বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সীমিত পরিসরে যেভাবে চলছে অফিস দোকাপাট ও চলাচল

আজকের দেশবার্তা রিপোর্টঃ জীবন তো থেমে থাকার নয়, তাই করোনায় স্থবির হয়ে যাওয়া জীবনযাত্রা কিছুটা ঘুড়িয়ে দাঁড় করানোর চেষ্টা করছেন সবাই, কিন্তু এখনও মানুষের সেই জীবনযাত্রা শতভাগ স্বাভাবিক হয়নি। চাপা আতঙ্ক রয়েছে মানুষের মধ্যে।

যদিও করোনাভাইরাস শরীরে আছে কিনা তা শনাক্ত করতে যাওয়া মানুষের সংখ্যা কমেছে, কিন্তু কমেনি শনাক্তের হার। এখনও পরীক্ষার সংখ্যা অনুপাতে শনাক্তের হার ২৩ থেকে ২৪ শতাংশের মধ্যেই রয়েছে। তাই এই চাপা আতঙ্ক। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।

এদিকে, ৩১ আগস্ট পর্যন্ত নিয়ন্ত্রিত চলাচলের সীমা বাড়িয়েছে সরকার। এছাড়া রাত ১০টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত অতীব জরুরি প্রয়োজন (প্রয়োজনীয় ক্রয়-বিক্রয়, কর্মস্থলে যাতায়াত, জরুরি পরিষেবা, ওষুধ ক্রয়, চিকিৎসা সেবা, মৃতদেহ দাফন/সৎকার ইত্যাদি) ব্যতীত বাসস্থানের বাইরে আসা যাবে না। তবে দোকানপাট আগের মতোই রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকছে।

সোমবার (৩ জুন) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ বিষয়ে এক অফিস আদেশ জারি করা হয়েছে। এছাড়া সরকারি-বেসরকারি অফিস স্বাস্থ্যবিধি মেনে খোলা থাকবে বলে জানানো হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারি অফিস আদালত খুললেও উপস্থিতি কম। মাত্র ২৫ শতাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারী দিয়ে চলছে সরকারি দফতর ও সংস্থাগুলোর কাজ। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিকেল ৫টা পর্যন্ত অফিস করার কথা থাকলেও বেলা ১২টার পর থেকেই ফাঁকা হতে থাকে সরকারি দফতর ও সংস্থাগুলো।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো চলছে সীমিত সংখ্যক কর্মকর্তা কর্মচারী দিয়ে। এক্ষেত্রে হয়তো অনেক প্রতিষ্ঠানই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছাঁটাই করেছে, অথবা তাদের অবৈতনিক বাধ্যতামূলক ছুটি দেওয়া হয়েছে। সেখানে কাজও চলছে সীমিত পরিসরে।

রাজধানীর মহল্লায় দোকানপাট বা কাঁচাবাজারের শতভাগ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এখনও পুরোপুরি খোলেনি। যেটুকু খুলেছে সেটুকুই চলছে। দেখা গেছে, অনেক দোকানেরই কর্মচারীর সংখ্যা কমে গেছে। পাঁচ জন কর্মচারীর দোকান চলছে ৩ জন কর্মচারী দিয়ে। যেখানে আগে রাত ১২টা ১টা পর্যন্ত মহল্লার দোকানপাট হোটেল রেস্তোরাঁ জমজমাট থাকতো, সেখানে এই করোনাকালে রাত ৮টার পর থেকেই নীরবতা নেমে আসতে শুরু করে। রাত ১০টার পর এখনও রাজধানীর অনেক মহল্লায়ই অন্ধকার নেমে আসে। সেখানে নেই জন্মদিন বা বিয়েশাদির কোনও জমজমাট আয়োজন। এখনও পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে কমিউনিটি সেন্টারভিত্তিক ব্যবসা।

রাজধানীর কাঁচাবাজারগুলোয় ভিড় থাকলেও এখনও শতভাগ আগের মতো জমে ওঠেনি। কাঁচাবাজারের মাছ বা সবজির অনেক দোকান এবং স্টল ফাকা পড়ে আছে। মার্চের শেষ দিকে করোনার কারণে সারা দেশে লকডাউন চলাকালে অনেকেই ব্যবসা বাণিজ্য বন্ধ করে গ্রামে চলে গেছেন।

