শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

টাঙ্গাইলে সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের জঙ্গিবাদ বিরোধী সমাবেশ।

নিজস্ব সংবাদদাতা:বাংলাদেশ রুখে দাঁড়াও জঙ্গিবাদ” শ্লোগানে সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন, টাঙ্গাইল জেলা শাখার আয়োজনে ২৫ নভেম্বর, শুক্রবার সকাল ১০:০০টায় টাঙ্গাইল প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে এক মানববন্ধন ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।মহান মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক চেতনায় জঙ্গিবাদ মুক্ত একটি প্রগতিশীল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে আয়োজিত উক্ত মানববন্ধনে ধর্মীয় উগ্রবাদের বিরুদ্ধে সকলকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান হয়।সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন, টাঙ্গাইল জেলা শাখার সভাপতি হাজী মুহাঃ সাজ্জাদুর রহমান খোশনবীশ এর সভাপতিত্বে আয়োজিত সমাবেশ ও মানববন্ধনে বক্তব্য প্রদান করেন প্রগতিশীল নারী নেত্রী মাহমুদা শেলী, নাজমুজ সালেহীন, নিসচা টাঙ্গাইল জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল ঝান্ডা চাকলাদার, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন, টাঙ্গাইল জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ নাজমুল হোসেন, সদর উপজেলা শাখার সভাপতি লায়ন জাহাঙ্গীর আলম। এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন, টাঙ্গাইল জেলা শাখার সবেক সভাপতি আব্দুর রউফ রিপন, সহ-সভাপতি সাইদুল ইসলাম মিন্টু, সাংগঠনিক সম্পাদক এনাদি হোসেন খান, সম্মানিত সদস্য হেমায়েত হোসেন হিমু, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদ’-এর কেন্দ্রীয় সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মিজান, টাঙ্গাইল জেলা শাখার সহ-সভাপতি রিচার্ড খান, সোহেল সরোয়ার্দী, যুগ্মসাধারণ সম্পাদক খন্দকার সজীব রহমান, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ফেরদৌস আরা ডায়না, সদস্য হাফিজ হাসনাত আপেল, শহর শাখার যুগ্মআহ্বায়ক ইমদাদুল হক, কাজী নুসরাত ইয়াসমিন, বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি, টাঙ্গাইল জেলা শাখার স্কাউটিং বিষয়ক সম্পাদক মোঃ শহিদ হোসেন, সম্মানিত সদস্য শ্যামল চক্রবর্তী, টাঙ্গাইল সদর উপজেলা শাখার নির্বাহী সভাপতি আব্দুল জলিল, বিন্দুবাসিনীয়ান ৯৩ সদস্য সোলায়মান সুমনসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সমাবেশের ঘোষণা:ধর্মীয় জঙ্গিবাদ এখন বৈশ্বিক পরিসরে একটি বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। দুদশক আগেও শুধু আল কায়েদা এবং তালেবান নামে দুটি জঙ্গি সংগঠনের বিশ্বব্যাপী পরিচিত ছিল। এখন এই দুই সংগঠনসহ নাইজেরিয়াতে বোকো হারাম, সোমালিয়াতে আল-শাহব, সিরিয়াতে আইএস, বিন লাদেন-ফ্রন্টলাইন ও আল নুসরা এবং লিবিয়াতে আনসার আল-শরিয়ার মতো বহু জঙ্গি সংগঠন রয়েছে। এখন সারা বিশ্বে ছোট বড় সর্বমোট জঙ্গি সংগঠনের সংখ্যা পাঁচ হাজারের বেশি। দক্ষিণ এশিয়ায় সমাজের বিভিন্ন স্তরে উগ্র মৌলবাদ এখন একটি রাজনৈতিক বাস্তবতা। এই মৌলবাদ চরমবাদে এবং চরমবাদ জঙ্গিবাদে রূপ নিচ্ছে। ইতোপূর্বে আইএসআই এই উপমহাদেশে জঙ্গিবাদী রাষ্ট্র গঠনের হুমকি প্রদর্শন করে জনমনে আতঙ্ক ছড়িয়েছে।

