বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

দেশজুড়ে ব্যবসা-সংকটের পূর্বাভাস

নিজস্ব সংবাদদাতা : উৎপাদন যন্ত্রের উপর পূর্নাঙ্গ কতৃত্ব প্রতিষ্ঠাকারী কিংবা নিজ স্বত্বাধিকারী কিংবা পুঁজিবাদ যে শুধু সমাজের শ্রমিকদের মজুরি কমায় না বরং দারিদ্র থেকে অতি দারিদ্র হিসেবে গড়ে তোলে । বর্তমানে দেশে দারিদ্রতার হার ২০.৫ শতাংশ । এতো শতাংশ দারিদ্রতা নিয়ে দেশের কার্যক্রম প্রায়ই ব্যাহত হয়ে থাকে । এর ওপরে আবার রোহিঙ্গা সংকট । তথাপি দেশে মাথা পিছু আয় বৃদ্ধি পায় কিন্তু গুটিকয়েক এর জন্য অথচ বৃহত্তর অংশ দারিদ্রই থেকে রয় । তবে এই অতিরিক্ত দারিদ্রতার জন্য দায়ী বর্তমান সময়ের পুঁজিবাদরা । কেননা পুঁজিবাদীদের পণ্য ক্রয় করে কারা ? পুঁজিবাদদের পণ্য তারাই ক্রয় থাকে যারা নিম্ন শ্রেণীর , নিম্ন মধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত এরাই । কিন্তু এক পর্যায়ে উৎপাদন এতো পরিমাণে বৃদ্ধি পায় যে, সর্বোচ্চ মুনাফা এসকল পুঁজিবাদ নামক মুনাফাখোররা অর্জন করে থাকে এবং মুনাফা অর্জনের ক্ষেত্রে পণ্যগুলোর মূল্য বৃদ্ধি করেছে এবং অপরপক্ষে শ্রমিকদের আয় স্থিতিশীল রয়েছে বা কমিয়ে দিয়েছে । এমতাবস্থায় স্থিতিশীল কিংবা নিম্ন আয় দিয়ে উচ্চ মূল্যের পণ্য ক্রয় করা এসব শ্রমিকদের জন্য দূরহ হয়ে পড়ে । 
অথচ এরাই এর কারিগর ছিল । এসব নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণী পণ্য ক্রয় করার সক্ষমতা হারিয়ে ফেলার পরবর্তীতে দেখা যায় উৎপাদন পণ্য গোদামঘরে কিংবা স্বত্তাধিকারীর নিকট সঞ্চয় হয়ে থাকে । এক পর্যায়ে সঞ্চয় হতে হতে পণ্যে বাজারে অতিরিক্ত হয়ে বাজারে মৎস্যন্যায় অবস্থার সৃষ্টি করে এবং অপরপক্ষে শ্রমিকরা কর্মহীন হয়ে পড়ে । যেমন অতিরিক্ত পণ্যগুলো যখন বাজারে অতিরিক্ত সঞ্চয় হয় তখন অনেক মুনাফাখোরদের পর্যন্ত ব্যবসায় হিমশিম খেতে হয় এবং করুন পর্যায়ে কারখানা বা ফ্যাক্টরিসমূহ বিক্রয় করে দেওয়া লাগে অথবা বন্ধ করে দিয়ে মালামাল বা পণ্যগুলো নষ্ট করে দিতে হয় । এই সময়য়ে শ্রমিকদের বিরত থাকা লাগে কর্ম থেকে এবং তখন থেকে তাদের যেন দুঃখ , দুর্দশা শুরু হয়ে যায় । কোথাও কর্ম মিলে না, আয়ের উৎস কম , আয় কম বা সীমিত কিন্তু নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যর ঊধ্বগতি বিরাজমান । মূলত এই পুঁজিবাদ অথবা ক্যাপিটালিজমের এই সময়টিকেই বলা হয় ‘ ব্যবসা-সংকট ‘! এখন প্রশ্ন হলো ব্যবসা সংকটের ফলে কি হয় এবং এর সমাধান কি ? 

ব্যবসা সংকট এর ফলে সমাজে ব্যাপক বৈরি অবস্থার জন্ম দেয় । খাওয়া দাওয়া কিংবা পোশাক পরিচ্ছদ থেকে শুরু করে চিকিৎসাদিসহ প্রায় নিত্যপ্রয়োজনীয় স্থান কিবা পণ্য কে কেন্দ্র করে সেগুলোর মাত্রারিক্ত মূল্য বৃদ্ধি ঘটে থাকে এবং ক্রেতা বা নিম্ন শ্রেণীর , মধ্যবিত্তের জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে । তিন তিন বার ব্যবসা সংকট হয়েছিল ইতিহাসের বিগত শতাব্দীতে, ১৯৩০ সালের শেষ ব্যবসা সংকটে শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রেই ১ কোটি ২০ লক্ষ শ্রমিক তাদের কর্ম হারিয়েছিল । কর্মহারা ওইসব শ্রমিকের সন্তানেরা গুদামের আশেপাশে ফেলে দেয়া বা উচ্ছিষ্ট পঁচা খাবারের আশায় ঘুরে বেড়াতো, উচ্ছিষ্ট খাবার ছুঁড়ে ফেলা মাত্রই তারা হামলা করতো সেগুলোর ওপরে । আর এসবের কারণ ব্যাবসায়ীরা লোকসানের ভয়ে বাজারের গুদামের পণ্যটাও বাজারে ছাড়তো না । শ্রমিকরা কি পরিমান কষ্ট করেছে শুধু তারাই জানে । এদিকে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য পঁচে , গুদামজাত হয়ে থাকে আর শ্রমিকেরা আহাজারি করে । সর্বহারার দল আরও সর্বহারা হয়ে পড়ে । যেমনটি এখন দেশে আভাস পাওয়া যাচ্ছে । সম্প্রতি আইএমএফ সূত্রে জানা যায়, ১৯৩০-এর মহামন্দার পর সবচেয়ে বড় সংকটে বিশ্ব অর্থনীতি এই কোভিডের দিনে । আইএমএফের আশঙ্কা ২০২০ সালে বৈশ্বিক গড় উৎপাদন ও সেবা প্রবৃদ্ধি তলিয়ে যাবে নিম্নমুখী অবস্থানে। জর্জিয়েভা জানান, আইএমএফের ১৮০টি স্থায়ী সদস্য দেশের মধ্যে ১৭০টি দেশই তাদের মাথাপিছু আয়ের সাংঘাতিক পতন লক্ষ্য করছে। ( দ্যা বিজনেস স্ট্যানডার্ড, ৮ সেপ্টেম্বর ) । 
মূলত এসকল কারণেই শ্রমিকশ্রেণী সবচেয়ে ঝুঁকিতে রয়েছে । আর এর ফলেই অনেক কলকারখানাগুলো বন্ধও করা হচ্ছে । বণিকরা তাদের পণ্য কমদামেও ছাড়তে চাচ্ছে না বাজারে । সবমিলিয়ে অস্বস্থিকর অবস্থা বিরাজ করছে অর্থনৈতিক বাজারে । ক্রেতাদের আয় রোজগার কম হচ্ছে তবুও পণ্যর মূল্য কমছে না এবং ক্রেতাগণ পণ্য ক্রয় করতে পারছে না । এক পর্যায়ে কলকারখানাগুলো বণিকরা বন্ধ করছে আর এসকল কারণেই ব্যবসা-সংকট খুব স্পস্ট ভাবে প্রত্যক্ষ করা যাচ্ছে । পক্ষান্তরে দুটো সর্বোচ্চ মুনাফা লাভ কারী পণ্য বিক্রেতা এবং এই সাদাসিধে মানুষের দৈনন্দিন জীবন ব্যাখ্যা করলেই পরিস্কার হওয়া সম্ভব । দেখা যায় ঈদে পোশাক বা বছর জুড়েই পোশাক শিল্পের মূল্য এতো পরিমাণে বৃদ্ধি পায় যে , অধিকাংশ মানুষ কিনতে সক্ষম হয় না । অথচ সাধ আছে , সাধ্য নেই । এছাড়া দেশের উন্নয়নের হাতিয়ার ঔষুধ শিল্পের বিবরণ দিতে গিয়ে বলতে হয় এ শিল্প ৯৮% ঔষুধ রপ্তানি করছে এবং প্রচুর পরিমাণে বৈদিশিক মুদ্রা অর্জন করছে । অথচ দেশের মানুষ পূর্নাঙ্গ ভাবে ঔষুধ কেনার সক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে , যেমনটি পোশাক শিল্পের ন্যায় । ঔষুধের কিন্তু বাজারে পূর্নাঙ্গ যোগান বিদ্যমান অথচ ক্রয় ক্ষমতা নেই ।