শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মুজিবর্ষেই সরকারী অফিস-আদালতে ‘ই-পেপার’ চালু হচ্ছে

নিজস্ব সংবাদদাতা : মুজিবর্ষেই সরকারী অফিস-আদালতে ‘ই-পেপার’ (পেপারলেস) চালু হচ্ছে। এমন উদ্যোগ নিয়েছে তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ (আইসিটি)। ভিশন-২০২১ সালের মধ্যে ১৯ হাজার অফিস পেপারলেস করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ।

পর্যায়ক্রমে দেশের সব অফিস-আদালত ই-পেপার অফিস চালু করা হবে। কাগজের বড় বড় ফাইল আর থাকবে না। দেশে ই-পেপার বা ই-গবর্নমেন্টস জিআরপি সফটওয়্যারের মাধ্যমে বাংলা ভাষায় তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ পরীক্ষামূলকভাবে ইতোমধ্যে পেপারলেস অফিস চালু করেছে। মুজিববর্ষে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে, শেষ হবে ২০২১ সালে।

সূত্র জানিয়েছে, ই-নথি কার্যক্রমে সফলতা দেখিয়ে আসছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগ রক্ষার্থে সবকিছুই ই-নথিতে হচ্ছে ইআরডিতে। বড় ক্যাটাগরির ৮টি বিভাগের মধ্যে চলতি বছরের ই-নথি কার্যক্রমের মধ্যে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে ইআরডি। এটিসহ বর্তমানে সাত হাজার অফিস ই-নথির মাধ্যমে কাজ করছে। ইআরডি’র হাতে ৩ হাজার ৮৬১টি ডাক আসে। এসব ডাক স্ক্যান করে অনলাইনে নিয়ে এসে নিষ্পত্তি করা হয়। ফলে ৩ হাজার ৭১৭টি ডাক ই-নথির মাধ্যমে নিষ্পত্তি করেছে ইআরডি।

এছাড়া এরমধ্যে স্ব-উদ্যোগে ই-নথি হয়েছে ৯৪২টি। ই-নথির মাধ্যমে ৯৩৮টি পত্র জারি করেছে ইআরডি। কাজের গতি বাড়াতে এবং আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূর করতে সব হার্ড কপিও স্ক্যান করে অনলাইনে নিয়ে আসে ইআরডি। ফলে ইআরডির কোন কর্মকর্তা অফিসে না থাকলেও কাজ থেমে থাকে না। যে কোন সিদ্ধান্ত দেশের বাইরে বসেও এ্যাপস ও ইমেল ব্যবহার করে নিষ্পত্তি করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

ইআরডির এক কর্মকর্তা বলেন, বর্তমান সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার ফল হচ্ছে ই-নথি। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ধারাবাহিকতা কাজ করা হচ্ছে। সাধারণ জনগণও ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফল পাচ্ছেন। ইআরডি অফিসের সব ডাক স্ক্যান করে অনলাইনে নিয়ে আসা হয়। পরে ই-নথির মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা হচ্ছে। কোন কর্মকর্তা গুরুত্বপূর্ণ কাজে অফিসের বাইরে থাকলেও কাজ থেমে থাকে না। সবকিছুই অনলাইনে হয়ে যাচ্ছে। যে কোন অফিসিয়াল সিদ্ধান্তও ই-নথির মাধ্যমে নিয়ে হয়েছে। কয়েক বছর ধরেই ই-নথিতে কাজ চলছে। আশা করছি সরকারের ঘোষিত গোল ২০২১ সালের আগেই ইআরডি পেপারলেস হবে। অনলাইন প্লাটফর্মের মাধ্যমে ইআরডির সব দাফতরিক কাজ করতে পারবে।

