শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ভিন্ন নামে বাকশাল প্রতিষ্ঠিত হতে চলেছে: ডা. জাফরুল্লাহ

নিজস্ব সংবাদদাতা : সরকার সম্পূর্ণ গণতন্ত্রবিরোধী ও ভিন্ন নামে দেশে বাকশাল প্রতিষ্ঠা করছে বলে অভিযোগ তুলেছেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।

জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে শুক্রবার রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন দাবি বাতিল পরিষদের উদ্যোগে আয়োজিত মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ সব কথা বলেন তিনি।

ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, “এই সরকারের সকল কর্মকাণ্ড গণতন্ত্রবিরোধী। আমাদের সংবিধানে আমার কথা বলার অধিকার আছে, আমার সংগঠন করার অধিকার আছে, আমার বক্তব্য দেওয়ার অধিকার আছে জনগণের কাছে। সেটা আমাকে করতে দেওয়া হচ্ছে না।”

আরও বলেন, “দেশে আজ গণতন্ত্র নেই। আজকে ভিন্ন নামে বাকশাল দেশে প্রতিষ্ঠিত হতে চলেছে। এটা চলতে পারে না।”

“আজকে জনগণকে কথা বলতে দেওয়া হচ্ছে না। এ জাতীয় বাধা দেওয়ার কারণে কী হয়? মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যতগুলো কাজ আপনি করছেন ক্রমেই তা ভুল প্রমাণিত হচ্ছে। যেমন ধরেন সদ্য নারী নিপীড়ন ও ধর্ষণের বিরুদ্ধে যে আইনের সংশোধনী এনেছেন— ফাঁসি। এই ফাঁসি দিয়ে পৃথিবীর কোথাও কোনো পরিবর্তন হয় নাই। এটা মধ্যযুগীয় শাস্তি।”

ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, “আজকের জনগণকে প্রকৃত মানবিক এবং সুষ্ঠু গণতন্ত্র দিতে হবে। সবাইকে কথা বলার অধিকার দিতে হবে। সুষ্ঠু ও মানবিক গণতন্ত্র ছাড়া আমাদের মুক্তির কোনো পথ নেই। রাজনীতি করার এবং বক্তব্য দেওয়ার অধিকার আমার আছে। কিন্তু সেটা আমাকে করতে দেওয়া হচ্ছে না।”

“আপনারা পত্রিকা খুলে দেখেন, এই আইন করার আগে ও পরে এক ফোঁটাও অপরাধ কমেনি। বরং বেড়েছে। এখন বাড়তে বাড়তে শিশুর ওপরই হচ্ছে, স্কুলে হচ্ছে, মাদ্রাসায় হচ্ছে। এত বড় ভুল কী করে উনি (প্রধানমন্ত্রী) করলেন?”

ভারতের সমালোচনা করে বলেন, “আজকের পত্রিকায় আছে— ভারত আমাদের কতটা লুণ্ঠন করেছে। ২০১৮ সালে ভারত বাংলাদেশ থেকে পেয়েছে ১২৮ বিলিয়ন ডলার। আর সারা মুক্তিযুদ্ধে ওনাদের খরচ ১০০ মিলিয়নও হয় নাই।”

রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় আটক দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকার সম্পাদক আবুল আসাদ ও সদ্য গ্রেপ্তার ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি রুহুল আমিন গাজীর প্রসঙ্গ টেনে জাফরুল্লাহ বলেন, “শুধুমাত্র কথা বলার কারণে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আবুল আসাদকে এক বছর যাবৎ আটকে তাকে জামিন দেওয়া হচ্ছে না। অথচ যারা যারা লক্ষ-কোটি টাকা পাচার করেছে তাদের জামিন আগেই হয়ে যায়। এটা কি গণতন্ত্র হতে পারে?”

প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “আমাদের অন্ধ নুরুল হুদা সাহেব আর কত দিন ক্ষমতায় রাখবেন জানি না। এই ভদ্রলোক নির্বিবাদে কীভাবে এত মিথ্যা কথা বলেন জানি না। খোদা ওনাকে দোজখে নিয়েও হয়তো খুশি হবেন না। পরিবর্তনের জন্য জনগণেরও একটা দায়িত্ব আছে। বিরোধী দলগুলোর ব্যর্থতার কথা অস্বীকার করারও কোনো উপায় নেই। আমরা একত্রে বের করতে পারছি না। কেন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন দেওয়া হবে না। কেন আমার ভোট আমি দিতে পারি না।”

বিচারকদের উদ্দেশ্যে ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, “আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হলে জজ সাহেবদের বিবেকবান হতে হবে। জজ সাহেবরা এত ভীত যে এখনো লুকিয়ে থাকেন। ভার্চুয়াল কোর্ট করে বেড়ান। রাস্তায় আমরা বের হচ্ছি না, গাড়ি-ঘোড়া চলছে না? কার বুদ্ধিতে এসব করা হচ্ছে জানি না। তবে আমাদের সামনে সমূহ বিপদ। আমার শেষ আবেদন আমাদের সবাইকে রাস্তায় থাকতে হবে। সবাইকে গণতান্ত্রিক অধিকার ফেরত দিতে হবে।”

রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন দাবি বাতিল পরিষদের আহ্বায়ক সৈয়দ হারুন অর রশিদের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন ভাসানী ফ্রন্টের চেয়ারম্যান মমতাজ চৌধুরী, বাংলাদেশ ন্যাপ মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রেস উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু, এনডিপির মহাসচিব সৈয়দ মনজুর হোসেন ঈসা, বাংলাদেশ স্বাধীনতা পার্টির সাধারণ সম্পাদক এফএম এম ফয়েজ হোসেন, ইসলামী ঐক্যজোটের ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা শওকত আমিন, গ্রিন পার্টির চেয়ারম্যান রাজু আহমেদ, সমাজতান্ত্রিক মজদুর পার্টির সম্পাদক ডা. শামসুল আলম প্রমূখ।