বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

করোনাই শেষ মহামারি নয়

নিজস্ব সংবাদদাতা : পরবর্তী মহামারির জন্য বিশ্ববাসীকে আরও ভালোভাবে প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে সতর্ক করে দিয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রধান ড. টেড্রোস আডানোম গ্রেব্রিয়াসিস। জনস্বাস্থ্যকে সব ধরণের স্থিতিশীলতার ভিত্তি আখ্যা দিয়ে তিনি এই খাতে আরও বেশি বিনিয়োগ করতে দুনিয়ার সরকারগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

জেনেভায় এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘এটাই শেষ মহামারি নয়।’ ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের উহান শহরে সংক্রমণ শুরুর পর থেকে দুনিয়ার নানান কিছু পাল্টে দিয়েছে করোনাভাইরাস। বিশ্ব জুড়ে এতে আক্রান্ত বাড়তে থাকার প্রেক্ষাপটে গত ১১ মার্চ মহামারি ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। সংক্রমণ ঠেকাতে নানা দেশে আরোপ করা হয় কঠোর লকডাউন। তারপরও ঠেকানো যায়নি এই ভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃতের পরিমাণ।

যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সোমবার পর্যন্ত বিশ্ব জুড়ে দুই কোটি ৭০ লাখের বেশি মানুষের করোনাভাইরাসে আক্রান্তের তথ্য নথিভুক্ত হয়েছে। একই সময়ে ভাইরাসটিতে মৃত মানুষের সংখ্যা নয় লাখের কাছে পৌছে গেছে। মানুষের আক্রান্ত ও মৃত্যু ঠেকাতে ভাইরাসটির ভ্যাকসিন উদ্ভাবনে মরিয়া প্রচেষ্টা চালাচ্ছে বিশ্বের নানা দেশের গবেষকেরা।

এমন প্রেক্ষাপটে জেনেভায় ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে ডব্লিউএইচও প্রধান ড. টেড্রোস আডানোম গ্রেব্রিয়াসিস বলেন, ‘ইতিহাস আমাদের শিক্ষা দিয়েছে প্রাদুর্ভাব আর মহামারি জীবনের অংশ। কিন্তু পরবর্তী মহামারি আসার আগে দুনিয়াকে অবশ্যই প্রস্তুত থাকতে হবে- এবারের চেয়ে বেশি প্রস্তুতি থাকতেই হবে।’

জাতিসংঘের বিশেষায়িত সংস্থাটির প্রধান ড. টেড্রোস বলেন, ‘কোভিড-১৯ (করোনাভাইরাসে সৃষ্ট রোগ) আমাদের সবাইকে অনেক শিক্ষা দিয়েছে। এর একটি হলো স্বাস্থ্য কোনও বিলাসিতার বিষয় নয় যে যাদের সামর্থ্য আছে তারাই কেবল এই সেবা পাবে, বরং এটি মানুষের প্রয়োজন, অধিকার।’ তিনি বলেন, ‘সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার মৌলিক ভিত্তি হলো জনস্বাস্থ্য।’ স্বাস্থ্য ব্যবস্থা শক্তিশালী করা ছাড়া কোনও দেশই সংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাব কার্যকরভাবে মোকাবিলা করতে পারবে না বলেও জানান তিনি।

ডব্লিউএইচও প্রধান বলেন, গত কয়েক বছরে বহু দেশ ওষুধে ব্যাপক উন্নতি লাভ করেছে কিন্তু অনেক দেশই তাদের মৌলিক জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে অবহেলা করেছে। অথচ সংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাব মোকাবিলার মূল ভিত্তিই হলো জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা। এই খাতে আরও বেশি বিনিয়োগ করতে সরকারগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে ড. টেড্রোস আডানোম গেব্রিয়াসিস বলেন, এই বিনিয়োগ আরও বেশি স্বাস্থ্যকর এবং নিরাপদ ভবিষ্যতের নিশ্চয়তা দেবে।

আর অনেক দেশই এ ধরণের পদক্ষেপ নিয়ে সফলতা পেয়েছে বলেও জানান বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান। এক্ষেত্রে তিনি থাইল্যান্ডের উদাহরণ তুলে ধরে জানান, দেশটি গত ৪০ বছর ধরে স্বাস্থ্য খাত শক্তিশালী করার সুফল পাচ্ছে। তিনি জানান, আধুনিক সরঞ্জাম এবং জ্ঞানের সমন্বয়ের পাশাপাশি দেশটির জনস্বাস্থ্য খাতের জোরালো নেতৃত্ব সবসময়ই বৈজ্ঞানিক পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ সম্পর্কে অবহিত থেকেছে। পাশাপাশি দেশটি গড়ে তুলেছে দশ লাখের বেশি ভিলেজ হেলথ ভলান্টিয়ার। তারা স্থানীয় জনগোষ্ঠীর প্রতি যেমন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ তেমনি প্রশিক্ষিত এবং আধুনিক বৈজ্ঞানিক জ্ঞান সম্পর্কে অবহিত। এসব স্বেচ্ছাসেবক ক্রমাগত মানুষের সঙ্গে যথাযথ যোগাযোগের মাধ্যমে বিশ্বাস অর্জন করেছে আর তাদের মধ্যে সচেতনতা বাড়িয়ে তুলেছে।