শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রামে ৪ লাখ মানুষকে আনা হচ্ছে আশ্রয়কেন্দ্রে

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘আম্পান’ আঘাত হানলে সম্ভাব্য ক্ষয়-ক্ষতি এড়াতে চট্টগ্রামের উপকূলীয় এলাকার ৪ লাখ মানুষকে পাশের আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নিতে মাঠে কাজ করছেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা।

মঙ্গলবার (১৯ মে) সকাল থেকে নগরের পতেঙ্গা, কাট্টলী এবং জেলার সন্দ্বীপ, বাঁশখালী, আনোয়ারা, সীতাকুণ্ড, মিরসরাইসহ বিভিন্ন উপকূলীয় এলাকায় গিয়ে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা লোকজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নিচ্ছেন।

নগরের কাট্টলী সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. তৌহিদুল ইসলাম এ প্রতিবেদককে জানান, রাত ১০টা পর্যন্ত পতেঙ্গা ও কাট্টলীর উপকূলীয় এলাকায় বাস করা জেলে পাড়ার প্রায় ৩৮০ পরিবারকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তাদের আশ্রয়কেন্দ্রে সামাজিক দূরত্ব মেনে রাখা হয়েছে।

তিনি বলেন, উপকূলীয় এলাকা ছাড়াও ভারি বর্ষণে পাহাড় ধসের শঙ্কায় নগরের ১৮টি পাহাড়ের পাদদেশে বাস করা প্রায় ৯০০ পরিবারকে আমরা সরিয়ে দিয়েছি। তারা আশ্রয়কেন্দ্র এবং শহরে থাকা তাদের আত্মীয়-স্বজনের বাসায় আশ্রয় নিয়েছেন।   

রাত ১০টা পর্যন্ত চট্টগ্রামের উপকূলীয় এলাকার প্রায় ৫০ হাজার মানুষকে বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. কামাল হোসেন।

তিনি বলেন, ঝড়-বৃষ্টি না হলে লোকজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া খুব কঠিন। তারপরেও আমরা তাদের বুঝিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠাচ্ছি। বুধবার সকালের মধ্যেই চট্টগ্রামের উপকূলীয় এলাকার ৪ লাখ লোককে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হবে।   

সোমবার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের ৪৭৯টি আশ্রয়কেন্দ্র ছাড়াও ২ হাজার ২৬৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ১ হাজার ২৫০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ভবনকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে তৈরি করে এসব প্রতিষ্ঠানের চাবি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে রাখতে নির্দেশ দেন জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেন।

এর মধ্যে মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত ১ হাজার ৭৭০টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে বলে এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা সজীব কুমার চক্রবর্তী।

তিনি জানান, ঘূর্ণিঝড় আম্পানের কারণে সম্ভাব্য দুর্যোগে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ৩০০ মেট্রিক টন চাল, ৫০ লাখ নগদ টাকা, ২ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, শিশু খাদ্যের জন্য ৩ লাখ এবং গো খাদ্যের জন্য ১ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

রাত সাড়ে ৯টায় দেওয়া আবহাওয়া অধিদফতরের ২৮ নম্বর বিশেষ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় আম্পান চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৬১৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৬১০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থান করছে।

ওই সময় ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৮৫ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২০০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ২২০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

ঘূর্ণিঝড় আম্পান আরও উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে বুধবার বিকেল থেকে সন্ধ্যার মধ্যে ‘অতি প্রবল’ ঘূর্ণিঝড় আকারে খুলনা ও চট্টগ্রামের মধ্যবর্তী অঞ্চল দিয়ে বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করতে পারে।

ঘুর্ণিঝড়ের প্রভাবে চট্টগ্রামে মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি শুরু হয়েছে।