শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

নেতৃত্ব ঠিক করে গেছেন আল্লামা শফী, মানছেন না বাবুনগরীর অনুসারীরা

নিজস্ব সংবাদদাতা : মৃত্যুর আগে সংগঠনের নেতৃত্ব ঠিক করে গেছেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের প্রয়াত আমির আল্লামা আহমদ শফী। তার নির্ধারণ করে যাওয়া নতুন কমিটিতে নিজে আমির এবং মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী স্বপদে বহাল থাকলেও সিনিয়র নায়েবে আমির হিসেবে নির্বাচিত করে গেছেন মাওলানা আহমদ দিদার কাসেমীকে। এ ছাড়া বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদেও পরিবর্তন আনা হয়। 

গত ১৩ আগস্ট আল্লামা শাহ আহমদ শফী স্বাক্ষরিত হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের অনুমোদিত কমিটির কপি বাংলাদেশ প্রতিদিনের কাছেও সংরক্ষিত রয়েছে। 

জানা যায়, আল্লামা আহমদ শফী ও আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর মধ্যে বিগত কয়েক বছর ধরে সাংগঠনিক দূরত্ব তৈরি হলেও গত ৮ জুলাই দুই শীর্ষ নেতা আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার ঘোষণা দেন। ১৩ আগস্ট হেফাজতে ইসলামের ২১১ সদস্য বিশিষ্ট নতুন কমিটির স্বাক্ষর করেন আল্লামা আহমদ শফী ও মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী। নতুন কমিটিতে ১০ সদস্য বিশিষ্ট একটি উপদেষ্টা কমিটি নতুনভাবে যুক্ত করা হয়েছে। 

নতুন কমিটিতে হেফাজতের আমির আল্লামা আহমদ শফী ও মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী স্বপদে বহাল থাকলেও সিনিয়র নায়েবে আমির আল্লামা মহিবুল্লাহ বাবুনগরীর স্থালাভিষিক্ত হয়েছেন হাটহাজারী মাদ্রাসার সিনিয়র মুহাদ্দিস মাওলানা আহমেদ দিদার কাসেমী। এ ছাড়া মৃত্যুবরণ ও অন্যান্য কারণে কমিটি থেকে বাদ পড়েন কমবেশি ৩০ জন। কমিটিতে যুক্ত করা হয় নতুন প্রায় দেড়শ জনকে। কমিটিতে নায়েবে আমির করা হয়েছে ৪২ জনকে। যুগ্ম মহাসচিব ও সহকারী যুগ্ম-মহাসচিব ১৫ জনকে। 

সাংগঠনিক ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে আটজন, অর্থ সম্পাদক ও সহকারী অর্থ-সম্পাদক আটজন, প্রচার ও সহকারী প্রচার সম্পাদক ১২ জন, আন্তর্জাতিক সম্পাদক ১৩ জন, সমাজ কল্যাণ ও সহ-সমাজ কল্যাণ সম্পাদক ১২ জন, শিক্ষা প্রশিক্ষণ সম্পাদক ছয়জন, আইন বিষয়ক সম্পাদক ও সহ-সম্পাদক ছয়জন, শিল্প বিষয়ক সম্পাদক ও সহ-সম্পাদক ছয়জন, তথ্য গবেষণা সম্পাদক সাতজন, দফতর সম্পাদক ও সহ- দফতর সম্পাদক আটজন, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক ও সহকারী সম্পাদক আটজন, ধর্মবিষয়ক সম্পাদক ও সহ-সম্পাদক আটজন, ত্রাণ ও পুনর্বাসন সম্পাদক ও সহ-সম্পাদক সাতজন এবং কার্যকরী সদস্য ২৯ জন। 

এদিকে হেফাজতে ইসলামের নেতৃত্বে আসা নিয়ে ইতিমধ্যে পাল্টাপাল্টি দুটি পক্ষ তৈরি হয়েছে। একপক্ষে রয়েছেন সংগঠনটির মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরীর অনুসারীরা। অন্যপক্ষে মরহুম আহমদ শফীর ছেলে আনাস মাদানীর অনুসারীরা। মাদানীর অনুসারীদের দাবি, আল্লামা শফী নতুন কমিটির অনুমোদন দিয়ে গেছেন। এই কমিটি বাস্তবায়ন করা হবে। অন্যদিকে আল্লামা বাবুনগরীর অনুসারীরা এই দাবি প্রত্যাখ্যান করে বলছেন, এক মাসের মধ্যে কাউন্সিল ডেকে হেফাজতের নতুন আমির নির্বাচন করা হবে। 

প্রায় তিন মাস ধরে দেশের অন্যতম প্রভাবশালী কওমি মাদ্রাসা হাটহাজারী দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম-এ অস্থিরতা চলছে। গেল জুলাই মাসে এই মাদ্রাসার সহকারী মহাপরিচালকের পদ থেকে জুনায়েদ বাবুনগরীকে সরিয়ে দেওয়া হয়। এরপর থেকেই হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক ও হেফাজত প্রধান আহমদ শফীর সন্তান আনাস মাদানীর বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকেন বাবুনগরীর অনুসারীরা। 

তাদের দাবি, আহমদ শফীকে ভুল বুঝিয়ে বাবুনগরীকে সহকারী মহাপরিচালকের পদ থেকে সরিয়েছেন আনাস মাদানী। এই দ্বন্দ্বের জেরে গত বুধবার মাদ্রাসায় ব্যাপক ছাত্রবিক্ষোভ ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। সেদিনই মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটিরি জরুরি সভা ডেকে আনাস মাদানীকে বহিষ্কার করা হয়। পরদিন বৃহস্পতিবার আহমদ শফী মাদ্রাসার মহাপরিচালকের পদ ছাড়েন। শুক্রবার মারা যান তিনি। 

আনাস মাদানীর অনুসারীরা দাবি করছেন, হেফাজতের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা চিহ্নিত একটি গোষ্ঠী কূট কৌশলে আল্লামা আহমদ শফীর ছেলেকে মাদ্রাসা থেকে সরিয়ে দিয়েছে। তার বহিষ্কার অবৈধ। 

এদিকে বাবুনগরীর অনুসারীরা দাবি করে আসছেন, সরকারঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের প্ররোচনায় হাটহাজারী মাদ্রাসায় বিশৃঙ্খলা তৈরির চেষ্টা করছেন আনাস মাদানী। তাদের দাবি অসুস্থতার কারণেই স্বেচ্ছায় মহাপরিচালকের পদ ছেড়ে দিয়েছিলেন আহমদ শফী। এদিকে কাউন্সিল ডেকে হেফাজতে ইসলামের নতুন আমির নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মহাসচিব বাবুনগরী ও তার অনুসারীরা। 

বিরোধীরা বলছেন, তথাকথিত কাউন্সিল ডেকে মরহুম আহমদ শফীকে হেনস্তাকারীদের নেতৃত্বে আনার চেষ্টা চলছে। এ অবস্থায় পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন হাটহাজারী মাদ্রাসার নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে শুরু হওয়া দ্বন্দ্ব শেষ পর্যন্ত হেফাজতে ইসলামে বিভক্তির রেখা টানতে পারে।