শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

করোনায় শিক্ষার পাশাপাশি আরো যা হারাচ্ছে শিশুরা

দেশে করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে সরকার সবার আগে যে পদক্ষেপ নিয়েছে সেটি হচ্ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা। তখন থেকেই প্রায় দুই মাস যাবত স্কুল বন্ধ।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এরই মধ্যে বলেছেন, সংক্রমণ পরিস্থিতি উন্নতি না হলে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হবে।

দীর্ঘ সময় এই অস্বাভাবিক বিরতিতে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার যেমন ক্ষতি হচ্ছে তেমনি তারা মানসিকভাবে ভালো নেই।

অভিভাবক এবং বিশ্লেষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সবচেয়ে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে প্রাথমিক পর্যায়ের শিশু শিক্ষার্থীদের উপর।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এ সময়টিতে পড়াশোনার পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা সামাজিকতাও শিখে। এক্ষেত্রে স্কুলের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন বিশ্লেষক এবং অভিভাবকরা।

লক্ষ্মীপুরের বাসিন্দা সানাউল্লাহ সানুর দুই সন্তান প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। একজন দ্বিতীয় এবং অন্যজন তৃতীয় শ্রেণীতে অধ্যয়নরত।

তিনি জানান, তার সন্তানরা এখন লেখাপড়ায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে।

সানু বলেন, স্কুলে পড়ালেখা না হলে বাচ্চারা বাসায় পড়তে চায়না। শিশু সন্তানরা নির্দিষ্ট সময়ে স্কুলে যাওয়া, সেখান থেকে ফিরে আসা এবং বাসায় পড়তে বসার বিষয়গুলো নিয়মিত রুটিনের মতো ছিল। এখন তাদের রুটিন বলতে আর কিছু নাই। স্কুল ছিল ওদের আনন্দের জায়গা। সেখানে ওরা খেলাধুলা করতো। সবচেয়ে বেশি শিখতো সামাজিকতা।

যশোরের শার্শা উপজেলায় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন ফেরদৌসি রহমান। তিনিও জানান, দীর্ঘ সময় স্কুল বন্ধ থাকায় শিশুদের মানসিক বিকাশের উপর তার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

ফেরদৌসি বলেন, তাদের স্কুলে খেলাধুলা এবং সাংস্কৃতিক নানা আয়োজন থাকে। স্কুল বন্ধ থাকায় শিশুরা সেসব বিষয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তিনি উল্লেখ করেন।

আমাদের স্কুলে একটি বাগান আছে। কিভাবে বাগানের যত্ন নিতে হয় সেটাও শিশুদের শেখানো হয়, বলেন ফেরদৌসি রহমান।

বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে গবেষণা করে ‘গণস্বাক্ষরতা অভিযান’। প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পুঁথিগত বিদ্যার বাইরে শিক্ষার্থীদের বড় প্রত্যাশার জায়গা থাকে খেলাধুলা এবং বন্ধু মহল।

তিনি বলেন, অনেক শিশু প্রথমে স্কুলে যেতে চায়না। কিন্তু পরবর্তীতে সেখানে যখন তাদের বন্ধু তৈরি হয় তখন সে জায়গাটি তাদের জন্য আনন্দময় হয়ে উঠে।

রাশেদা বলেন, যে বয়সটিতে শিক্ষার্থীরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে, সে সময় তাদের সামাজিকতা শেখার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়। স্কুলে বিভিন্ন শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের সাথে মেলামেশা, নানা ধরণের খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তাদের সমাজের সাথে পরিচিত হতে সাহায্য করে। স্কুলের মাঠ তাদের অতি প্রিয়। বিশেষ করে শিশু শিক্ষার্থীদের। খোলা বাতাসে ঘরের বাইরে আনন্দটা তারা মিস করে।

তিনি জানান, তাদের স্কুলে খেলাধুলা এবং সাংস্কৃতিক নানা আয়োজন থাকে। স্কুল বন্ধ থাকায় শিশুরা সেসব বিষয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে উল্লেখ করেন রাশেদা।