বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দেশে মোবাইলে কথা বলা কমেছে, বেড়েছে ইন্টারনেটের ব্যবহার

নিজস্ব সংবাদদাতা : করোনাকালে বিশেষ করে লকডাউন শুরুর পর থেকে মোবাইলে লোকজনের কথা বলার হার কমেছে। তবে বেড়েছে ইন্টারনেট ব্যবহারের পরিমাণ। মোবাইল অপারেটরগুলোর এ সময়ে  আয়ে দেখা গেছে, ভয়েসের (কথা) চেয়ে ইন্টারনেট ব্যবহারের প্রবৃদ্ধি আগের চেয়ে বেশি। তবে এ সময়ে মোবাইল অপারেটরের আরপু বা এআরপিইউ (অ্যাভারেজ রেভিনিউ পার ইউজার বা প্রতি প্রান্তিকে একজন ব্যবহারকারী থেকে অপারেটরগুলোর আয়) কমেছে। অন্যদিকে সব মোবাইল অপারেটরের ডাটার প্রবৃদ্ধিতে বেশ বড়সড় লাফ দিতে সহায়তা করেছে করোনাকাল।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার বলেন, ‘মোবাইল অপারেটরগুলোর ডাটার ব্যবহার বেড়েছে। মোবাইল ব্যবহারকারীরা অন্যান্য সময়ের তুলনায় বেশি ডাটা ব্যবহার করছেন। ’

টেলিটক বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা টেলিটকের মাধ্যমে কোনও ডাটা চার্জ ছাড়াই ক্লাস করতে পারছে। প্রতিমাসে যে ১০০ টাকা শিক্ষার্থীদের ব্যয় করতে হবে— তা দিয়ে তারা ভয়েস প্যাকেজ, ডাটা কিনতে পারবে। কারণ, শিক্ষার্থীদের অনলাইনে ক্লাস করতে হলে ইউজিসির একটা প্ল্যাটফর্মে প্রবেশ করতে হবে। সেটাতে প্রবেশ করতে হলেও তো ডাটা প্রয়োজন। তবে একবার প্রবেশ করলে শিক্ষার্থীরা ইন্টারনেট খরচ ছাড়াই ক্লাস করতে পারবে। তবে অন্যান্য সাইট ব্রাউজ করতে হলে তখন ডাটা চার্জ দিতে হবে।’

মন্ত্রী জানান, এতে করে টেলিটকের গ্রাহক বাড়বে, একইসঙ্গে বাড়বে ডাটার ব্যবহার। তিনি উল্লেখ করেন, একমাত্র টেলিটকই সবচেয়ে কমদামে ইন্টারনেট দিচ্ছে তার গ্রাহকদের। এরচেয়ে কমদামে আর কোনও অপারেটর ডাটা বিক্রি করতে পারবে না।

তিনি আরও  জানান, ২০১৮ সালে টেলিটকের অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। নেটওয়ার্ক এক্সপানশন ছিল না, বিনিয়োগ ছিল না। টেলিটকের গ্রাহক সেইভাবে বাড়েনি উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘সেসব সমস্যার কিছুটা দূর হয়েছে। ২ হাজার ২০০ কোটি টাকার একটা প্রস্তাব একনেকে দেওয়া আছে। সেটার অনুমোদন হলে টেলিটক অনেক দূর যাবে। শক্তিশালী নেটওয়ার্ক হয়ে শক্ত অবস্থান তৈরি করবে টেলিটক।’

প্রসঙ্গত, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, জুলাই মাস শেষে দেশে মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৯ কোটি ৮৭ লাখ ৪০ হাজার। জুন মাস শেষে যা ছিল ৯ কোটি ৪৯ লাখ ৫ হাজার। এই হিসাব থেকে দেখা যায়, দেশে এক মাসে মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারী বেড়েছে ২৯ লাখ ৩৫ হাজার। তবে দেশে মোট ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১০ কোটি ৬৪ লাখ ১০ হাজার। অবশিষ্ট ৮৫ লাখ ৭১ হাজার হলো ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবহারকারী।

ওই প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, গ্রামীণফোনের গ্রাহকদের করোনাকালে কথা বলার হার কমেছে। এ বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) একজন গ্রাহক কথা বলেছেন ২০১ মিনিট করে, যা প্রথম প্রান্তিকে ছিল ২১৫ মিনিট। আর দ্বিতীয় প্রান্তিকে একজন ব্যবহারকারীর কাছ থেকে গ্রামীণফোনের  আয় ছিল ১৪৬ টাকা, প্রথম প্রান্তিকে যা ছিল ১৫৬টাকা।

