শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

১৭ ইউনিয়নে প্রার্থী দিতে পারেনি বিএনপি

নিজস্ব সংবাদদাতা : কোনো প্রকার হস্তক্ষেপ ছাড়াই তৃণমূলের নেতাদের পাঠানো তালিকা থেকেই স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছে বিএনপি। তবে স্থানীয় নির্বাচনে তৃণমূল নেতাদের আগ্রহ কম থাকায় ১৭টি ইউনিয়নে প্রার্থী দিতে পারেনি দলটি। এ বিষয়ে দলটির জেলা নেতারা গতকাল বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, সারা দেশে নির্বাচনের নামে যা হয়, তাতে স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে আগ্রহ কম। এ কারণে ১৭টি ইউনিয়নে প্রার্থী দিতে পারেননি তারা।

প্রার্থী দিতে না পারার বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, তৃণমূল থেকে যারা তালিকা পাঠিয়েছেন তাদের তালিকা ধরে চিঠি প্রস্তুত করে পাঠানো হয়েছে। তৃণমূলের প্রার্থী নির্বাচনে বিএনপি সব সময় একই প্রক্রিয়া অনুসরণ করে। বেশিরভাগ ইউনিয়নেই প্রার্থী দেওয়া হয়েছে।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, অন্যান্য সময়ে কেন্দ্রীয় নেতারা ঝামেলা করে থাকে। তবে এবার কোনো নেতাকে সম্পৃক্ত করা হয়নি। তাই কোনো ঝামেলা হয়নি। 

পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার মহিপুর ইউনিয়নে প্রার্থী দিতে পারেনি বিএনপি। এ বিষয়ে জানতে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক ও পটুয়াখালী-৪ (কলাপাড়া ও রাঙ্গাবালী) থেকে সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা এবিএম মোশাররফ হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘বৃহত্তর বরিশালে বিএনপির রাজনীতি করা মুশকিল হয়ে পড়েছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অত্যাচার ও নির্যাতনের কারণে। এরপরও পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার মহিপুর ইউনিয়নে দলের নেতাকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।’

ফরিদপুর জেলার মধুখালী উপজেলার গাজনা ইউনিয়নে প্রার্থী দিতে না পারার বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ফরিদপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মোদাররেছ আলী ইছা বলেন, ‘ফরিদপুর জেলাতে দুটি ইউনিয়নে নির্বাচন হবে। এর মধ্যে একটিতে প্রার্থী দেওয়া হয়েছে। তবে মধুখালী উপজেলার গাজনা ইউনিয়নে প্রার্থী দেওয়া যায়নি। নেতাদের আগ্রহ নেই। এমনিতে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা একাধিক মামলার আসামি। তারা আর মামলা-হামলার ঝুঁকি নিতে চাচ্ছেন না।’ 

চট্টগ্রাম জেলার লোহাগাড়া উপজেলার আমিরাবাদ ইউনিয়নে প্রার্থী না দেওয়ার বিষয়ে চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবে রহমান শামীম বলেন, ‘চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার আমিরাবাদ ইউনিয়নে প্রার্থী দেওয়া যায়নি। কারণ নির্বাচনের নামে সারা দেশে যা হচ্ছে তাতে স্থানীয় নেতারা নির্বাচনে অনাগ্রহী।’

৪৬টি ইউনিয়ন পরিষদে মৃত্যুজনিত ও বরখাস্তজনিত কারণে শূন্য ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ও সাধারণ ওয়ার্ডের সদস্য ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডের পদে উপনির্বাচনের তফসিল দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। বুধবার এই এলাকাগুলোর প্রতিদ্বন্দ্বীদের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিল। এই ৪৬টি ইউনিয়ন পরিষদের উপনির্বাচনে ১৭টি এলাকায় দলীয় কোনো প্রার্থী দিতে পারেনি বিএনপি।

বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইং সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ৪৮ দলীয় প্রার্থীর মনোনয়ন চূড়ান্ত করেছে বিএনপি। এর মধ্যে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে ৮ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৯ জন এবং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে ৩৭ প্রার্থী রয়েছেন। মনোনীতদের তালিকা তৃণমূলে পাঠানো হয়েছে। 

