শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

পাপুলকাণ্ডে গ্রেপ্তার কুয়েতের সেনা কর্মকর্তা

আজকের দেশবার্তা রিপোর্টঃ মানবপাচারের অভিযোগে কুয়েতে গ্রেপ্তার বাংলাদেশি সংসদ সদস্য শহিদ ইসলাম পাপুলের সঙ্গে সন্দেহজনক আর্থিক লেনদেন এবং ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে কুয়েতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অ্যাসিসট্যান্ট আন্ডার সেক্রেটারি মেজর জেনারেল মাজেন আল-জারাহকে গ্রেপ্তার করেছে দেশটির কর্তৃপক্ষ।

আরবি ভাষার পত্রিকা আল কাবাসের বরাত দিয়ে গাল্ফ নিউজ জানিয়েছে, ঘুষের বিনিময়ে পাপুলের বেশ কিছু কাজ দ্রুত অনুমোদন করিয়ে দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে মেজর জেনারেল মাজেন আল-জারাহ । সে সময় তিনি কুয়েতের নাগরিকত্ব, পাসপোর্ট ও বসবাসের অনুমতি বিষয়ক দপ্তরের অ্যাসিসট্যান্ট আন্ডার সেক্রেটারি ছিলেন।

পাপুল ২৩ হাজারের বেশি কর্মীর এন্ট্রি ভিসার অনুমোদনের জন্য যাদের ঘুষ দেওয়ার কথা রিমান্ডে বলেছিলেন, তাদের মধ্যে মাজেন আল-জারাহ একজন। 

ওই অভিযোগ আসার পর জুনের শেষ দিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অ্যাসিসট্যান্ট আন্ডার সেক্রেটারির পদে থাকা মেজর জেনারেল মাজেন আল-জারাহকে বরখাস্তের আদেশ দেন কুয়েতের উপ-প্রধানমন্ত্রী আনাস আল-সালেহ।

এরপর গত বৃহস্পতিবার এই সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে কুয়েতের পাবলিক প্রসিকিউশন। ওই পরোয়ানার ভিত্তিতেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। 

লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য পাপুলকে গত ৬ জুন রাতে কুয়েতের মুশরিফ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। মারাফি কুয়েতিয়া কোম্পানির অন্যতম মালিক পাপুলের সেখানে বসবাসের অনুমতি রয়েছে।

পাচারের শিকার পাঁচ বাংলাদেশির অভিযোগের ভিত্তিতে পাপুলের বিরুদ্ধে মানবপাচার, অর্থপাচার ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের শোষণের অভিযোগ এনেছে কুয়েতি প্রসিকিউশন। ১৭ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের পর এখন তাকে রাখা হয়েছে কুয়েতের কেন্দ্রীয় কারাগারে।

কুয়েতি কর্মকর্তাদের কীভাবে কত টাকা ঘুষ দিয়েছেন, সে বিষয়ে রিমান্ডে বিস্তারিত তথ্য দিয়েছেন বাংলাদেশের এই এমপি, যা প্রসিকিউটরদের বরাতে প্রকাশ করছে স্থানীয় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম।

সেখানে নাম আসায় কুয়েতের দুই এমপির বিরুদ্ধেও পাপুলকে বেআইনি কাজে সহযোগিতা এবং অর্থ পাচারে জড়িত থাকার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আনা হয়েছে।

সালাহ খুরশিদ ও সাদুন হাম্মাদ নামের ওই দুই এমপিকে বিচারের মুখোমুখি করতে ইতোমধ্যে তাদের ’সংসদীয় ইমিউনিটি’ প্রত্যাহার করেছে কুয়েতের সংসদীয় বিচার বিষয়ক কমিটি। এর ফলে কুয়েতের পাবলিক প্রসিকিউশন এখন তাদের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু করতে পারবে।

এছাড়া প্রসিকিউশনের আবেদনে কুয়েতের জনশক্তি কর্তৃপক্ষের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে এবং দেশটির শীর্ষস্থানীয় এক হোম ডেকর কোম্পানির মালিক এক নারী ব্যবসায়ীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে।

পাপুলের কাছ থেকে ঘুষ গ্রহণকারী হিসাবে চিহ্নিত কুয়েতি কর্মকর্তাদের একজন ওই নারী ব্যবসায়ীর ভাই। ওই কর্মকর্তাসহ তিনজনকে এর আগে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলেন দেশটির সরকারি কৌঁসুলিরা।

সাধারণ শ্রমিক হিসাবে কুয়েত গিয়ে বিশাল সাম্রাজ্য গড়া পাপুল ২০১৮ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। শুধু তাই নয়, নিজের স্ত্রী সেলিনা ইসলামকেও সংরক্ষিত আসনে সংসদ সদস্য করে আনেন তিনি।

পাপুল ও তার কোম্পানির ব্যাংক হিসাব ইতোমধ্যে জব্দ করেছে কুয়েত কর্তৃপক্ষ। বাংলাদেশেও তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে।