বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ত্রাণ বিতরণে অনিয়ম দেশে সঙ্কট বাড়াবে

পুরো বিশ্ব আজ প্রায় স্থবির। এ থেকে বাদ নেই বাংলাদেশও। সংক্রামক ব্যাধি করোনাভাইরাসের জন্য বিশ্বজুড়েই চলছে লকডাউন। বাংলাদেশেও বন্ধ রয়েছে অফিস-আদালত। জরুরি উৎপাদনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছাড়া অধিকাংশ শিল্প কারখানা বন্ধ। করোনার মহামারী রোখার পাশাপাশি বিশ্বের জন্য আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ অর্থনীতি। এ চ্যালেঞ্জ বাংলাদেশের জন্যও। আমাদের অর্থনীতি এখনও স্বনির্ভর নয়। আমরা সবেমাত্র নিম্ন আয়ের দেশের তালিকার বাইরে এসেছি। আমাদের জনসংখ্যার অধিকাংশই এখনও খেটে খাওয়া মানুষ। তারা দিন আনে দিন খায়। করোনাভাইরাসের কারণে মানুষ ঘরবন্দি। তাদের হাতে কাজ নেই। খেটে খাওয়া এ নিন্ম আয়ের মানুষের জীবিকা নির্বাহ যেন বর্তমান সময়ে কঠিন না হয়ে পড়ে সেজন্য সরকার বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় করোনাভাইরাসের মধ্যে অবরুদ্ধ হয়ে থাকা প্রায় উপার্জনহীন দুস্থ মানুষদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে দেশব্যাপী চালু হয় ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রির বিশেষ ওএমএস কার্যক্রম। কিন্তু ওএমএসের এ চাল নিয়ে ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে অনিয়ম এবং দুর্নীতির খবর সংবাদমাধ্যমে আসছে। একইভাবে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম নিয়েও বিশৃঙ্খলার খবর সংবাদমাধ্যমে আসছে।

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা এবং সরকারের কঠোর অবস্থান সত্ত্বেও প্রান্তিক পর্যায়ে কোথাও কোথাও ত্রাণ এবং ওএমএসের চাল নিয়ে দুর্নীতি ও অনিয়মের যেসব খবর সংবাদমাধ্যমে এসেছে, তা মোটেই স্বস্তিকর নয়। সুখকরও নয়। মানুষের বিপদের দিনে যাদের ওপর ভরসা করা হবে, তারাই যদি অনিয়মের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে তাহলে সাধারণ মানুষ কোথায় স্বস্তি পাবে? একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর হুঁশিয়ারিকেও যারা তোয়াক্কা না করে অনিয়মের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি আজ জরুরি। কর্মহীন মানুষ এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে খাদ্য সহায়তার ক্ষেত্রে তৃণমূল পর্যায়ে ঘটে যাওয়া অনিয়ম বা বিশৃঙ্খলার ঘটনার বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে কঠোর অবস্থান নিয়েছে সরকার। কয়েকজন ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্য বরখাস্ত হয়েছে। ১০ টাকা কেজির চাল বিতরণে দুর্নীতির দায়ে জেলেও পাঠানো হয়েছে কয়েকজনকে। তবে একই সঙ্গে একটি হতাশার খবরও এসছে, পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে আপাতত ওএমএসের মাধ্যমে চাল বিক্রির কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। দুর্যোগ, সে যেমনই হোক, তার সঙ্গে আমাদের পরিচয় রয়েছে। অতীতে সরকারের সঙ্গে মিলেমিশে বাংলাদেশের মানুষ দৃঢ়তার সঙ্গে সব ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ-বিপর্যয় সামাল দিয়েছে। আমি প্রত্যাশা করি, এবারও প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ় নেতৃত্বে আমরা সঙ্কট মোকাবেলা করব। কিন্তু তার আগে আমাদের সতর্ক হতে হবে আমাদের মধ্যে লুকিয়ে থাকা সুযোগ সন্ধানীদের বিরুদ্ধে। যারা বিপদের দিনে অসহায় মানুষের জন্য দেওয়া ত্রাণসামগ্রী নয়ছয় করে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ত্রাণ এবং ওএমএসের কার্যক্রমকে অবশ্যই সব ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতি থেকে মুক্ত করতে হবে। অন্যথায় সরকারের সব শুভ উদ্যোগই ভেস্তে যাবে। ক্ষতিগ্রস্ত একজন মানুষও যদি বঞ্চিত হয়, তার জন্য বরাদ্দ সরকারি সহায়তা থেকে তাকে যদি অন্যায়ভাবে বঞ্চিত করা হয়, ত্রাণ বরাদ্দ ও বিতরণে যদি অনিয়ম করা হয়, তা বর্তমানের সঙ্কটকে আরও বেশি ভয়াবহ করে তুলবে। তাই আমাদের সতর্ক হতে হবে, যাতে দুর্যোগকবলিত মানুষ স্বস্তি পায়, ঘুরে দাঁড়াতে পারে। সেজন্য ত্রাণ কার্যক্রমে ত্বরিত ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি সততা, স্বচ্ছতা ও আন্তরিকতার বিষয়টিও নিশ্চিত করা জরুরি।