শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

করোনা প্রতিরোধে রোডম্যাপ পরিকল্পনা সবই অনুপস্থিত

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সরকারের কোনো রোডম্যাপ নেই বলে মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, স্বাস্থ্য অধিদফতর আজকে যে একটা গাইডলাইন দেবেন, সেই গাইডলাইনও তারা দিতে পারেনি। গোটা বাংলাদেশে কোভিড-১৯ মোকাবিলা করার জন্য যে একটা ম্যাপ, রোডম্যাপ, একটা পরিকল্পনা, একটা প্রতিরোধ পরিকল্পনা তার সবটাই অনুপস্থিত এখানে।

রোববার (২৮ জুন) দুপুরে ইন্টারনেটের মাধ্যমে রাজধানীর উত্তরার বাসা থেকে জাতীয়তাবাদী হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক দলের আয়োজিত ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন মির্জা ফখরুল।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন, কয়েকদিন আগে চীনা বিশেষজ্ঞরা এসেছিলেন। তারা এসে ঠিক একই কথা বলেছেন যে, বাংলাদেশে সব কিছু এলোমেলো। এখানে কোথায় রোগ আছে সেটাই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। অর্থাৎ তারা (সরকার) চিহ্নিত করতে পারছেন না এবং সেটাকে চিহ্নিত করার জন্য কোনো ব্যবস্থা তাদের নেই।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের সরকারের যে স্বাস্থ্যব্যবস্থা এবং গোটা হেলথ সিস্টেম একেবারে ভেঙে পড়েছে, একেবারেই লেজে-গোবরে অবস্থা হয়ে গেছে। সরকার স্বাস্থ্যখাতে চরম অবহেলা করার জন্য, তাদের উদাসীনতার জন্য, ভ্রান্তনীতির কারণে আজকে দেশে সবচেয়ে করুণ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।

সরকারের সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন,‘এখানে কারো কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। সরকারের তরফ থেকে স্বাস্থ্য অধিদফতর আছেন। তারা এক সময়ে একেক রকম কথা বলছেন। আমাদের স্থানীয় সরকারের ঢাকা সিটির নর্থের (ডিএনসিসি) মেয়র (আতিকুল ইসলাম) গতকাল বলেছেন যে, আর কাল-বিলম্ব না করে এখন রেড জোনভিত্তিক ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। আপনি দেখুন, কতটা অসামঞ্জস্যহীনতা হলে, কতটা নৈরাজ্য সৃষ্টি হলে অনেক আগেই বলা হয়েছে যে, দেশে রেড জোন, ইয়োলো জোন, গ্রিন জোন করা হবে। ঢাকা শহরের কতক অঞ্চল রেড জোনে ভাগ করে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করে লকডাউন করবেন। একমাত্র পূর্ব রাজাবাজার ছাড়া কোথাও (লকডাউন) হয়েছে বলে আমার জানা নেই। আমার মনে হয়, সরকার জানেও না তারা কী করবেন, কী করতে চাচ্ছে?

করোনা মোকাবিলায় সরকারের দেয়া প্যাকেজ প্রণোদনার প্রসঙ্গ টেনে মহাসচিব বলেন, ‘সেটা মূলত ছিল ব্যাংক ঋণ। এই মুহূর্তে সরকারের বড় যে বিষয়টা গুরুত্ব দেয়া উচিত ছিল সেটা হলো মানবিক দিকটা। এখানে যে মানুষগুলো আজকে কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে, লকডাউনের কারণে, সাধারণ ছুটির কারণে যারা কর্মহীন হয়ে পড়েছে অথবা যারা আজকে কাজ পাচ্ছে না, তাদের ন্যূনতম বেঁচে থাকার জন্য যে প্রয়োজন, সেই প্রয়োজনের টাকাও সরকার তাদের কাছে পৌঁছাতে পারেনি।

তিনি বলেন, মাত্র আড়াই হাজার টাকা করে প্রধানমন্ত্রীর একটা অনুদান ৫০ লাখ মানুষকে দেয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু সেটাও পুরোপুরি দলীয়করণ করার ফলে যারা পাওয়া উচিত ছিল তারা পায়নি। সেটাও মাত্র এককালীন।

বিএনপির পক্ষ থেকে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি প্যাকেজ প্রস্তাবনার কথা উল্লেখ করলেও তাতে সরকার কোনো সাড়া না দেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

২০২০-২১ অর্থবছরে সরকারের বাজেটে স্বাস্থ্যখাতের বরাদ্দের সমালোচনা করেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, বাজেটে স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ সবচাইতে কম। কী দুর্ভাগ্য এই জাতির! আজকে রাস্তায় মানুষ মারা যাচ্ছে। টেস্ট করতে পারছে না, কোনো টেস্ট হচ্ছে না। এরপরেও ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী সাহেব গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের যে কিট উদ্ভাবন করলেন সেই কিটকে তারা (সরকার) নাকচ করে দিয়েছেন।

ফখরুল বলেন, বাংলাদেশের মানুষ খুব অসহায় হয়ে পড়েছে। তারা কোনো দিক-নির্দেশনা খুঁজে পাচ্ছে না। সরকারের দুর্নীতির কারণে সমস্ত দেশে কোভিড-১৯ ছড়িয়ে পড়েছে এবং এখন গ্রামে গ্রামে এই করোনাভাইরাসের রোগী দেখা যাচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে যেটা তারা (স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা) বলছেন যে, এই রোগের জন্য অক্সিজেন প্রয়োজন। সেই অক্সিজেন অপ্রতুলতা, অক্সিজেন কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না। এমনকি হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেন নেই।

হাসপাতালগুলোতে কোভিড রোগের চিকিৎসার জন্য শয্যা খালি থাকাকে ‘অ্যালার্মিং’ বলে মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্যব্যবস্থার প্রতি মানুষের যে কতটা অনীহা সেটা প্রমাণিত হয়…হাসপাতালগুলোতে যেসব শয্যা চিহ্নিত করা হয়েছিল কোভিড রোগীদের জন্য সেই বেডগুলো খালি পড়ে থাকছে। কারণ মানুষ হাসপাতালে যেতে চাচ্ছে না। হাসপাতালের যে ব্যবস্থা সেই ব্যবস্থায় কেউ আস্থা আনতে পারছে না।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক দলকে করোনা মোকাবিলায় এগিয়ে আসার জন্য ধন্যবাদ জানান বিএনপি মহাসচিব।

নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জাতীয়তাবাদী হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক দলের উদ্যোগে করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প ও বিনামূল্যে ওষুধ বিতরণের এই কর্মসূচিতে করোনাভাইরাস প্রতিরোধমূলক ‘আর্সিনিক এলবাম-৩০’ ও ‘ব্রায়ানিয়া এলবাম-৩০’ কয়েকশ মানুষের মধ্যে বিতরণ করা হয়।

চিকিৎসক দলের সভাপতি ডা. আরিফুর রহমান মোল্লার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক ডা. শফিকুল আলম নাদিমের পরিচালরায় সহ-সভাপতি মশিউজ্জামান পান্নু, মজিবুল্লাহ মুজিব, সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম জাকির হোসেন ও যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক গাজী নিজাম উদ্দিন এ সময় উপস্থিত ছিলেন।