শায়রুল বলেন, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন পেয়েছেন নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলায় মকলেছুর রহমান, যশোর সদর উপজেলায় নুর উন-নবী, খুলনার পাইকগাছায় আবদুল মজিদ, বাগেরহাটের শরণখোলায় মতিয়ার রহমান খান, সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলায় নুরুল হক আফিন্দী, চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলায় আবদুস শুক্কুর পাটোয়ারি, মাদারীপুরের শিবচর উপজেলায় নাদীরা আক্তার ও কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলায় সাইফুল আলম।

এ ছাড়া উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে দিনাজপুর সদরে রাশেদুজ্জামান রাশেদ, দাউদকান্দিতে ফরিদা ইয়াছমিন ও রুহুল আমিনকে বিএনপির মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।

ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৩৭ প্রার্থী হলেন কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার বড়িবাড়ি ইউনিয়নে সোহরাব হোসেন মীর, সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার লক্ষ্মীপাশা ইউপিতে আফজাল হোসেন, ওসমানী নগর উপজেলার সাদীপুর ইউপিতে আবদুর রফ আল মামুন, চাঁদপুরের কচুয়ার সাচার ইউপিতে আসকার আলী, লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার ইছাপুর ইউপিতে অলি উল্যা, ফটিকছড়ির সুয়াবিল ইউপিতে মো. ইয়াকুব, সন্দ্বীপের হারামিয়া ইউপিতে আসিফ আকতার, শ্রীমঙ্গলের মির্জাপুর ইউপিতে সুফি মিয়া, মাধবপুর উপজেলার শাহজাহানপুর ইউপিতে পারভেজ হোসেন চৌধুরী, বরুড়া উপজেলার আদ্র ইউপিতে পারভেজ হোসেন, শাহরাস্তি উপজেলার মেহের দক্ষিণ ইউপিতে মাসুদ করিম, মতলব উত্তর উপজেলার সুলতানাবাদ ইউপিতে সেলিম সরকার, জহিরাবাদ ইউনিয়নে আক্তার হোসেন, কচুয়া উপজেলার গেইট উত্তর ইউপিতে মোস্তফা কামাল, রায়পুর উপজেলার কেরোয়া ইউপিতে নজরুল ইসলাম ভূঁইয়া, লক্ষ্মীপুর সদরের চন্দ্রগঞ্জ ইউপিতে তোফায়েল আহমেদ, ফটিকছড়ির নানুপুর ইউপিতে জয়নাল আবেদিন, লোহাগড়ার আধুনগর ইউপিতে আবু নাসের চৌধুরী, লোহাগড়া ইউপিতে খোরশেদ আলম শিকদার, চিরির বন্দর উপজেলার সাতনালা ইউপিতে এনামুল হক, হাতিবান্ধা উপজেলার পাটিকাপাড়া ইউপিতে সফিয়ার রহমান, গড্ডিমারী ইউপিতে আবু তাহের মো. শফিকুল ইসলাম, দলগ্রাম ইউপিতে মোহাম্মদ ইকবাল আযম, রংপুর সদরের চন্দনপাট ইউপিতে মেরাজুল ইসলাম, নাচোল উপজেলার ফতেপুর ইউপিতে সাদির আহমেদ, শাহজাদপুর উপজেলার পোরজানা ইউপিতে রাকিবুল হাসান, ভাগুড়া উপজেলার ম-তোষ ইউপিতে আকরাম হোসেন, পাবনার ভঙ্গুড়া সদর ইউপিতে জাহাঙ্গীর আলম, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার গড়াইটুপি ইউপিতে আকতার হোসেন, আলমডাঙ্গা উপজেলার ডাউকী ইউপিতে মো. ইউনুছ আলী, কালীগঞ্জ উপজেলার নাগরী ইউপিতে রহিম সরকার, ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার কোরকদি ইউপিতে মেহেদী হাসান, ভেদরগঞ্জ উপজেলার মহিযার ইউপিতে মো. আবু হানিফ, বাকেরগঞ্জ উপজেলার কলসকাঠী ইউপিতে শওকত হোসেন হাওলাদার, ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার আঠারবাড়ী ইউপিতে আমিনুল ইসলাম খান, নান্দাইল উপজেলার শেরপুর ইউপিতে মো. জিয়া উদ্দিন, ফুলবাড়িয়া উপজেলার বালিয়ান ইউনিয়নে শেখ মো. মিজানুর রহমান।