শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

৫০ টাকার নিচে কোনো সবজি নেই

আজকের দেশবার্তা রিপোর্টঃ দুই মাসের বেশি সময় ধরে রাজধানীর বাজারগুলোতে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের সবজি। দাম তো কমছেই না, উল্টো এখন নতুন করে কিছু সবজির দাম বেড়েছে। ফলে বেশিরভাগ সবজির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকার ওপরে। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে চারজনের সংসারের জন্য একদিনেই লাগছে একশ টাকার সবজি।

সবজির সঙ্গে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে শাক ও কাঁচা মরিচ। রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে ভালো মানের ২৫০ গ্রাম কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬০ টাকা। আর যে কোনো শাকের আঁটি কিনতে খরচ হচ্ছে ২০ টাকার ওপরে।

শাক-সবজি, কাঁচা মরিচের এমন চড়া দাম বেশ অস্বস্তিতে ফেলেছে নিম্ন আয়ের মানুষকে। এমনকি মধ্যবিত্তরাও অস্বস্তিতে ভুগছেন। এদিকে করোনা মহামারিতে আয় কমে যাওয়া, অন্যদিকে পণ্যের চড়া দামের কারণে রাজধানীর বেশিরভাগ মানুষকেই ভুগতে হচ্ছে।

অবশ্য শাক-সবজির চড়া দামের বাজারে কিছুটা স্বস্তি দিচ্ছে বয়লার মুরগি। বাজারভেদে বয়লার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ১১০-১২০ টাকা। এতে কিছু কিছু সবজির তুলনায় বয়লার মুরগি কম দামেই পাওয়া যাচ্ছে।

শুক্রবার (২৮ আগস্ট) বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এককেজি পাকা টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৪০ টাকায়। এক কেজি গাজর কিনতেও একশ টাকা গুণতে হচ্ছে। বাজারভেদে গাজরের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৯০-১১০ টাকা। গত সপ্তাহেও সবজি দুটি এমন চড়া দামে বিক্রি হয়।

শুধু টমেটো ও গাজর নয় একশ টাকা কেজি স্পর্শ করেছে উস্তা, বেগুন, বরবটি। আগের সপ্তাহের মতো উস্তার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০-১০০ টাকা। একই দামে বিক্রি হচ্ছে বেগুন। গত সপ্তাহে ৭০-৯০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া বরবটির দাম কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ৮০-১০০ টাকা হয়েছে।

দাম বাড়ার এ তালিকায় রয়েছে চিচিঙ্গা, পটল, ঢেঁড়স। গত সপ্তাহে ৫০-৬০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া চিচিঙ্গার দাম বেড়ে ৬০-৭০ টাকা হয়েছে। ৫০-৬০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া পটল ও ঢেঁড়শের দাম বেড়ে ৬০-৭০ টাকা হয়েছে।

এছাড়া আগের সপ্তাহের মতো কচুর লতি ৬০-৭০ টাকা, কাকরোল ৬০-৭০ টাকা, কচুর মুখি ৫০-৬০ টাকা, ধুন্দুল ৬০-৭০ টাকা, লাউয়ের পিস ৬০-৭০ টাকা, চাল কুমড়ো জালির পিস ৪০-৫০ টাকা, পেপের কেজি ৪০-৪৫ টাকা এবং কাচা কলার হালি ৩০-৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এর সঙ্গে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে আলু ও ডিম। এক কেজি আলুর জন্য ৩৫-৩৭ টাকা খরচ করতে হচ্ছে। আর এক ডজন ফার্মের মুরগির ডিম বিক্রি হচ্ছে ১১০-১১৫ টাকা।

কারওয়ান বাজারে সবজি কিনতে আসা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ইয়াসিন বলেন, দুই ছেলে-মেয়েসহ আমাদের চারজনের সংসার। মহল্লার বাজারে সবজির যে দাম, একশ টাকার সবজি একদিনও হয় না। তাই বেশি করে সবজি কিনতে এখানে আসা। কিন্তু লাভতো তেমন দেখছি না। এখানেও দাম প্রায় মহল্লার সমান। বরং রিকশা ভাড়া যোগ করলে দেখা যাবে খরচ আরও বেশিই পড়ছে।

তিনি বলেন, দুই মাসের বেশি সময় ধরে চড়া দামে সবজি কিনতে হচ্ছে। মাসে সবজি কিনতেই ৫-৬ হাজার টাকা খরচ হয়ে যাচ্ছে। এর সঙ্গে চাল, ডাল, তেল, মসলা, মাছ, মাংস মিলিয়ে বাজারেই মাসে ২০ টাকা চলে যাচ্ছে। এভাবে খরচ বাড়লেও আমাদের আয় বাড়েনি, বরং কমেছে। ফলে পরিবার নিয়ে ঢাকাতে বেশ কষ্টে দিন কাটাতে হচ্ছে।

মালিবাগের বাসিন্দা মিনারুল বলেন, বাজারে এখন কোনো সবজির কেজি ৬০ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে না। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে সবজির বদলে বয়লার মুরগি কিনলে খরচ কম পড়ছে। কারণ দুইশ টাকা দিয়ে একটি মুরগি কিনলে দুইদিন চালানো যায়। কিন্তু দুইশ টাকার সবজি দিয়ে দুইদিনও চলে না। আর সবজি তো শুধু শুধু রান্না করে খাওয়া যায় না।

এদিকে বিভিন্ন বাজারে, লাল শাক, সবুজ শাক, কলমি শাকের পাশাপাশি পাওয়া যাচ্ছে পুঁইশাক। পুঁইশাকের আঁটি বিক্রি হচ্ছে ৪০-৪৫ টাকা। আর লাল শাক, সবুজ শাক ও কলমি শাকের আঁটি বিক্রি হচ্ছে ২০-৩০ টাকা।

শাক-সবজির এমন চড়া দামের বিষয়ে কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী ইসমাইল বলেন, বন্যা ও পানিতে খেত নষ্ট হয়ে যাওয়ায় শাক-সবজির দাম এমন বেড়েছে। এছাড়া দাম বাড়ার পেছনে অন্য কোনো কারণ নেই। কারণ শাক-সবজি এমন পণ্য যা মজুদ করে দাম বাড়ানোর সুযোগ নেই।

তিনি আরও বলেন, পরিস্থিতি যা তাতে সহসা সবজির দাম কমবে বলে মনে হয় না। বাজারে এখন সবজির যে চাহিদা, সরবরাহ তার তুলনায় অনেক কম। হুট করে সরবরাহ বাড়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।

খিলগাঁওয়ের ব্যবসায়ী আলম বলেন, অনেক দিন ধরেই সব ধরনের সবজির দাম বেশি হলেও দাম তুলনামূলক স্থিতিশীল ছিল। কিন্তু আজ আড়তে পটল, ঢেঁড়স, চিচিঙ্গাসহ কিছু সবজির দাম বেড়ে গেছে। সরবরাহ কম থাকায় এসব সবজির দাম বেড়েছে।

তিনি বলেন, সবজির দাম বাড়ায় আমাদের বিক্রিও কমেছে। আগে যারা কেজি কেজি সবজি কিনতেন, এখন তারা আধা কেজি করে কিনছেন। অনেকে এক পোয়াও (২৫০ গ্রাম) কিনছেন। দাম বেশি হওয়ায় আমরাও বিরক্ত না হয়ে ক্রেতাদের চাহিদা মতো বিক্রি করছি।