শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

টাঙ্গাইলে আ’লীগ নেতা জাহাঙ্গীরের মৃত্যুতে করোনা বিতর্ক!

টাঙ্গাইল জেলা পরিষদের সদস্য এবং গোপালপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট জাহাঙ্গীর হোসেন খান করোনায় মারা গেছেন; অথবা তিনি করোনায় মারা যাননি। করোনা না অকরোনায় তিনি মারা গেছেন তা নিয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে।সোমবার (৬ এপ্রিল) ভোর রাতে তিনি নিজ বাড়িতে মারা যান। স্বাস্থ্য বিভাগ জানায়, তার সর্দিজ্বরসহ কাশি ছিল। করোনার লক্ষণ থাকায় শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। টেস্ট রিপোর্ট পাওয়ার পর জানা যাবে তিনি প্রকৃতই করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন কিনা।

এডভোকেট জাহাঙ্গীর টাঙ্গাইলের আদালতে আইন পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। গত বছর এক উপনির্বাচনে তিনি গোপালপুর থেকে টাঙ্গাইল জেলা পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। করোনায় অফিস আদালত বন্ধ হওয়ায় গত ১৭ মার্চ তিনি নিজ গ্রাম টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার নগদাশিমলা ইউনিয়নের বাদে মাকুল্লায় আসেন।

উপজেলা প্রশাসন জানিয়েছে, স্বাস্থ্য বিভাগ যেহেতু করোনা ভাইরাসে আক্রান্তর সন্দেহ করছে সেহেতু সরকারি নিয়ম মেনে অথার্ৎ ইসলামী ফাউন্ডেশনের তত্ত্বাবধানে তাকে দাফন করা হয়।সোমবার বিকাল ছয়টায় গোপালপুর বাদে মাকুল্লা তার গ্রামের বাড়িতে দাফন করার সময় স্থানীয় এমপি ছোট মনি সহ উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। তবে তারা সরাসরি জানাজা নামাজের লাইনে না গিয়ে নিরাপদ দূরত্বে দাড়িয়ে শুধু দোয়া করেছেন।উপজেলা আওয়ামী লীগের দুজন নেতা জানিয়েছেন, এডভোকেট জাহাঙ্গীর করোনায় মারা যাননি। তিনি স্ট্রোক করে মারা গেছেন। তিনি আগে থেকেই হার্টের রোগী ছিলেন। জাহাঙ্গীর সাহেবের পরিবারের উদ্ধৃতি দিয়ে ওই দুই নেতা আরো জানান, উপজেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটি ভুল সিগন্যালে রং করেছেন। একজন নেতা চ্যালেঞ্জ দিয়ে জানান, আগামীকাল দেখবেন নেগেটিভ রিপোর্ট আসবে। মাঝখানে জাহাঙ্গীর সাহেবকে দলীয় নেতাকর্মী এবং আপনজনরা চিরবিদায়ে যথাযথ সম্মান জানাতে পারলোনা।

সরকারি দলের একটি অংশ দুপুরে জানিয়েছিলেন এডভোকেট জাহাঙ্গীর ষড়যন্ত্রের শিকার। করোনার অপপ্রচারে তাকে জনগন থেকে বিচ্ছিন্ন করার চেস্টা চালানো হয়েছে। সম্ভবত এমন অপপ্রচার নিরসনের জন্যই স্থানীয় এমপি ছোটমনির এডভোকেট জাহাঙ্গীরের বাড়িতে হাজির হন। নইলে কোনো করোনা সন্দেহে মারা যাওয়া একজন মানুষের বাড়িতে সংসদ সদস্যের এভাবে হাজির হওয়া ছিল রীতিমতো বাড়তি ঝুঁকিপূর্ণ।

উপজেলা প্রশাসন আরও জানায়, করোনার লক্ষণ বা উপসর্গ প্রতিভাত হওয়ায় করোনা সন্দেহে শুধু সরকারি নিয়মটুকু পালন করা হয়েছে। সুতরাং রাষ্ট্রের এ দুর্যোগকালে সরকারি নির্দেশ পালন করা তাদের দায়িত্ব ছিল।

এডভোকেট জাহাঙ্গীর করোনায় মারা গেছেন, অথবা করোনায় মারা যাননি- এমনসব বিতর্কের চেয়ে বড় কথা তিনি আর আমাদের মাঝে নেই। কিন্তু হাজারো প্রশ্ন আমরা সবাই এখন কতোটা নিরাপদ। আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা কতোটা আধুনিক।

ইতালী, আমেরিকাসহ প্রথম বিশ্বের দেশগুলোতে অত্যাধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা থাকা সত্বেও যেখানে শবমিছিল ফেরাতে পারছে না, সেখানে আমাদের দেশে করোনার মড়ক ছড়িয়ে পড়লে আমাদের দশা কেমন হবে?

উপজেলা প্রশাসন গলদগর্ম চেষ্টা করেও যেখানে পাবলিককের নিরাপদ সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে পারছেনা, সেখানে হতাশা প্রকাশ ছাড়া উপায় নেই। আমরা সবাই ঘরে থাকি। নিরাপদে থাকি। প্রশাসনকে সহযোগিতা করি। দেশের এ জরুরী সময়ে অনাহুত বিতর্ক বর্জন করি।