বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ক্লাস মূল্যায়নের মাধ্যমে পাস করিয়ে সার্টিফিকেট দেয়ার প্রস্তাব

আজকের দেশবার্তা রিপোর্টঃ চলতি বছর পঞ্চম শ্রেণির প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) ও ইবতেদায়ি; জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) এবং জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষা না নেয়ার প্রস্তাব জানানো হয়েছে। 

মঙ্গলবার (১৮ আগস্ট) প্রাথমিক ও গণশিক্ষা এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত প্রস্তাবের স্বারসংক্ষেপ তৈরি করেছে। আগামী সপ্তাহে এটি প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে বলে জানা গেছে। 

তবে জুনিয়র স্তরের এসব পাবলিক পরীক্ষা বাতিল করা হলেও ক্লাস মূল্যায়নের মাধ্যমে সার্টিফিকেট প্রদান করা হবে বলে জানা গেছে।

জানা গেছে, করোনা পরিস্থিতির কারণে এই দুই পরীক্ষা বাতিলের নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। গত সপ্তাহে এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউসের উপস্থিতিতে শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিবের একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এর ভিত্তিতে উভয় মন্ত্রণালয়ই পৃথক দুটি সারসংক্ষেপ তৈরি করেছে।

প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, চলতি বছর ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত ১৩১ কর্মদিবস নির্ধারণ করা হলেও করোনা পরিস্থিতির কারণে এ পর্যন্ত ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ দিন বিষয়ভিত্তিক পাঠদান দেয়া সম্ভব হয়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর স্বাভাবিক পাঠদান কার্যক্রম গত ১৮ মার্চ থেকে বন্ধ আছে। এ ছুটির মেয়াদ আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। এতে মোট ৭১ কার্যদিবস বিদ্যালয়গুলো বন্ধ থাকবে। 

পঞ্চম শ্রেণির ৪০৬টি স্বাভাবিক পাঠদান সম্ভব হবে না। তবে সংসদ টেলিভিশনে চলমান ‘ঘরে বসে শিখি’ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রম চলমান রয়েছে। কিন্তু অনেকের শিক্ষার্থীর বাসায় টেলিভিশন না থাকায় এবং টেলিভিশন থাকলেও ক্যাবল সংযোগ না থাকায় সকল শিক্ষার্থীকে এ প্রোগ্রামের আওতায় আনা সম্ভব হয়নি।

স্বারসংক্ষেপে বলা হয়েছে, মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে পরিচালিত জরিপ অনুযায়ী পঞ্চম শ্রেণির প্রায় ৫৬ শতাংশ শিক্ষার্থী টেলিভিশন শিক্ষা কার্যক্রমের আওতায় রয়েছে বা অংশগ্রহণের সুযোগ পাচ্ছে। সে বিবেচনায় ১২ আগস্ট থেকে বাংলাদেশ বেতারে শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। এতে ৯৭ দশমিক ৬ শতাংশ শিক্ষার্থী-অভিভাবক মোবাইল ও রেডিওর মাধ্যমে এ সুবিধা নিতে পারছেন। এছাড়াও মোবাইল ফোনের মাধ্যমে দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় ৭৬ শতাংশ শিক্ষার্থীর সঙ্গে শিক্ষকরা যোগাযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন।

বলা হয়েছে, জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমি পাঠ (নেপ) ও বাংলাদেশ পরীক্ষা উন্নয়ন ইউনিটির (বেডু) পরিকল্পনা অনুযায়ী পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী-ইবতেদায়ি ও জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা নিতে হলে আরও প্রায় ৫০ কার্যদিবস পাঠদান প্রয়োজন রয়েছে। সেপ্টেম্বর মাসে বিদ্যালয়গুলো খোলা না হলে নভেম্বর বা ডিসেম্বর মাসের মধ্যে এ দুই স্তরের অবশিষ্ট পাঠদান সম্পন্ন করা সম্ভব হবে না। এ কারণে ২০২০ সালের এ দুই স্তরের পাবলিক পরীক্ষা বাতিল করে ক্লাস মূল্যায়নের মাধ্যমে পাস করিয়ে সার্টিফিকেট দেয়ার প্রস্তাব জানানো হয়েছে।

জানা গেছে, পাবলিক পরীক্ষা না হলেও এই দুই স্তরের শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা নেয়া হবে। এই ফলের ওপর ভিত্তি করে পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের একটি অংশকে মেধাবৃত্তি দেয়ার চিন্তা আছে। শিক্ষাবর্ষ দীর্ঘ না করে এ বছরের মধ্যেই ছাত্রছাত্রীদের শ্রেণিভিত্তিক লেখাপড়া শেষ করার চিন্তাভাবনা করছে সরকার। সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বরের মধ্যে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া সম্ভব হলে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে ডিসেম্বরে বার্ষিক পরীক্ষা নেয়া হবে।

জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আকরাম-আল-হোসেন বলেন, ‘পঞ্চম শ্রেণির পাবলিক পরীক্ষায় সারাদেশে প্রায় ৩২ লাখ পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে থাকে। এর সঙ্গে অভিভাবকরা যুক্ত রয়েছেন। করোনা পরিস্থিতির মধ্যে পরীক্ষা আয়োজন করে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের ঝুঁকির মধ্যে ফেলতে চাই না।’

তিনি বলেন, ‘বিষয়টি বিবেচনায় এনে চলতি বছর সমাপনী-ইবতেদায়ি পরীক্ষা বাতিলে প্রধানমন্ত্রীর কাছে সারসংক্ষেপ পাঠানোর জন্য তৈরি করা হয়েছে। আগামী রোববার এটি পাঠানো হতে পারে।’

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মাহবুব হোসেন বলেন, ‘করোনায় শিক্ষায় ক্ষতিপূরণে বিশেষ করে সামনে কোনো মাসে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিলে কী ধরনের পদক্ষেপ নিতে হবে, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের প্রস্তাবের ভিত্তিতে চলতি বছর জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা বাতিলে সারসংক্ষেপ তৈরি করা হয়েছে। আগামী সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে।’