শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

যথাযথ ব্যবস্থা নিলে এক মাসের মধ্যে করোনা রোধ করা সম্ভব

আজকের দেশবার্তা রিপোর্টঃ দেশে ৮ মার্চ প্রথম করোনা শনাক্তের পর এখন পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছে ২ লাখ ৭৬ হাজার ৫৪৯ জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন এক লাখ ৫৮ হাজার ৯৫০ জন এবং মারা গেছেন ৩ হাজার ৬৫৭ জন। অর্থাৎ দেশে এখনও এক লাখ ১৩ হাজার ৯৪২ জন করোনা আক্রান্ত রোগী আছেন। স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে পাওয়া আগস্টের তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ১ আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত একদিনে সর্বোচ্চ শনাক্ত ছিল ২ হাজার ৯৯৬ জন। এছাড়া এখন পর্যন্ত আগস্ট মাসে শনাক্ত ৩ হাজার অতিক্রম করেনি।

তবে ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হারে তেমন কোনও অবনতি নেই। টেস্ট যে পরিমাণেই হোক, শনাক্তের হার ২০-২৫ শতাংশের মধ্যেই আছে। গত সাত দিনে করোনায় মারা গেছেন ২৫৮ জন। এই সাত দিনে গড় মৃত্যু ছিল ৩৭ জন। গত সাত দিনে শনাক্ত হয়েছেন ১৬ হাজার ৯২৫ জন এবং গড়ে ২ হাজার ৪১৮ জন শনাক্ত হয়েছেন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনা সহসাই চলে যাবে এটা ধারণা করা ভুল হবে। আবার কেউ কেউ মনে করছেন, যথাযথ ব্যবস্থা নিলে এক মাসের মধ্যে করোনার সংক্রমণ রোধ করা সম্ভব।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক পরিচালক এবং জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. বেনজির আহমেদ বলেন, ‘করোনা সংক্রমণের শুরুর দিকে বিশ্বের অনেক দেশের কোনও পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিল না। তার পরেও তারা এমন ব্যবস্থা নিলো যে অতি দ্রুত সময়ে এটি মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে আসলো। ইউরোপের দেশগুলোতে অনেক মৃত্যু হয়েছে। তারপরেও কিন্তু তারা ঘুরে দাঁড়িয়েছে এবং সংক্রমণকে মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেওয়া নির্দেশনা কয়েকটি দেশ অনুসরণ করেছে। সেগুলো বাস্তবায়ন করে তারা খুব দ্রুত সময়ে নিয়ন্ত্রণ করে ফেলেছে। কিছু দেশ যেমন– যুক্তরাষ্ট্র, ল্যাটিন আমেরিকার কয়েকটি দেশ, ভারত এই দেশগুলো কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ যথাযথভাবে বাস্তবায়ন না করার ফলে একটি চরম অবস্থার মধ্যে চলে গেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই দুটি গ্রুপের মধ্যে এক গ্রুপ সফল হয়েছে, আরেক গ্রুপ পারেনি। তাদের সঙ্গে মেলাতে গেলে দেখা যায়, যারা সফল হতে পারেনি তাদের সঙ্গে বাংলাদেশের বৈশিষ্ট্যগুলো মিলে যায়। যেসব দেশ সফল হয়েছে তারা করোনা রোগী শনাক্ত এবং অবাধ চলাচলের নিয়ন্ত্রণের জায়গা নিশ্চিত করে সফল হয়েছে। বাইরে বের না হতে দেওয়া, মাস্ক পরার বিষয়গুলো কয়েকটি দেশ জাতীয়ভাবে পালন করেছে। এগুলোর কোনও একটিও আমরা ঠিকমতো করতে পারিনি। মন্ত্রী মহোদয় যেভাবে বললেন সে অনুযায়ী গত এক মাসে কিংবা তারও আগে বড় দাগে কোনও কাজ কি করা হয়েছে? আমার ধারণা, ডিজি পরিবর্তন, সচিব পরিবর্তন, নানা পরিচালকের পরিবর্তনের পরে মনে হচ্ছে ওই এলাকা ঝিমিয়ে গেছে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা যদি কোনও ব্যবস্থা না নিয়ে থাকি তাহলে করোনা না থাকার বিষয়টি একমাত্র “ঐশী” বাণী হতে পারে। সেক্ষেত্রে বলা যায়, আমার কাছে একটা বাণী এসেছে, “করোনা বাংলাদেশে থাকবে না” একমাত্র এটা হতে পারে। কিন্তু যুক্তি, বিবেচনা, বৈজ্ঞানিকভাবে দেখা যায়, ভাইরাসটির সংক্রমণ করার সক্ষমতা যদি কোনও কারণে কমে যায়, একমাত্র তাহলেই এটি সম্ভব। কিন্তু সেটা হওয়ার সম্ভাবনা এজন্যই কম যে, এটি একটি বৈশ্বিক শক্তি। এটাকে বহু সমুদ্র পাড়ি দিতে হয়েছে, অনেক আবহাওয়ায় টিকে থাকতে হয়েছে। সুতরাং এটি কোনও সহজ ভাইরাস নয়। এমন ভাবার কোনও কারণ নেই যে আগামীকাল এটি একটি সাদামাটা ভাইরাসে রূপান্তরিত হবে। এটা হওয়ার কথা না। বিজ্ঞান তা বলে না। সহসা সংক্রমণ কমে যাবে– বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে এটার সঙ্গে আমরা একমত হতে পারি না।’