গ্রামীণফোনের গ্রাহকদের এ সময়ে ইন্টারনেট তথা ডাটা ব্যবহার বেড়েছে। এ বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে একজন গ্রাহক আড়াই জিবির (গিগাবাইট) বেশি ডাটা ব্যবহার করেছেন, যদিও তা প্রথম প্রান্তিকের তুলনায় ১৭ শতাংশ বেশি।

অপারেটরটির সূত্রে জানা যায়, দ্বিতীয় প্রান্তিকেই গ্রামীণফোনের আয়  কমে ৮ দশমিক ২ শতাংশ। এসময় আয় দাঁড়ায় ৩ হাজার ৩০৭ কোটি টাকায বলে অপারেটরটির ব্যবসায় বিবরণী থেকে জানা গেছে।

মোবাইল অপারেটর রবি সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকের (এপ্রিল থেকে জুন) হিসাবে, ভয়েস কল থেকে রবির আয় হয়েছে ৮৬৭ কোটি ৪০ লাখ টাকা, যা এ বছরের প্রথম প্রান্তিকের (জানুয়ারি থেকে মার্চ) চেয়ে ১৪.২ শতাংশ কম। এ বছরের প্রথম প্রান্তিকে ভয়েস থেকে রবির আয় ছিল এক হাজার ১১ কোটি টাকা, গত বছরের (২০১৯) দ্বিতীয় প্রান্তিকে এ আয় ছিল  এক হাজার ৬৫ কোটি টাকা। এটি টু-জিভিত্তিক ভয়েস কল সেবা নেওয়া কম আয়ের গ্রাহকদের অর্থনৈতিক কষ্টে থাকার প্রতিই ইঙ্গিত দেয়।

এ বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে ডাটা (ইন্টারনেট) থেকে রবির আয় হয়েছে ৬৪০ কোটি টাকা। গত প্রান্তিকের চেয়ে ইন্টারনেট ডাটা ব্যবহার ১৮ দশমিক ৯ শতাংশ বাড়লেও করোনা মহামারি পরিস্থিতিতে ডাটা থেকে আয়ও প্রথম প্রান্তিকের চেয়ে দ্বিতীয় প্রান্তিকে ১ দশমিক ৫ শতাংশ কমেছে। তবে গত বছরের একই প্রান্তিকের চেয়ে ডাটা থেকে  আয় বেড়েছে ২৩ দশমিক ৭ শতাংশ।

করোনা মহামারি পরিস্থিতিতে ডাটা ব্যবহার আকস্মিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় নেটওয়ার্কের ওপর যে চাপ তৈরি হয়েছিল, সেটা সামাল দিতে ছোট অপারেটররা জরুরি ভিত্তিতে স্বল্প সময়ের জন্য তরঙ্গ বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করেছিল। এটির অনুমোদন দেওয়া হলে নেটওয়ার্কের ওপর তৈরি হওয়া অস্বাভাবিক চাপ এড়ানো সম্ভব হতো।

এ বছরের প্রথম প্রান্তিকে রবির আরপু ছিল ১২৪ টাকা। দ্বিতীয় প্রান্তিকে তা নেমে দাঁড়িয়েছে ১১৫ টাকা।

এদিকে বাংলালিংক সূত্রে জানা গেছে, এ বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে অপারেটরটির ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ২ কোটি ১৮ লাখ, যা গত বছরের একই প্রান্তিকে ছিল ২ কোটি ১১ লাখ।

অপারেটরটি এ বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে ডাটা থেকে আয় করেছে  প্রায় ৩০০ কোটি টাকা, যা গত বছরের একই প্রান্তিকে ছিল ২৩০ কোটি টাকা। আরও জানা যায়, গত প্রান্তিকে বাংলালিংকের আয় ৩ দশমিক ৯ শতাংশ কম হলেও ডাটায় আয় বেড়েছে ৩০ দশমিক ৩ শতাংশ। গত প্রান্তিকে ডাটার ব্যবহার বেড়েছে ৭৯ দশমিক ২ শতাংশ। অপারেটরটির বর্তমান আরপু ১১০ টাকা।