বিগত ২০০৮ সালে পাকিস্তানের মদতপুষ্ট জঙ্গিরা বোম্বের তাজ হেটেল হামলা চালিয়ে ৩ শতাধিক মানুষকে হত্যার মধ্যদিয়ে বিভিষিকাময় তাণ্ডব চালিয়েছে।সাম্প্রতিক বাংলাদেশে আমরা জঙ্গিবাদের উত্থান দেখছি। ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট সারাদেশে এক সঙ্গে সিরিজ বোমা হামলা চালায় জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদী নবাংলাদেশ (জেএমবি)। ঐদিন সকাল ১১টা থেকে ১১:৩০ এর মধ্যে ৬৩ জেলায় ৪০০ স্পটে বোমা বিস্ফোরণ ঘটায় জঙ্গিরা। এরই ধারাবাহিকতায় ২১ শে আগষ্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে, উদীচীর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে, গীর্জায় কাদিয়ানীদের উপসনালয়, আদালত, রমনার বটমূল নববর্ষ বরণ অনুষ্ঠানে, শোলাকিয়া ঈদের জামাত, মাজারসহ আরো অনেক বোমা হামলার ঘটনা ঘটায় জঙ্গিরা। জঙ্গিরা হত্যা করেছে প্রগতিশীল রাজনীতিবিদ, সেকুলার ব্লগার, লেখক, প্রকাশক এবং এমনকি ভিন্ন মাজহাবের ধর্মীয় অনুসারিদেরকেও।বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের সূচনা হয় গত শতকের আশির দশকে। প্রায় তিন হাজার বাংলাদেশি আফগানিস্তানের যুদ্ধে যায় এবং সেখানে প্রশিক্ষিত হয়। তাদের থেকে অন্তত আড়াই হাজার দেশে ফিরে আসে এবং এদের একটি অংশ নিয়ে গঠন করা হয় জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ। আরও নানা ব্যানারে নব্বই দশক থেকে শুরু করে গত দশক জুড়ে তারা নানা নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে দেশ জুড়ে। এদের সবাই মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেছে। গত কয়েক বছরে এই চেহারা পাল্টে গেছে। আইএসের হয়ে যুদ্ধ করতে যেসব বাংলাদেশি বিভিন্ন রুটে সিরিয়া গিয়েছে তাদের প্রায় সবাই আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত।১৯৭১ সালে ৩০ লক্ষ মানুষের জীবনের বিনিময়ে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যূদয় হয়েছিল সব মানুষের রাষ্ট্র গড়ার লক্ষ্যে। বাঙ্গালি জাতীয়তাবাদ, ধর্ম নিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্র ও গণতন্ত্র এই চারমূলনীতি সামনে রেখে ১৯৭২ সালে গণপ্রজাতন্ত্রি বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ন করা হয়। পাকিস্তান রাষ্ট্রের নিপীড়ন, বৈষম্য, শোষণ, গণতন্ত্রহীন তার বিরুদ্ধে লড়াই ও মুক্তিযুদ্ধের মধ্যে দিয়ে জন্ম নেয়া বাংলাদেশ স্বাধীনতার কয়েক বছর পরই পাকিস্তানী ভাব ধারায় হাটতে শুরু করে এবং এই হাটা এখনও অব্যাহত রয়েছে। বাঙ্গালি জাতীয়তাবাদ হয়েছে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতার বদলে সংবিধানে বিসমিল্লাহ সংযোজন; পরে ইসলাম ধর্মকে রাষ্ট্র ধর্ম করা, সমাজতন্ত্র কার্যত বাদ দেয়া এবং গণতন্ত্র শুধুমাত্র সংবিধানেই আছে, বাস্তবে এর অনুশীলন কিংবা প্রয়োগ নেই বললেই চলে।স্বাধীনতার ৫০ বছরে বাংলাদেশের জনগণকে লড়তে হচ্ছে একটি অসাম্প্রদায়িক, সার্বজনীন ও বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থার জন্য। ৩ ধরনের শিক্ষাব্যবস্থা জাতিকে ক্রমশ বিভক্ত ও পশ্চাৎপদ করছে। দেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী কমছে, অপরদিকে এবতাদিয়া মাদ্রাসায় শিক্ষার্থী বাড়ছে। হেফাজতের পরামর্শে পাঠ্য পুস্তকে পরিবর্তন এনে মাদ্রাসা ও সাধারণ শিক্ষাকে প্রায় একই জায়গায় নিয়ে আসা হয়েছে। মাদ্রাসা শিক্ষার স্বকীয়তা বজায় রাখতে স্বতন্ত্র শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নের দাবিসহ ১৩ দফা দাবি আদায়ে ১৪ নভেম্বর, ২০২২ দেশব্যাপি মানববন্ধন করেছে বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন নামে মাদ্রাসা শিক্ষদের একটি সংগঠন। এই মানববন্ধনে ডার উইনের বিবর্তনবাদ, স্বাস্থ্য শিক্ষা বাতিল, নারী কোটা শিথিলকরণে দাবি উপস্থাপন করা হয়। একই দিন হেফাজতে ইসলাম শিক্ষা ব্যবস্থায় ধর্মবিষয়ক পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করার দাবি জানিয়েছে। মূলত এই শিক্ষা একটি পশ্চাৎপদ ও প্রতিক্রিয়াশীল জাতি তৈরি করার একটি প্রক্রিয়া।জঙ্গীবাদ মোকাবেলা বাংলাদেশের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশের রাষ্ট্র ও সমাজের সর্বত্র প্রতিক্রিয়াশীল চিন্তা ও শক্তির প্রেসার ঘটেছে। সবাইকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ ভাবে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে।২৫ নভেম্বর ২০২২খ্রিঃ।