শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সেক্টর কমান্ডার সি আর দত্ত আর নেই

আজকের দেশবার্তা রিপোর্টঃ মুক্তিযুদ্ধের চার নম্বর সেক্টরের কমান্ডার মেজর জেনারেল (অব.) চিত্ত রঞ্জন দত্ত (সি আর দত্ত) বীর উত্তম আর নেই৷ মঙ্গলবার (২৫ আগস্ট) যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৯টায় তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।  তিনি বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি।

সংগঠনটির সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট দীপংকর ঘোষ বাংলানিউজকে তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

তিনি বলেন, সি আর দত্ত বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত ছিলেন৷ গত ২০ আগস্ট বাথরুমে অসাবধানবশত তিনি পড়ে যান। এতে তার পা ভেঙে যায়। এরপর তাকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।  সেখানে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে।

চিত্ত রঞ্জন দত্তের জন্ম ১৯২৭ সালের ১ জানুয়ারি আসামের শিলংয়ে। তার পৈতৃক বাড়ি হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার মিরাশি গ্রামে। তার বাবার নাম উপেন্দ্র চন্দ্র দত্ত এবং মায়ের নাম লাবণ্য প্রভা দত্ত। শিলংয়ের লাবান গভর্নমেন্ট হাইস্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছিলেন৷ পরবর্তীকালে তার বাবা চাকরি থেকে অবসর নিয়ে হবিগঞ্জে এসে স্থায়ী বসবাস শুরু করেন৷ হবিগঞ্জ গভর্নমেন্ট হাই স্কুল থেকে ১৯৪৪ সালে তিনি মাধ্যমিক পাস করেন। পরবর্তীতে কলকাতার আশুতোষ কলেজে বিজ্ঞান শাখায় ভর্তি হয়ে ছাত্রাবাসে থাকা শুরু করেন তিনি৷ পরবর্তীতে খুলনার দৌলতপুর কলেজের বিজ্ঞান শাখায় ভর্তি হন৷ পরে এই কলেজ থেকেই বিএসসি পাস করেন৷

চিত্ত রঞ্জন দত্ত ১৯৫১ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দেন৷ কিছুদিন পর ‘সেকেন্ড লেফটেনেন্ট’ পদে কমিশন পান। ১৯৬৫ সালে সৈনিক জীবনে প্রথম যুদ্ধে লড়েন তিনি৷ ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধে পাকিস্তানের হয়ে আসালংয়ে একটা কোম্পানির কমান্ডার হিসেবে যুদ্ধ করেন তিনি৷ এই যুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য পাকিস্তান সরকার তাকে পুরস্কৃত করে৷

মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি এমএজি ওসমানী সিলেট জেলার পূর্বাঞ্চল এবং খোয়াই শায়স্তাগঞ্জ রেললাইন বাদে পূর্ব ও উত্তর দিকে সিলেট ডাউকি সড়ক পর্যন্ত এলাকা নিয়ে চার নম্বর সেক্টরের কমান্ডার হিসেবে চিত্ত রঞ্জন দত্তকে দায়িত্ব দেন৷ সেক্টর কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পর সিলেটের রশীদপুরে প্রথমে ক্যাম্প বানান তিনি৷ চারপাশের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে চা-বাগান৷ বাগানের আড়ালকে কাজে লাগিয়ে তিনি যুদ্ধের কৌশল নির্ধারণ করে দিতেন৷ পরবর্তী সময়ে তিনি যুদ্ধের আক্রমণের সুবিধার্থে রশীদপুর ছেড়ে মৌলভীবাজারে ক্যাম্প স্থাপন করেন৷ 

চিত্ত রঞ্জন দত্ত ১৯৭২ সালে রংপুরে ব্রিগেড কমান্ডার হিসেবে নিযুক্ত হন৷ সেখানে তিনি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন৷ ১৯৭৩ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য সীমান্ত রক্ষা প্রহরী গঠনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে সরকার৷ এই বিষয়ে চিত্ত রঞ্জন দত্তকে দায়িত্ব দেয় বাংলাদেশ সরকার৷ পরবর্তীকালে তিনি সীমান্ত রক্ষা প্রহরী গঠন করেন এবং নাম দেন বাংলাদেশ রাইফেলস। এখন এ বাহিনীর নাম বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। চিত্ত রঞ্জন দত্ত ছিলেন বাংলাদেশ রাইফেলসের প্রথম ডিরেক্টর জেনারেল। এছাড়া ১৯৭১ সাল থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত তাকে নানা ধরনের দায়িত্ব পালন করতে হয়৷ ১৯৭৪ সাল থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত তিনি হেড কোয়ার্টার চিফ অব লজিস্টিক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন৷ ১৯৭৭ সালে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন৷ ১৯৭৯ সালে বি আর টি সির চেয়ারম্যান হিসেবে কিছুদিন দায়িত্ব পালনের পর ১৯৮২ সালে তিনি পুনরায় মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন৷ ১৯৮৪ সালে তিনি অবসর গ্রহণ করেন৷

মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য চিত্ত রঞ্জন দত্ত বীর উত্তম খেতাবে ভূষিত হন৷ এছাড়া ঢাকার কাঁটাবন থেকে কারওয়ানবাজার সিগন্যাল পর্যন্ত সড়কটি ‘বীরউত্তম সি আর দত্ত’ সড়ক নামে নামকরণ করা হয়।