সামনে ই-নথি কার্যক্রম আরও বাড়বে। অনলাইনে নথি আদান-প্রদান একদিকে যেমন সময় সাশ্রয়ী তেমনই লালফিতার কোন দৌরাত্ম্য নেই। দ্রুত সময় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম নিষ্পত্তি করা হচ্ছে। সরকারী কাজ স্বচ্ছতার সঙ্গে দ্রুত সময় নিষ্পত্তি করতে ই-ফাইলিংয়ের কোন বিকল্প নেই। ই-নথি বা ই-ফাইলিং ডিজিটাল বাংলাদেশে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে সরকারী কার্যক্রমকে আরও সহজতর করার একটি সফটওয়্যার সিস্টেম। এর মাধ্যমে সরকারী দফতরের সব কাজ অনলাইনভিত্তিক করা হয়।

তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক জানান, মুজিববর্ষ ২০২০ উদযাপন উপলক্ষে গৃহীত সব কর্মসূচীর মধ্যেই থাকবে ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের উদ্যোগ। এ জন্য শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং এ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার দ্রুত বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। সরকারের বেশ কয়েকটি বিভাগ পেপারলেস কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য উদ্যোগ নিয়েছে। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) পেপারলেস করে ডিজিটাল করার কার্যক্রম চলছে। তবে ঠিক কতদিনের মধ্যে ডিজিটাল হবে এটা নির্ধারণ করে অন্য সরকারী প্রতিষ্ঠানকেও তা অনুসরণ করার তাগিদ দেয়া হবে। বেশ কয়েকটি দফতরে বেতন, বিল, বাজেট প্রণয়ন, চিঠিপত্র ব্যবস্থাপনা ডিজিটাল পদ্ধতিতে করা হচ্ছে। ডাকের পরিবর্তে এখন অনলাইনে এসব কার্যক্রম দ্রুত নিষ্পত্তি করা হয়। এ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে অফিসে উপস্থিত না হয়েও দাফতরিক কাজ মোবাইলের মাধ্যমে ই-নথি এ্যাপ ব্যবহার করে করা যায়। তবে এ ব্যবস্থাপনায় এখনও অনেক মন্ত্রণালয় আগ্রহী নয় আবার অনেক মন্ত্রণালয়-বিভাগে ব্যাপক সাড়া মিলেছে। ইআরডিতে ব্যাপক সাড়া মিললেও অনাগ্রহী পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ জানিয়েছে, ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণে ই-ফাইলিং কার্যক্রমকে তিন ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে। চলতি বছরে ই-নথি কার্যক্রমে বড় ক্যাটাগরিতে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। মধ্যম ক্যাটাগরিতে শীর্ষ স্থান দখল করেছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা বিভাগ, বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)। এছাড়া ছোট ক্যাটাগরিতে প্রথম স্থান অধিকার করেছে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আবেদন ই-নথির মাধ্যমে দ্রুত নিষ্পত্তি করা হয়। মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে তিন ক্যাটাগরিতে ভাগ করে এ হিসাব করা হয়। প্রথম ক্যাটাগরিতে সাতটি, দ্বিতীয় ক্যাটাগরিতে ১৪টি এবং তৃতীয় ক্যাটাগরিতে ৩৭টি বিভাগ ও মন্ত্রণালয় রয়েছে। বর্তমান সরকার ই-ফাইলিংয়ে জোর দিয়েছে। এখন অধিকাংশ টেন্ডারও ই-ফাইলিংয়ে চলে এসেছে।

দেশে মোট ১৯ হাজার সরকারী অফিস রয়েছে। এসব অফিসে দেড় থেকে দুই লাখ সরকারী কর্মকর্তা কর্মচারী কর্মরত। ফলে দেশের ১৬ কোটি মানুষ উপকৃত হন। এসব অফিসে প্রায় ৮৫ হাজার ৫৩২ জন কর্মকর্তা ই-নথি কার্যক্রমে অভ্যস্ত হয়ে গেছেন। ই-নথির ফলে পুরো বাংলাদেশের ১ কোটি ১৭ লাখ ৯৫ হাজার ২৭১ জন মানুষ উপকৃত হচ্ছেন। ২০২১ সালে দেশের ১৯ হাজার অফিস পেপারলেস করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার।