শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সেমিস্টার ফাইনাল ছাড়াই গ্রেড পাবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা

নভেল করোনাভাইরাসের মহামারীর মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা না নিয়েই শিক্ষার্থীদের চলতি সেমিস্টারের গ্রেডিং করতে পারবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। এই ফলাফল বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের সুপারিশের ভিত্তিতে প্রকাশ করতে হবে। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের বিগত সেমিস্টারের প্রাপ্ত গ্রেড পর্যালোচনা করার সুপারিশ করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৭ মে) বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের পরিচালক ড. মো. ফখরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত কার্যালয় স্মারকের মাধ্যমে এই তথ্য জানানো হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের পরিচালক ড. মো. ফখরুল ইসলাম বলেন, করোনা পরিস্থিতির এই সময় আরো দীর্ঘ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই মুহূর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে পরীক্ষা দেওয়ারও সুযোগ নেই। শিক্ষার্থীদের যেন সময় নষ্ট না হয় সেজন্য আমরা এমন বিকল্প পদ্ধতি অবলম্বন করার কথা বলেছি। তবে এটি শুধুমাত্র চলতি সেমিস্টারর জন্য প্রযোজ্য হবে। বিশ্বের অনেক দেশ এই পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের ফলাফল দিয়ে থাকে। আমরা সার্বিক দিক বিবেচনায় এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

ড. মো. ফখরুল ইসলাম আরও বলেন, ফলাফল প্রস্তুতির ক্ষেত্রে যেসব বিশ্ববিদ্যালয় করোনা পরিস্থিতির আগে ন্যূনতম ৭০ শতাংশ ক্লাস সম্পন্ন করেছে তারা এখন কোনো ক্লাস-পরীক্ষা না নিলেও চলবে। শিক্ষার্থীদের মিডটার্ম, কুইজ, এসাইনমেন্ট, প্রেজেন্টেশন যথাযথ মূল্যায়ন করে ফল প্রকাশ করা যাবে। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের পূর্বের সেমিস্টারের ফলাফল পর্যালোচনা করা যাবে। এই ফলাফল বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের সুপারিশের ভিত্তিতে প্রকাশ করতে হবে।

কার্যালয় স্মারকে চলমান সেমিস্টারের শিক্ষা কার্যক্রম সম্পন্ন করার বিকল্প প্রস্তাবনা-২ এর দুই নাম্বারে বলা হয়েছে, চলমান সেমিস্টারে তত্ত্বীয় কোর্সের বিভিন্ন বিষয়ে বিষয়ে রেজিস্ট্রিকৃত শিক্ষার্থীদের অনলাইনের মাধ্যমে ওই সকল বিষয়ের অসমাপ্ত পাঠ্যসূচি ( যা ৩০% মত) সন্তোষজনক ভাবে সম্পন্ন হয়ে গেলে এবং অনলাইনের কার্যক্রম শুরুর আগে চলমান সেমিস্টারের বিভিন্ন বিষয়ে ইতোপূর্বে ক্লাসে উপস্থিতি পারফরম্যান্স, ক্লাস টেস্ট, মিড টার্ম পরীক্ষার উপর ভিত্তি করে মূল্যায়ন করা হয়েছে তার নম্বর এবং অনলাইনে অংশের উপর অ্যাসাইনমেন্ট, ভার্চুয়াল প্রেজেন্টেশন নিয়ে যথাযথ স্বচ্ছতা ও মান নিশ্চিত করে মূল্যায়ন সম্পন্ন করে ফলাফল প্রকাশ করা যাবে। মূল্যায়নের জন্য প্রয়োজন হলে পূর্বের সেমিস্টারের ফলাফল বিবেচনায় আনা যেতে পারে। সকল বিষয়ের ফলাফল বিশ্ববিদ্যালয়ের সুপারিশের ভিত্তিতে প্রকাশ করতে হবে।

জানা গেছে, করোনা মহামারীর আগে ও পরে অনলাইন ক্লাস করে ইউজিসি’র এই শর্ত অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ই পূরণ করেছে। সে হিসেবে চাইলে একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত নিয়ে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ই গ্রেডিং ছাড়া ফল প্রকাশ করতে পারবে।

করোনাভাইরাসের ফলে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে শিক্ষা কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে ২৩ টি নির্দেশনা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি)। নির্দেশনায় বলা হয়, আগামী জুন মাস থেকে নতুন সেমিস্টারে শিক্ষার্থী ভর্তি শুরু করতে পারবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। আর নতুন সেমিস্টারের শিক্ষা কার্যক্রম আগামী পহেলা জুলাইয়ে শুরু করা যাবে। এছাড়া করোনা সংকটের কারণে আর্থিক সংকটে পরা শিক্ষার্থীদেব ক্ষেত্রে মানবিক দিক বিবেচনায় রেখে টিউশন ও অন্যান্য ফি মওকুফ, হ্রাস ও ইনস্টলমেন্ট প্রদানের সুযোগ রাখার নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে।

এর আগে গত ৩০ এপ্রিল অনলাইনে উচ্চশিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ইউজিসি ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অংশগ্রহণে একটি ভার্চুয়াল সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে চলমান অচলাবস্থায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য একটি নির্দেশনা তৈরির দায়িত্ব দেয়া হয় ইউজিসিকে। সে আলোকে একটি নির্দেশনা তৈরি করে আজ দুপুরে তা ই-মেইলের মাধ্যমে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়কে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, ইউজিসির হিসাবে বর্তমানে দেশের ৬৩টি বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রম এগিয়ে নিচ্ছে। এর মধ্যে ৫৬টি বেসরকারি ও বাকি ৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অনলাইন ক্লাসে শিক্ষার্থী অংশগ্রহণের হার ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ।

সূত্র : দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে