মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

ফরিদপুর মডেলে শুদ্ধি অভিযান শুরু হচ্ছে সারাদেশে

নিজস্ব সংবাদদাতা : আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সবুজ সংকেত দিয়েছেন, ফরিদপুরের আদলে সারাদেশে শুদ্ধি অভিযান করার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত প্রায়। যেকোন সময়ে এই শুদ্ধি অভিযান শুরু হতে যাচ্ছে বলে সরকারের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সূত্র নিশ্চিত করেছে। তবে একসাথে সবগুলো জেলাতে হবে নাকি ধাপে ধাপে সবগুলো জেলায় এই অভিযান হবে সে ব্যাপারে কোন সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। ফরিদপুরে আওয়ামী লীগের পরিচয় ব্যবহার করে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করা হয়েছে, লুণ্ঠন করা হয়েছে এবং জনগণকে জিম্মি করে সেখানে এক ধরণের অপশাসন প্রতিষ্ঠা করেছিল আওয়ামী লীগের কয়েকজন দুর্বৃত্ত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ফরিদপুরে অভিযান পরিচালনা করেছে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা এবং এখন পর্যন্ত সেখানে দুই ডজনের বেশি দুর্বৃত্তকে গ্রেপ্তার করেছে যারা আওয়ামী লীগের পরিচয় ব্যবহার করতো এবং আওয়ামী লীগের প্রভাবশালীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা রেখে তাঁরা এলাকায় নিজেদের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করেছিল।

ফরিদপুরে অভিযান সারাদেশে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়। শেখ হাসিনার সাহস এবং তাঁর নীতি-নিষ্ঠতার এক নতুন উদাহরণ সৃষ্টি হয় এই ফরিদপুর মডেলের মাধ্যমে। আওয়ামী লীগের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে যে, আওয়ামী লীগ সভাপতি নিজেই বলেছেন যে, ফরিদপুরে যেভাবে দুর্বৃত্ত এবং দুর্নীতিবাজদের দমন করা হয়েছে ঠিক একইভাবে সারাদেশে যারা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের ছত্রছায়ায় দুর্নীতি, অনিয়ম এবং স্বেচ্ছাচারিতা করছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। একাধিক সূত্র বলছে যে, এই ব্যাপারে সারাদেশে যারা আওয়ামী লীগের পরিচয় ব্যবহার করে বিভিন্ন রকমের অপকর্মের সঙ্গে যুক্ত তাদের তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। ৮০০ থেকে ১ হাজার ব্যক্তির নাম এই তালিকায় রয়েছে বলেও আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

উল্লেখ্য যে, প্রধানমন্ত্রী দুই বছর আগে তাঁর ব্যক্তিগত উদ্যোগে আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারীদের একটি তালিকা তৈরি করেছিলেন। এই তালিকাটি প্রণয়নের ক্ষেত্রে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার সাহায্য নিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে এই খসড়া তালিকাটি আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনির নেতৃত্বে একটি কমিটিকে যাচাইবাছাই করতে দেন। তালিকাটি যাচাই বাছাইয়ের পর কিছু নাম বাদ যাওয়ার পর প্রায় সাড়ে ৭ হাজার অনুপ্রবেশকারীদের তালিকা চূড়ান্ত করা হয়। এই তালিকাটির মধ্যে কারা কারা অপরাধী এবং কারা কারা বিভিন্ন অপকর্মের সঙ্গে জড়িত তাদের ব্যাপারে নতুন করে অনুসন্ধান করা হয়েছে এবং সেখানে দেখা গেছে যে, প্রায় ৭০০ থেকে ১ হাজার ব্যক্তি যারা আওয়ামী লীগের নাম ব্যবহার করে বিভিন্ন অপকর্ম, দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, দুর্বৃত্তায়নের সঙ্গে জড়িত এবং এখন এদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে।

একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে যে, কয়েকটি জেলায় এই ধরনের অপরাধীরা আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের ছত্রছায়ায় অপকর্ম করছেন এবং তাদের বিরুদ্ধে আগে অভিযান পরিচালনা করা হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে যে, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, সিরাজগঞ্জ, দিনাজপুর, কুষ্টিয়া, বগুড়া, পাবনাসহ আরও কয়েকটি জেলায় এরকম তথ্য পাওয়া গেছে যেখানে স্থানীয় নেতা, এমপি, মেয়র বা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের প্রভাব বলয়ের মধ্যে দিয়ে দুর্বৃত্তরা বেড়ে উঠেছে এবং নানারকম অপকর্ম করছেন। এই সমস্ত এলাকাগুলোতে যেকোন সময়ে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সাঁড়াশি অভিযান শুরু হতে পারে বলে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে যে, আওয়ামী লীগকে পরিশুদ্ধ করার ক্ষেত্রে শেখ হাসিনা তিন ধরণের কৌশল গ্রহণ করেছেন।

প্রথমত, যারা অনুপ্রবেশকারী তাদের তালিকা করে তাদেরকে দল থেকে বের করে দেওয়া।

দ্বিতীয়ত, যারা প্রচলিত আইনে অপরাধ করছে, তিনি যে-ই হন না কেন আইনকে তাঁর নিজস্ব গতিতে প্রবাহিত করতে দেওয়া এবং যাতে এই সমস্ত দুর্বৃত্তরা দলীয় ছত্রছায়ায় আছে এই জন্যে পার পেয়ে না যায়।

তৃতীয়ত, ভবিষ্যতে যেন এই সমস্ত অনুপ্রবেশকারী দলে ঢুকতে না পারে সে ব্যাপারে নজরদারি বাড়ানো।

আর এই সমস্ত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একদিকে যেমন আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে কেউ অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটাতে পারবে না, অন্যদিকে তেমনি সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হবে এবং দুর্নীতির ক্ষেত্রে দেশ অনেকখানি এগিয়ে যাবে। যে দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণাই ছিল আওয়ামী লীগের গত নির্বাচনের অন্যতম প্রধান এজেন্ডা।