতে গিয়ে শাজাহান খানের মেয়ে ঐশী খান ধরা পড়েছেন বলে সংবাদ প্রকাশিত হয়। ২৬ জুলাই, রবিবার সকালে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এ ঘটনা ঘটে।

ঐশী খান লন্ডন যাওয়ার জন্য বিমানে উঠতে চেয়েছিলেন। তার আগে করোনা আক্রন্তের বিষয়টি ইমিগ্রেশন পুলিশের কাছে ধরা পড়েন। পরে ঐশী খানকে ‘ভুল করে’ করোনা নেগেটিভ রিপোর্ট দেয়া হয়েছিল বলে জানানো হয়। এসব বিষয় নিয়ে সংবাদ প্রকাশের জেরেই মামলাটি করা হয়।

দৈনিক ইনকিলাবে প্রকাশিত সম্পাদকীয় লেখাটি হুবহু নিচে তুলে ধরা হলোঃ

শাজাহান খানের মেয়ের করোনাসনদ জালিয়াতি

প্রকাশের সময় : ২৮ জুলাই, ২০২০, ১২:০১ এএম

করোনার জাল সনদ দেখিয়ে লন্ডন যাওয়ার সময় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ধরা পড়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও সাবেক নৌপরিবহনমন্ত্রীর শাহজাহান খানের মেয়ে ঐশী খান। করোনা পজিটিভ থাকার পরও নেগেটিভ সনদ নিয়ে তিনি লন্ডন যাচ্ছিলেন। সেখানে তিনি পড়াশুনা করেন। তাকে ফ্লাইটে উঠতে দেয়া হয়নি। বিমানবন্দর সূত্রমতে, রোববার সকালে ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার করে বিমানবন্দরে প্রবেশ করেন ঐশী খান। সঙ্গে তার পিতা শাজাহান খান এমপিও ছিলেন। ভিআইপি লাউঞ্জ দিয়ে ইমিগ্রেশন পার হওয়ার সময় ঐশী তার করোনা সনদ ইমিগ্রেশনে জমা দেন। সনদ দেখে সন্দেহ হলে ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা হেল্প ডেস্কের সহায়তা নেন। সেখানে আইইডিসিআর’র অনলাইন সার্ভারে তার রির্পোট তল্লাশি করা হলে করোনা পজিটিভ দেখা যায়। তখন তাকে জানানো হয়, তার দেয়া সনদটি জাল। তাকে লন্ডন যেতে দেয়া হবে না। বলা বাহুল্য, করোনায় পজিটিভের বিষয়টি ঐশীর অজানা ছিলনা। পজিটিভ সনদটিও তার কাছে ছিল। যেহেতু পজিটিভ সনদ দেখিয়ে বিমানে ওঠা সম্ভব ছিল না, তাই তিনি জাল নেগেটিভ সনদ দেখিয়ে পার পেতে চেয়েছিলেন। বিধি বাম, সেটা সম্ভব হয়নি। এই ঘটনায় আমরা অতীব বিস্মিত ও হতবাক হয়েছি। নৈতিকতার মান অত্যন্ত নিম্নগামী হলেই কেবল কারো পক্ষে এ ধরনের গর্হিত কাজ করা সম্ভব। ঐশী একটি শিক্ষিত পরিবারের সন্তান। তার পিতা শুধু সাবেক মন্ত্রীই নন, একজন প্রভাবশালী রাজনীতিকও। তার পক্ষে এরকম জাল-জালিয়াতির আশ্রয় নেয়া কল্পনাতীত মনে হলেও সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে। সম্ভবত এই সনদ জালিয়াতির বিষয়টি তার পিতারও জানা ছিল। যদি জানা ছিল, তবে তিনি মেয়েকে বাধা দেননি বা নিরস্ত করেননি কেন? তার সততা ও নৈতিকতাকেও তিনি এভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। আধুনিক শিক্ষিত পরিবারে সত্যনিষ্ঠতা ও নীতিবোধ চর্চার এই যদি হাল হয়, তাহলে আমরা কোথায় যাবো?

ভ্রমণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বা বিদেশী নাগরিকদের জন্য করোনার নেগেটিভ সনদ দেখানো বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এর ব্যত্যয় ঘটানোর কোনো সুযোগ কারো নেই, তা তিনি যেই হোন, যত প্রভাবশালী ও ক্ষমতাধর হোন না কেন।

আমরা বিমান বন্দর কর্তৃপক্ষকে, তার বিভিন্ন বিভাগ ও এজেন্সিকে অকুণ্ঠ ধন্যবাদ জানাই। তারা ক্ষমতা ও প্রভাবের কাছে নতি স্বীকার করেনি। জাল নেগেটিভ সনদে ঐশী খানকে লন্ডন যেতে না দিয়ে তারা দায়িত্বশীলতা ও কর্তব্যপরায়নতার প্রকৃষ্ট নজির স্থাপন করেছেন। এর ব্যতিক্রম হলে অনেক কিছুই হতে পারতো। করোনা পজিটিভ যাত্রীর সংস্পর্শে এসে বিমানের অন্যান্য যাত্রী করোনায় আক্রান্ত হতে পারতেন, যেটা তাদের জন্য হতে পারতো মারাত্মক ও বিপদজ্জনক। ঐশীকে যেতে না দেয়ায় এ আশংকা থেকে রক্ষা পাওয়া গেছে । জাল নেগেটিভ সনদে ঐশী লন্ডন গেলেও সেখানে সত্য উন্মোচিত হতো। তার করোনা পজিটিভ ধরা পড়তো। সে ক্ষেত্রে বিমানের লন্ডন ফ্লাইট বন্ধ হয়ে যেতে পারতো। স্মরণ করা যেতে পারে, লন্ডন ফ্লাইট সচল থাকায় ব্রিটেন ও ইউরোপে বিলম্ব হলেও যাতায়াত সম্ভব হচ্ছে। সেটাও আর সম্ভব হতো না। সবচেয়ে বড় কথা, বাংলাদেশের দুর্নাম হতো, ভাবমর্যাদার ওপর কালিমা লিপ্ত হতো। আর করোনার নেগেটিভ সনদের প্রতি আস্থা তলালিতে পৌঁছাতো। ইটালীতে জাল নেগেটিভ সনদের মাধ্যমে যাওয়া বাংলাদেশী কর্মীদের বিমানসহ ফেরৎ পাঠানোর ঘটনায় ব্যাপক বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয়েছে। ইটালীতে ফ্লাইট বন্ধ হয়েছে। অন্যান্য দেশেও বন্ধ হয়েছে। এটা যে দেশের জন্য কতবড় মর্যাদাহানি ও ক্ষতির বিষয়, সেটা ব্যাখ্যা করে পুরোপুরি বুঝানো যাবেনা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ বিমান যোগাযোগ বাড়াচ্ছে সঙ্গতকারণেই। বাংলাদেশ সনদ জালিয়াতির কারণে পিছিয়ে গেছে। এক কোটির উপর বাংলাদেশী বিদেশে কর্মরত রয়েছে। তাছাড়া নানা উপলক্ষে বিদেশীরাও বিপুল সংখ্যায় বাংলাদেশে আসে। তাদের সকলের যাতায়াত মসৃণ হওয়ার বদলে বাধাগ্রস্ত হওয়া কোনোভাবেই কাম্য হতে পারেনা।

জাল নেগেটিভ সনদে বিদেশ যাওয়ার নিষিদ্ধ এই নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে শূন্য সহিষ্ণুতা প্রদর্শনের বিকল্প নেই। রিজেন্ট, জেকেজি প্রভৃতি হাসপাতালের সনদ জালিয়াতির যে চিত্র বেরিয়ে এসেছে, তাতে বর্র্হিবিশ্বে এমন ধারণা সৃষ্টি হওয়া স্বাভাবিক যে, বাংলাদেশ থেকে দেয়া নেগেটিভ সনদ বিশ্বাসযোগ্য নয়, জাল হওয়াই সম্ভব। দেখা যাচ্ছে, ওইসব প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া এবং হোতাদের গ্রেফতার করার পরও সনদ বাণিজ্য বন্ধ হয়নি। ঐশী খানের জাল নেগেটিভ সনদ সংগ্রহ করা থেকেই সেটা বুঝা যায়। তবে আশার কথা, তাকে আটকে দেয়া হয়েছে। এখানে একটি বার্তা আছে। কেউ যে বিধি-নিয়মের বাইরে নন, তা স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়েছে। এই একটিমাত্র ঘটনায় জালিয়াতচক্র ও জালিয়াতির আশ্রয় গ্রহণকারীরা প্রমাদ গুণতে বাধ্য হবেন। একই সঙ্গে এ ঘটনা দেশের ভাবমর্যাদা পুনরুদ্ধার বা পুনর্গঠনে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারবে। আমরা আশা করবো, এক্ষেত্রে আরোপিত কড়াকড়ি অব্যাহত রাখা হবে। ঐশীর ঘটনা অন্যদের জন্য শিক্ষার আকার হবে, আমরা এমনটাও প্রত্যাশা করি।