বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

দেশে দ্রুত সংক্রমণের হার অস্বাভাবিক হারে বাড়তে পারে

নিজস্ব সংবাদদাতা : দেশে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ের শুরুতেই বাড়ছে রিপ্রডাকশন নম্বর বা সংক্রমণের হার। ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব প্রিভেন্টিভ অ্যান্ড সোশ্যাল মেডিসিন (নিপসম) এ তথ্য জানিয়েছে। আগস্টের তুলনায় রোগটির সংক্রমণের হার সেপ্টেম্বরে শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ বেড়েছে। আর অক্টোবরে বেড়ে একের উপরে উঠে এসেছে। বর্তমানে এ হার ১ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ। সংক্রমণের হার এভাবে বাড়তে থাকলে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও ক্রমশ বাড়বে- এমন মন্তব্য বিশেষজ্ঞদের।

তারা বলেন, দেশে আগস্টে যখন সংক্রমণের হার নামতে শুরু করে তখন থেকেই মানুষের মধ্যে এক ধরনের উদাসীনতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিশেষ করে করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে যে ধরনের পদক্ষেপ নেয়া দরকার তা নিচ্ছেন না। বাসার বাইরে মাস্ক ব্যবহারে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের যে পরামর্শ সেটিও তারা মানছেন না। এছাড়া গণপরিবহন, হাট-বাজার কোথাও সংক্রমণ প্রতিরোধে ন্যূনতম দূরত্ব মানা হচ্ছে না। এক্ষেত্রে সরকার বা আইন প্রয়োগকারী সংস্থগুলোও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না। এমনকি সন্দেহভাজনদের অবশ্যই কোয়ারেন্টিনে থাকার যে নিয়ম সেটিও মানা হচ্ছে না। এভাবে চলতে থাকলে অতি দ্রুত সংক্রমণের হার অস্বাভাবিক হারে বাড়তে পারে।

নিপসমের গবেষণায় দেখা গেছে, মার্চের ৮ তারিখে দেশে প্রথম করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ে। এরপর এপ্রিলে রিপ্রডাকশন নম্বর বা সংক্রমণের হার ছিল ৩ দশমিক ৪৩ শতাংশ। মে মাসে এ হার অনেকটা কমে ১ দশমিক ২৫ শতাংশে নেমে আসে। জুনে এটা সামান্য কমে ১ দশমিক ২৩ শতাংশে নামে। জুলাইয়ে সংক্রমণের হার ১-এর নিচে নেমে আসে। এ সময় হার ছিল শূন্য দশমিক ৯৪ শতাংশ। দেশে সংক্রমণ শুরু হওয়ার সবচেয়ে নিচের হারে ছিল আগস্টে শূন্য দশমিক ৮৮ শতাংশ। এরপর আবার এ হার বাড়তে শুরু করে। সেপ্টেম্বরে এটি বেড়ে শূন্য দশমিক ৯১ শতাংশে উঠে আসে এবং অক্টোবরে ১ দশমিক শূন্য ১ শতাংশে উন্নীত হয়।