গত ২৫ মার্চের পর গত ৩১ মে রবিবার খুলেছে সরকারের শীর্ষ প্রশাসনিক দফতর বাংলাদেশ সচিবালয়। ২৬ মার্চ থেকে করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার সারা দেশের সরকারি বেসরকারি সব ধরনের অফিস কার্যক্রম বন্ধ করে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছিল। শুরুতে কয়েক দিনের জন্য হলেও পরবর্তীতে কয়েক দফায় সাধারণ ছুটির মেয়াদ বাড়িয়ে তা সর্বশেষ ৩০ মে পর্যন্ত গড়ায়। ৩১ মে রবিবার থেকে সরকারি বেসরকারি অফিস খোলার অনুমতি দেয় সরকার। এরই মাঝে অতিবাহিত হয়েছে ৬৬ দিন। এই ৬৬ দিনের মধ্যে গেছে ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস, বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ, পবিত্র শবে বরাত, শবে কদর ও মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর। ৩১ মে অফিস আদালত খোলার পরেও কেটে যাচ্ছে প্রায় দুই মাস। এতদিনেও সচিবালয় ফিরে পায়নি তার চিরচেনা রূপ। এখনও প্রাণহীন মনে হয় পুরো সচিবালয়কে। সকালের দিকে কিছু মানুষের আনাগোনা থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেখানেও নেমে আসে এক ধরনের নিস্তব্ধতা। বেশিরভাগ মন্ত্রীও এখন অফিসিয়াল কাজকর্ম বা মিটিং সেরে নেন অনলাইনে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা সাধারণ ছুটি ৩১ মে’র পরে না বাড়ানো সংক্রান্ত আদেশে বলা হয়েছে, ২৫ শতাংশ কর্মকর্তা কর্মচারী অফিসে আসবেন। এর জন্য পৃথক শিডিউল করবেন সংশ্লিষ্ট দফতর বা সংস্থাগুলো।

যাদের কাজ আগে শেষ হবে, তারা অফিসে বিলম্ব করবেন না, বাড়িতে চলে যাবেন। ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তি, অসুস্থ কর্মচারী এবং সন্তানসম্ভবা নারীরা কর্মস্থলে উপস্থিত হওয়া থেকে পুরোপুরি বিরত থাকবেন।

কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতকরণের জন্য সর্বাবস্থায় মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ কর্তৃক জারিকৃত ১৩ দফা নির্দেশনা কঠোরভাবে অনুসরণ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেই নির্দেশনা মোতাবেক চলছে সরকারি সংস্থা, দফতর ও অফিস।

এদিকে সচিবালয়ে দায়িত্ব পালনরত ডিএমপির অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার রাজিব দাস আবারও জানিয়েছেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে এখনও সচিবালয়ে দর্শনার্থী পাস দেওয়া বন্ধ রয়েছে। পরবর্তী আদেশ না পাওয়া পর্যন্ত এ সিদ্ধান্তই বহাল থাকবে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা কামরুজ্জামান জানিয়েছেন, সরকারি নির্দেশনা মেনেই অফিস করছি। নতুন কোনও নির্দেশনা না থাকায় দৈনিক ২৫ শতাংশ কর্মকর্তা কর্মচারীর উপস্থিতিতেই চলছে দৈনন্দিন কাজ। কাজ শেষ হলেই বাসায় চলে যাওয়ার নির্দেশনা মেনে বাসায় চলে যাচ্ছেন কর্মকর্তা কর্মচারীরা। দর্শনার্থী নাই। তাই সব মিলিয়ে এখনও প্রাণহীন মন্ত্রীর দফতরসহ পুরো মন্ত্রণালয়।

মতিঝিলের একটি ব্রোকারেজ হাউজের কর্মকর্তা আরিফুল হক। তিনি জানিয়েছেন, একসময় ২৭ জন স্টাফের সমন্বয়ে এ অফিস চললেও এখন চলছে মাত্র ৯ জন দিয়ে। এখনও এখানে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা শুরু হয়নি। কারণ, কাজ নাই, ব্যবসা নাই। যেটুকু কাজ তা দিয়ে এই ৯ জন স্টাফ চালানোই অনেকটা দায়।

রাজধানীর কাওরান বাজারের কিচেন মার্কেটের ব্যবসায়ী লাল মিয়া। তিনি জানিয়েছেন, জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হতে হলে আগে মানুষের মনের ভেতর থেকে অজানা ভয় দূর করতে হবে। আগের তুলনায় ভয় কিছুটা কমেছে, তবে পুরোপুরি কাটেনি বলে মানুষজন খুব প্রয়োজন না হলে বাজারে আসছেন না। তাই আগের তুলনায় বিক্রি কমেছে।

রাজধানীর হাতিরপুল বাজারের মাছ ব্যবসায়ী লোকমান সেখ। তার পাশের স্টলটি বন্ধ। জানতে চাইলে তিনি জানান, শরীয়তপুরের আলতাব হোসেন এই স্টলটি দৈনিক ভিত্তিতে ভাড়া নিয়ে মাছ ব্যবসা করতো। খোঁজ নিয়ে জেনেছি সে আর আসবেন না। খরচ জোগাতে না পেরে পরিবার পরিজন নিয়ে গ্রামে চলে গেছেন। সেখানেই কিছু একটা করবেন। তিনি আরও জানিয়েছেন, কয়েক মাস যাবৎ স্টলটি বন্ধ থাকলেও নতুন করে কেউ ভাড়াও নিচ্ছেন না। কারণ, মানুষের হাতে নগদ টাকা না থাকলে অ্যাডভান্স দেবেন কীভাবে? মালিক তো অ্যাডভান্স ছাড়া ভাড়া দেবেন না।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন জানিয়েছেন, নতুন কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। আগের সিদ্ধান্তেই সরকারি অফিস চলছে। পরবর্তী নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত এভাবেই চলবে বলে জানান তিনি।