বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

গাজীপুরের শ্রীপুরে ৪ খুনের লোমহর্ষক বর্ণনা দিল সিরিয়াল কিলার পারভেজ

গাজীপুরের শ্রীপুরের তেলিহাটি ইউনিয়নের আবদার(জৈনাবাজার)গ্রামে মা ও তিন সন্তানকে গলাকেটে হত্যার লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছে সিরিয়াল কিলার পারভেজ। সীমানা দেয়াল টপকে পিছন দিয়ে দোতলা বাড়ির ছাদে উঠেছিল অভিযুক্ত অপরাধী পারভেজ । সঙ্গে থাকা ব্লেড দিয়ে ছাদে কাপড় শুকানোর রশি কেটে সেটা গ্রিলের সঙ্গে বেঁধে বাথরুমের ফাঁকা জায়গা দিয়ে দোতলায় নামে সে। ওয়াশিং মেশিনের উপর পা দিয়ে নিচে নেমেই কিশোরী সাবরিনা সুলতানা নূরা ও নাওরিন হাওয়ার ঘরের খাটের নিচে পারভেজ লুকিয়ে পড়ে। নূরার কানে তখন হেডফোন ও ছোট বোন হাওয়ারিন হাওয়া ঘুমিয়ে ছিল। এরপর নুরাও গভীর ঘুমে। ঘণ্টাখানেক পর খাটের নিচ থেকে বের হয়ে পারভেজ রান্নাঘর থেকে ধারালো বঁটি-দা নিয়ে আসে। পাশের রুমে ছোট ছেলেকে বুকে নিয়ে ঘুমিয়ে ছিলেন নূরার মা স্মৃতি ফাতেমা। ঘরের দরজা ভাঙ্গার চেষ্টা করার সময় শব্দ শোনতে পেয়ে ঘুম ভেঙ্গে যায় ফাতেমার। দরজা খুলে পারভেজকে দেখে চিৎকার দেন ইন্দোনেশিয়ার নাগরিক স্মৃতি ফাতেমা। তাৎক্ষণাৎ তার মাথা ও শরীরে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে পারভেজ। কিছু বুঝে উঠার আগেই জ্ঞান হারিয়ে স্মৃতি ফাতেমা মেঝেতে পড়ে যান। এভাবেই শ্রীপুরের জৈনাবাজার এলাকায় দোতলা বাড়িতে মা ও তার তিন সন্তানকে গলা কেটে হত্যার মিশন শুরু করে একই এলাকার কাজীম উদ্দিনের বখাটে ছেলে পারভেজ। গাজীপুর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) সদস্যের হাতে গ্রেপ্তার পারভেজ একসঙ্গে চারজনকে হত্যার এমন বর্ণনা দিয়েছে বলে দাবি করেছেন সংস্থাটির সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তারা। গাজীপুর জেলা আদালতের ইন্সপেক্টর জানান, গ্রেপ্তারের পর গতকাল সোমবার দুপুরে পারভেজকে গাজীপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রে শরীফুল ইসলামের আদালতে হাজির করা হয়। ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে সে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। পরে আদালত পারভেজের জামিন না মঞ্জুর করে জেল হাজতে পাঠিয়েছে।

এ ব্যাপারে পিবিআইর প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার বলেন, পারভেজ এর আগে শিশু ধর্ষণের মামলায় ৯ মাস জেল খেটেছিল। কিশোর আদালতে তার বিচার হয়। এবার যে কায়দায় চারজনকে হত্যা করেছে তা শিউরে উঠার মতো।প্রথমে স্মৃতিকে হত্যা করে। সন্তানরা এ দৃশ্য দেখে ফেলায় ধরা পড়ার ভয়ে সবাইকে একে একে খুন করে সে। খুনের পর ২টি মোবাইল সেট, ৩টি স্বর্ণের চেইন, কানের দোল ও একটি ডায়েরি নিয়ে যায় কিলার পারভেজ। হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিতে গিয়ে পারভেজের বরাত দিয়ে পিবিআই দাবি করে, পারভেজের হামলার পর জ্ঞান হারিয়ে মেঝেতে লুটিয়ে পড়া স্মৃতির দেহ থেকে রক্ত ঝরতে থাকে। ঘোঙানির শব্দ পেয়ে পাশের রুম থেকে দৌড়ে নূরা মায়ের রুমে আসে। এ সময় নূরাকেও কুপিয়ে ফেলে রাখে সে। ঘুম ভেঙে খাটে উঠে বসেছিল ছোট্ট ফাদিল। তাকে জবাই করে খাটের নিচে রেখে দেয় খুনি পারভেজ। ঘুম থেকে উঠে এ দৃশ্য দেখে ফেলে হাওয়ারিন হাওয়া। তাকেও কুপিয়ে রক্তাক্ত করে ঘরের মেঝেতে ফেলে রাখে পারভেজ। পিবিআই গাজীপুর ইউনিট ইনচার্জ নাসির আহমেদ শিকদার জানান, মালয়েশিয়া প্রবাসী রেজোয়ান হোসেন কাজলের দোতলা বাড়িতে গত ২৩ এপ্রিল রাত সাড়ে ১২টায় এ ঘটনা ঘটায় পারভেজ। আস্তে আস্তে নিস্তেজ হতে থাকেন কাজলের স্ত্রী স্মৃতি ফাতেমা। এ বীভৎস পরিবেশে প্রথমে নূরাকে ধর্ষণ করে সে। তারপর ওড়না দিয়ে হাত-পা বেঁধে অর্ধমৃত নূরার মা স্মৃতিকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। অপরাধী একই কাজ করে হাওয়ারিনের সঙ্গেও। তারপর তাদের সবার মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য প্রত্যেকের গলা কাটা হয়। এদিকে সিরিয়াল কিলার পারভেজের ফাসিঁর দাবি উঠেছে এলাকায়।তার বাবা,মা ও ভগ্নিপতিকেও জিজ্ঞাসাবাদের দাবি করছে এলাকাবাসি।