এ প্রসঙ্গে নিপসমের পরিচালক অধ্যাপক ডা. বায়জীদ খুরশীদ রিয়াজ বলেন, রিপ্রডাকশন নম্বর বা সংক্রমণের হার যদি ১ থাকে তবে সংক্রমণের হার স্থিতিশীল বলা যায়। যদি ১-এর বেশি হয় তাহলে এটি মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ছে বলে মনে করা হয়। ১-এর নিচে নেমে এলে এটি নিয়ন্ত্রণে আসছে বলে মনে করা হয়। তিনি বলেন, শুধু আরনটের ওপর নির্ভর করে সামগ্রিক ভাবে একটি মহামারী মূল্যায়ন করা সম্ভব নয়। এটি রোগ কোন পথে যাচ্ছে তা চিত্রিত করে। সামগ্রিক মূল্যায়নের জন্য এক্ষেত্রে আরও কিছু বিষয় বিবেচনায় নিতে হবে। বর্তমানে কতজন আক্রান্ত হচ্ছেন, কতজনের মৃত্যু হচ্ছে, সবাই মাস্ক ব্যবহার করছেন কিনা, সামাজিক দূরত্ব মানা হচ্ছে কিনা, আইসোলেশন ও কোয়ারেন্টিন প্রতিপালিত হচ্ছে কিনা ইত্যাদিও ভাবতে হয়। তিনি বলেন, এখন দেশে দৈনিক কত মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন সেটি দেখে আনন্দিত হওয়ার কিছু নেই। কারণ রিপ্রডাকশন নম্বর দ্রত বাড়ছে। তাই করোনা সংক্রান্ত বিধিনিষেধ মেনে চলতে সবার প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, বারবার বলা সত্ত্বেও দেশের মানুষকে সচেতন করা যাচ্ছে না। তারা ঘর থেকে বেরিয়ে পড়েছেন। সবাই মিলে কক্সবাজার ভ্রমণে যাচ্ছেন, আনন্দ করছেন। কেউ মাস্ক পরছেন না, সামাজিক দূরত্ব মানছেন না। এক্ষেত্রে আমরা কঠোর হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। অচিরেই মানুষের মাঝে সচেতনতা ফিরিয়ে আনতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হবে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, রিপ্রডাকশন নম্বর হল, কোনো সংক্রামক রোগ মহামারী আকারে কতদিনে একজন থেকে আরেকজনে ছড়াবে, নতুন রোগী তৈরি করতে পারে এ বিষয়ে ইঙ্গিত দেয়। এটাকে আরনট দিয়ে প্রকাশ করা হয়। রিপ্রডাকশন নম্বর থেকে বোঝা যায় কোনো নির্দিষ্ট এলাকায় কোনো নির্দিষ্ট সময়ে করোনাভাইরাসে প্রতিদিন কতজন রোগী বাড়বে বা কমবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সাধারণত রিপ্রডাকশন নম্বরের মান ধরা হয় ১। যদি মান ১-এর অধিক হয় তাহলে বুঝতে হবে সংক্রমণের হার আগের দিনের চেয়ে পরের দিন চক্রবৃদ্ধি হারে বা দ্বিগুণ হারে বাড়তে পারে। আর যদি রিপ্রডাকশন নম্বরের মান ১-এর নিচে হয় তাহলে বোঝা যাবে এটি কত দ্রুত কমে আসবে। রিপ্রডাকশন নম্বরের মান যদি শূন্য দশমিক ৫-এর নিচে থাকে তাহলে বোঝা যাবে মহামারী আর বাড়বে না।

চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা এ পর্যন্ত যত সংক্রামক রোগের রিপ্রডাকশন নম্বরের ভ্যালু বের করেছেন তার মধ্যে মিজেল্র ভাইরাস বা হামের মান সবচেয়ে বেশি- ১৫ শতাংশ। এজন্য হামকে পৃথিবীর সবচেয়ে সংক্রামক ভাইরাস বা রোগ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক গড় রিপ্রডাকশন নম্বরের মান ২ দশমিক ৫।

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর ইউরোপ-আমেরিকার কিছু দেশে এর রোগতাত্ত্বিক মান বের করেছে। যেখানে গড়ে দেখা গেছে দেশগুলোতে এর মান ২-এর চেয়ে বেশি এবং ৩-এর চেয়ে কম। অর্থাৎ কোনো দেশে মান দুইয়ের সামান্য বেশি এবং কোনো দেশে তিনের সামান্য কম। ইতালি, আমেরিকা, স্পেন বা ফ্রান্সের দিকে তাকালে এর সত্যতা পাওয়া যায়। কারণ এসব দেশে রোগী আক্রান্তের সংখ্যা আগের দিনের তুলনায় কখনও চক্রবৃদ্ধি হারে কখনও দ্বিগুণ হারে বেড়েছে।