শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সুখবর দেশের অর্থনীতিতে, সাথে শেয়ারবাজারেও

আজকের দেশবার্তা রিপোর্টঃ বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসেবে করোনাভাইরাসের মধ্যেও গেল ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের  (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ২৪1 শতাংশ অর্জন হয়েছে। সেই সঙ্গে দেশের মাথাপিছু আয়ও দুই হাজার ডলার ছাড়িয়ে ২০৬৪ ডলারে উঠেছে। আবার বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, করোনার মধ্যে রেমিট্যান্স আসার ক্ষেত্রে রেকর্ড হয়েছে। করোনার মধ্যে আমদানি-রফতানি খাতও ঘুরে দাঁড়িয়েছে। শুধু তাই নয়, এই করোনাকালে সুবাতাস বইছে শেয়ারবাজারেও। গত সপ্তাহের লেনদেন হওয়া চার কার্যদিবসের মধ্যে তিনদিনই মূল্য সূচকের বড় উত্থান হয়েছে। এতেই প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সবকটি মূল্য সূচক ৮ শতাংশ বেড়েছে। সূচকের বড় উত্থানের পাশাপাশি বেড়েছে লেনদেনও। সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইতে লেনদেন বেড়েছে ৫৫ শতাংশ।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষক ও অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখত বলেন, অর্থনীতির সবক্ষেত্রেই ধীরে ধীরে উন্নতি হচ্ছে। শেয়ারবাজারেও এর প্রভাব পড়ছে। এছাড়া নিয়ন্ত্রক সংস্থার কিছু ভূমিকার কারণেও বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে। তিনি বলেন, শেয়ারবাজারের দুর্বল কোম্পানির অবস্থার উন্নতির পাশাপাশি সুশাসন নিশ্চিত করতে চায় বিএসইসির বর্তমান কমিশন। এরই মধ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপও নেওয়া হয়েছে। যার প্রভাব পড়ছে বাজারে।

এদিকে মূল্য সূচক ও লেনদেনে বড় উত্থানের পাশাপাশি বাজার মূলধনেও বড় উত্থান হয়েছে। সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৫৫ হাজার ৮৭ কোটি টাকা। যা তার আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৩ লাখ ৩৩ হাজার ৬৮৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে ২১ হাজার ৪০২ কোটি টাকা।

এছাড়া গত সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে এক হাজার ১২৬ কোটি ২২ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় ৭২৫ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন বেড়েছে ৪০০ কোটি ২৫ লাখ টাকা বা ৫৫ দশমিক ১৩ শতাংশ। গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ৪ হাজার ৫০৪ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয় ২ হাজার ৯০৩ কোটি ৯০ লাখ টাকা। সে হিসাবে মোট লেনদেন বেড়েছে এক হাজার ৬০০ কোটি ৯৯ লাখ টাকা।

সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে গত বৃহস্পতিবার(১৩ আগস্ট)  সূচক ও লেনদেনে বড় উত্থান হয়েছে। ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স এদিন ৭০ পয়েন্ট বা দেড় শতাংশ বেড়েছে। অপর শেয়ারবাজার সিএসইর সার্বিক সূচকটি এদিন বেড়েছে ১৯৬ পয়েন্ট বা প্রায় দেড় শতাংশ। বাজারে এদিন লেনদেনের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ২০৮ কোটি টাকা, যা আগের দিনের চেয়ে ৮৮ কোটি টাকা বেশি।

বাজার পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ২৮২টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৫৯টির। আর ১৮টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

এদিকে গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ৩৩৮ দশমিক ৪৯ পয়েন্ট বা ৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ। এর মাধ্যমে টানা আট সপ্তাহ সূচকটি বাড়ল। টানা আট সপ্তাহের উত্থানে ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক বেড়েছে ৭৪০ পয়েন্ট। প্রধান মূল্য সূচকের পাশাপাশি গত সপ্তাহে বড় উত্থান হয়েছে ডিএসইর শরিয়াহ সূচকেও। শরিয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত এ সূচকটি গত সপ্তাহে বেড়েছে ৭৭ দশমিক ৩৬ পয়েন্ট বা ৭ দশমিক ৬৫ শতাংশ। এ সূচকটিও টানা আট সপ্তাহ বাড়ল। আগের ৭ সপ্তাহে এ সূচকটি ৩৪ দশমিক ৬১ পয়েন্ট, ৩০ দশমিক শূন্য ৮ পয়েন্ট, দশমিক ৬১ পয়েন্ট, ৬ দশমিক ৮৫ পয়েন্ট, ১৬ দশমিক ৮৫ পয়েন্ট, ২ দশমিক ৬১ পয়েন্ট এবং দশমিক ৯৪ পয়েন্ট বাড়ে।

বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসইর আরেকটি সূচক ডিএসই-৩০। এ সূচকটি গত সপ্তাহে বেড়েছে ১১৮ দশমিক ৪৩ পয়েন্ট বা ৮ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি বাড়ে ৫৫ দশমিক ২৪ পয়েন্ট এবং তার আগের দুই সপ্তাহে ৪৬ দশমিক শূন্য ৫ পয়েন্ট ও ৫ দশমিক ৮৩ পয়েন্ট। তবে এর আগের সপ্তাহে দশমিক ৬১ পয়েন্ট কমে সূচকটি।

এদিকে শেয়ারবাজারের মন্দ কোম্পানির বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। তারই অংশ হিসেবে ‘জেড’ শ্রেণিভুক্ত মন্দ কোম্পানির সব উদ্যোক্তা–পরিচালকের শেয়ার বিক্রি, হস্তান্তর, স্থানান্তর ও প্লেজের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। অর্থাৎ জেড শ্রেণির কোম্পানির উদ্যোক্তা ও পরিচালকেরা এখন থেকে তাদের হাতে থাকা শেয়ার লেনদেন করতে পারবেন না। এ ছাড়া যেসব কোম্পানি দুই বছরের বেশি সময় ধরে ‘জেড’ শ্রেণিভুক্ত রয়েছে, সেসব কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) গত বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভা শেষে বিএসইসির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

এদিকে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বিবিএস কেবলসের শেয়ার নিয়ে কারসাজির কারণে কোম্পানিটির চেয়ারম্যানের স্ত্রী খাদিজা তাহেরা, ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবু নোমান হাওলাদার, এমডির ভাই আবু নঈম হাওলাদার, এমডির নিকটাত্মীয় ফরহাদ হোসেন, কোম্পানির মনোনীত পরিচালক সৈয়দ ফেরদৌস রায়হান কিরমানিসহ ১০ ব্যক্তি ও তিন প্রতিষ্ঠানের নামে প্রায় ৮ কোটি টাকা জরিমানা করেছে বিএসইসি।