করোনা বিষয়ক সরকারের পাবলিক হেলথ অ্যাডভাইজরি কমিটির সদস্য ডা. আবু জামিল ফয়সালের মতে, স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বক্তব্য জনমনে বিভ্রান্তি তৈরি করতে পারে। তিনি বলেন, ‘এরকম কথা বলে আমরা মানুষকে বিভ্রান্ত করছি। আমাদের যে কাজ এখনও শেষ হয়নি, সেটির মধ্যে এক ধরনের ঢিলেমি চলে আসছে। করোনা চলে যাবে এটা মনে করা একেবারেই ভুল। তিনি কীভাবে বললেন এটা আমি জানি না। গতকালকেও (শনিবার) ৩৪ জন মারা গেছে করোনায়, সংক্রমিত হয়েছে ২ হাজার ৬৬৪ জন। সংক্রমণের হারও অনেক বেশি। আমাদের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হচ্ছে না বলে আমরা জানতে পারছি না যে ছোট শহরগুলোতে এখন সংক্রমণ বেশি হচ্ছে। সুতরাং আমরা যদি মনে করি, এখন আর কোনও কিছু করতে হবে না, এটা মারাত্মক ভুল।’

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ‘করোনা সহসাই যাবে কিনা এটা রোগতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ করে বলা যাবে। সেরকম পরিস্থিতি তো দেখা যাচ্ছে না। স্বাস্থ্যমন্ত্রী মহোদয় আসলে সরকারের রোগতাত্ত্বিক অবস্থান থেকে বলেননি বোধহয়। তিনি একটি অন্য অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবাইকে হয়তো আশ্বাস দেওয়ার জন্য বলেছেন। করোনা একসময় যাবে, তবে সেটা কখন তা বিশ্লেষণ ছাড়া বলা যাবে না। স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাধারণভাবেই হয়তো বলেছেন। তবে করোনা নিয়ন্ত্রণ আগামী এক মাসের মধ্যে সম্ভব, যদি সারাদেশের মানুষকে সম্পৃক্ত করে ঘরে ঘরে শনাক্তের ব্যবস্থা করা যায়, প্রয়োজন অনুযায়ী পর্যাপ্ত আইসোলেশন করা যায়, আক্রান্তদের সঙ্গের লোকদের কোয়ারেন্টিন করা যায়, স্বাস্থ্যবিধি পালনের বিষয়ে জনগণকে সম্পৃক্ত করা যায়।’