শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

যেসব ধারার মামলায় ফেঁসে যাচ্ছেন নিক্সন চৌধুরী

নিজস্ব সংবাদদাতা : নির্বাচনি আচরণবিধির কমপক্ষে তিনটি ধারার ভিত্তিতে ফরিদপুর-৪ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরীর (নিক্সন) বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এই ধারাগুলোর মধ্যে দুটি উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বিধিমালা এবং একটি উপজেলা পরিষদ (নির্বাচনি আচরণ) বিধিমালা সংশ্লিষ্ট। অবশ্য নির্বাচন বিধিমালার ধারায় বেশ কয়েকটি উপধারাও রয়েছে। এসব ধারায় সর্বনিম্ন ছয় মাস থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের শাস্তির বিধান রয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৫ অক্টোবর) স্থানীয় থানায় চরভদ্রাসন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচনে নির্বাচন পরিচালনা ও নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে নিক্সনকে আসামি করে রিটার্নিং কর্মকর্তা নওয়াবুল ইসলাম এই মামলা দায়ের করেছেন।

মামলায় উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বিধিমালার ৭৪(১); ৭৪(২), (ক), (খ) ও (গ) এবং বিধি ৭০(১) এবং উপজেলা পরিষদ (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা ২০১৬-এর বিধি ২(১৪) লঙ্ঘন করার অভিযোগ আনা হয়েছে।

উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বিধিমালা ২০১৩-এর ৭০(১) ধারায় জাল ভোটসহ অবৈধভাবে ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে কী শাস্তি হতে পারে তা উল্লেখ রয়েছে। এক্ষেত্রে ভোট দেওয়ার যোগ্য না হয়েও ভোট প্রদান, একই কেন্দ্রে একাধিকবার ভোট প্রদান, ভোটকেন্দ্র থেকে ব্যালটপেপার সরিয়ে ফেলার ক্ষেত্রে অনধিক পাঁচ বছরের সাজা এবং ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে। এই ধারার উপধারায় জ্ঞাতসারে কোনও ব্যক্তি যদি এক্ষেত্রে প্ররোচিত বা বাধ্য করেন, তিনিও একই বিধানের আওতায় আসবেন। এক্ষেত্রে নিক্সন চৌধুরীর বিরুদ্ধে প্ররোচিত বা বাধ্য করার অভিযোগ আনা হয়েছে।

উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বিধিমালা ২০১৩-এর বিধি ৭৪ (১)-এ নির্বাচনে ভোটগ্রহণের পূর্ববর্তী ৩২ ঘণ্টা এবং ভোটগ্রহণ শুরুর পরবর্তী ৬৪ ঘণ্টা সময়ের মধ্যে নির্বাচনি এলাকায় জনসভা, অনুষ্ঠান, কোনও মিছিল বা শোভাযাত্রা করতে পারবেন না বা তাতে যোগ দিতে পারবেন না।

৭৪ (২) বিধিতে তিনটি উপধারা রয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ওই সময়ের মধ্যে কোনও আক্রমণাত্মক কাজ বা বিশৃঙ্খলামূলক আচরণ, নির্বাচনি কার্যক্রমে নিয়োজিত ব্যক্তিকে ভয়ভীতি দেখাতে এবং অস্ত্র বা শক্তি প্রদর্শন করতে পারবেন না। এক্ষেত্রে দোষী সাব্যস্ত হলে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে।

এছাড়া উপজেলা পরিষদ (নির্বাচনি আচরণ) বিধিমালা ২০১৬-এর ২(১৪) বিধিতে সরকারি সুবিধাভোগী ব্যক্তির কথা বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি অর্থ ‘প্রধানমন্ত্রী, জাতীয় সংসদের স্পিকার, সরকারের মন্ত্রী, চিফ হুইপ, ডেপুটি স্পিকার, বিরোধীদলীয় নেতা, বিরোধীদলীয় উপনেতা, প্রতিমন্ত্রী, হুইপ, উপমন্ত্রী বা তাদের সমমর্যাদার কোনও ব্যক্তি, সংসদ সদস্য ও সিটি করপোরেশনের মেয়র’ বোঝানো হয়েছে। নিক্সন চৌধুরী সংসদ সদস্য হিসেবে অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির পর্যায়ে পড়েছেন।

মামলার ধারার প্রশ্নে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব আলমগীর বলেন, ‘আমরা মামলার ক্ষেত্রে কোনও ধারার কথা বলে দিইনি। যেটা বলেছি, নির্বাচনি আচরণবিধিতে বলা আছে, গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে নির্বাচনের আগে ও পরে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ওই এলাকায় যেতে পারবেন না।’

তিনি জানান, প্রশাসনকে হুমকি দেওয়া, নির্বাচনি দায়িত্বপ্রাপ্তদের কাজে বাধা দেওয়া এবং যে সময়ের মধ্যে বিজয় মিছিল করা বা গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে নির্বাচনি এলাকায় যেতে পারবেন না, এর সবই তিনি ভঙ্গ করেছেন। এ কারণে কমিশন মামলার সিদ্ধান্ত নিলে রিটার্নিং অফিসার মামলা দায়ের করেছেন।