বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

দেশে করোনায় আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়েছে

নিজস্ব সংবাদদাতা : রাজধানীর মিরপুরের একটি বাসায় নিরাপত্তাকর্মীর কাজ করতেন মনসুর শেখ। করোনা সংকটের মধ্যে গত জুলাই তার চাকরি চলে যায়। অভাব-অনটনে হতাশাচ্ছন্ন হয়ে গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করেন ওই ব্যক্তি। ওই মাসে একই এলাকার চাকরিচ্যুত গার্মেন্ট কর্মী আনোয়ার হোসেন মান্নানও কীটনাশক পানে আত্মহত্যা করেন। কারণ, তিনিও হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন।

আত্মহত্যা প্রতিরোধ এবং এর গতিপ্রকৃতি নিয়ে কাজ করেন- এমন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বে নারীর চেয়ে পুরুষের আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি হলেও বাংলাদেশে সাধারণত নারীর আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি। কিন্তু কভিড-১৯-এর চলমান সংকটে দেখা যাচ্ছে, দেশে নারীর চেয়ে পুরুষের আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়েছে। করোনাকালীন এ পরিস্থিতিতে পুরুষদের আত্মহত্যার প্রবণতা নারীর তুলনায় এখন পর্যন্ত প্রায় ৯ গুণ বেশি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা সংকটে অর্থনৈতিক মন্দায় আয় কমে যাওয়া, কর্মস্থলে অস্থিরতা এবং কাজ হারিয়ে পরিবারের কর্তা হিসেবে পুরুষ ব্যক্তিরা অস্থিরতা ও হতাশায় ভুগছেন অনেক বেশি। এ থেকে নিস্কৃতি পেতে নানা অপরাধের সঙ্গে আত্মহত্যার প্রচেষ্টা বা আত্মহত্যাও করেছেন অনেকে। যদিও সংকট মোকাবিলার ক্ষেত্রে আত্মহত্যা কোনো সমাধানই নয়।

দেশে আত্মহত্যা প্রতিরোধ নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে কোনো কার্যক্রমও নেই। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহায়তায় আত্মহত্যা প্রতিরোধে ‘ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন ফর সুইসাইড প্রিভেনশন (আইএএসপি)’ নামের একটি সংস্থা দুনিয়াজুড়ে কাজ করছে। মানুষকে সচেতন করতে প্রতিবছরের ১০ সেপ্টেম্বর সংস্থাটি ‘বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছে। সারাবিশ্বের মতো বাংলাদেশেও আজ বৃহস্পতিবার পালিত হচ্ছে ১৮তম বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস। এবার এ দিবসের প্রতিপাদ্য ‘আত্মহত্যা প্রতিরোধে একসঙ্গে কাজ করি’।

আত্মহত্যাপ্রবণ ব্যক্তিদের গতিপ্রকৃতি ও আত্মহত্যা প্রতিরোধে গবেষণা করছেন ইস্টওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষক ড. আনিসুর রহমান খান। তিনি বলেন, করোনা সংকটের মধ্যে (মার্চ থেকে মে পর্যন্ত) দেশে আত্মহত্যা করেছেন- এমন বিভিন্ন ঘটনা নিয়ে তারা গবেষণা করে দেখেছেন, সম্প্রতি দেশে পুরুষের আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়েছে। চলমান এই সংকটে পুরুষদের আত্মহত্যার প্রবণতা নারীর তুলনায় এখন পর্যন্ত প্রায় ৯ গুণ বেশি। যদিও বাংলাদেশে সব সময়ই নারীদের আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি ছিল।

তিনি আরও বলেন, বিষয়টি নিয়ে বড় আকারে গবেষণা ছাড়া বা করোনা সংকট পার হওয়ার পরের ঘটনাগুলো বিশ্নেষণ ছাড়া পুরো ফল আসবে না। দেশে প্রতি মাসে বা বছরে কতজন আত্মহত্যা করেন বা করার চেষ্টা করেন, জাতীয় পর্যায়ে সে পরিসংখ্যান নেই। তবে আত্মহত্যাপ্রবণ জেলা হিসেবে চিহ্নিত ঝিনাইদহ জেলায় এ ধরনের পরিসংখ্যান সংরক্ষণ করে থাকে আত্মহত্যা প্রতিরোধ কার্যক্রমে সক্রিয় বেসরকারি সংস্থা ‘সোসাইটি ফর ভলান্টারি একটিভিটিস (শোভা)’। সংস্থাটির চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসের পরিসংখ্যানেও দেখা যাচ্ছে, নারীর তুলনায় পুরুষের আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়েছে। এ জেলার সদর উপজেলায় চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ১০ পুরুষ ও আট নারী, হরিণাকুণ্ডু উপজেলায় ৯ পুরুষ ও পাঁচ নারী, মহেষপুর উপজেলায় আট পুরুষ ও ছয় নারী এবং কোটচাঁদপুর উপজেলায় দুই পুরুষ আত্মহত্যা করলেও এই ছয় মাসে কোনো নারী আত্মহত্যা করেননি। অথচ সংস্থাটির আগের বছরের পরিসংখ্যানেও দেখা গেছে, পুরুষের তুলনায় নারীর আত্মহত্যার হার বেশি ছিল। অবশ্য এই বছরের প্রথম ছয় মাসে পুরুষের আত্মহত্যাপ্রবণতা বেড়ে যাওয়ার কারণ নিয়ে এখনও গবেষণা করেননি তারা।

ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন ফর সুইসাইড প্রিভেনশন (আইএএসপি) বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের প্রতিনিধি জাহিদুল ইসলাম বলেন, বিভিন্ন মহামারি ও সংকটে মানুষ আত্মহত্যার দিকে ধাবিত হয়। কিন্তু এটি কোনো সমাধান নয়। তাই আত্মহত্যার পথ বেছে না নিয়ে সংকট মোকাবিলায় কাজ করতে হবে। তবেই সমাধান মিলবে।