শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটিতে “টেক্সটাইল জব সেক্টর’’ শীর্ষক সেমিনার।

নিজস্ব সংবাদদাতা: সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটি (এস ইউ) এর টেক্সটাইল বিভাগে ৮ মার্চ, ২০২৪ তারিখে বিকাল ২.৩০ টায় “পারর্সপেক্টিভ ভিউ অব এ মার্চেন্ডাইজার ইন টেক্সটাইল জব সেক্টর’’ শীর্ষক এক সেমিনারের আয়োজন করা হয়। উক্ত সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন জনাব অধ্যাপক ড: মোহম্মদ একরামুল ইসলাম, ট্রেজারার, এস ইউ, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্থপতি জনাব মোহম্মদ আলী নকি, অধ্যাপক, এস ইউ, এবং অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অত্র বিভাগের বিভাগীয় প্রধান জনাব রেজাউল করিম, সহযোগী অধ্যাপক, এস ইউ এবং মুখ্য আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইঞ্জি: জনাব রিজউয়ানুর রহমান, হেড অব গার্মেন্টস ওয়াশিং এন্ড ডাইং টেকনোলজি, ভোলার ফ্যাশন প্রাঃ লিঃ। আলোচক হিসেবে আরো উপস্থিত ছিলেন ইঞ্জি: জনাব লায়ন মো: ফেরদৌস হাসান, ম্যানেজার, মার্চেন্ডাইজিং বিভাগ, নর্দান তশরিফা গ্রুপ এবং অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন প্রভাষক শৌরিন আলম মৌ ও মোঃ সেলিম।

সেমিনারটি আয়োজন করা হয় সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটি অডিটোরিয়াম, মহাখালি ক্যাম্পাস, ওয়্যারলেস গেইট। সেমিনারটি আয়োজন করে টেক্সটাইল বিভাগ ও ‘ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি এসুয়ারেন্স সেল (আইকিউএসি), এস ইউ এবং সার্বিক সহযোগিতায় ‘সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটি টেক্সটাইল ক্লাব’ (এসইউটিসি)।

জ্ঞানভিত্তিক, বুদ্ধিদীপ্ত ও উদ্ভাবনী সমাজ বিনির্মাণে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ২০৪১ সালের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে- স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়ন ও দক্ষ মানব সম্পদ গঠনে দেশের প্রধান রপ্তানি শিল্প হিসেবে তৈরি পোশাক খাতে মার্চেন্ডাইজিং এর ভূমিকা বিষয়ে বিশদ আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। সেমিনারে মার্চেন্ডাইজিং এর প্রতিটি ধাপ অর্থাৎ, বায়ারের কাছ থেকে অর্ডার শীট সংগ্রহ ও আভ্যন্তরীণ ক্রয় আদেশ প্রস্তুত করা, বায়ারের চাহিদা মোতাবেক পণ্য সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়ার পাশাপাশি কমার্শিয়াল বিভাগকে অবগত করা এবং পেমেন্ট সংগ্রহ পর্যন্ত বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। টেকসই ফ্যাশনের প্রেক্ষাপটে মার্চেন্ডাইজিং বিভাগের কৌশলগুলো যেমন টেকসই ব্রান্ড কি সেগুলো বোঝা, ক্রেতার চাহিদা, মার্চেন্ডাইজিং এর বাজার মূল্য, টেকসই পণ্য ক্রয়ের জন্য ভোক্তাদের ইচ্ছা, বাজার গবেষণা, গার্মেন্টস শিল্পে- ফ্যাক্টরির অন্যান্য বিভাগগুলোর সঙ্গে একজন মার্চেন্ডাইজারের কাজের সমন্বয়, কাঁচামাল সোর্সিং, ক্রয় এবং কার্যক্রম, নেতৃত্ব ও দলগত ব্যবস্থাপনা, বায়ারদের সঙ্গে আলোচনার দক্ষতা, কৌশলগত পরিকল্পনা সাপ্লাইয়ারদের সাথে স্টক ব্যবস্থাপনা ও বায়ারদের চাহিদা অনুযায়ী পোশাকের গুণগতমান ঠিকরাখা এবং উৎপাদন গুণগত মানের স্তর সম্পর্কে কোয়ালিটি বিভাগকে পরামর্শ দেওয়া, উৎপাদন ও গুণগত বিভাগের মধ্যে মধ্যস্থতা করা, শিপিং এর নির্দেশনাবলী প্রদান করা, চালান অনুসরণ করা, ডকুমেন্টেশন বিভাগকে সহায়তা করা, বিভিন্ন ফ্যাক্টরি পরিদর্শনের দায়িত্ব নেওয়া ইত্যাদি বিষয় নিয়ে সেমিনারে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়।

অনুষ্ঠানটির মুখ্য বক্তা জনাব রিজয়ানুর রহমান তার বক্তব্যের শুরুতে গার্মেন্টস কোয়ালিটি মেজারমেন্ট সম্পর্কে একটা ঘটনা বলেন, ‘একজন ম্যাঙ্গো কাস্টমার তার ক্রয়কৃত পণ্য আশানুরূপ না হওয়াতে কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করে। পরবর্তীতে বিষয়টি অনুসন্ধান করে জানা যায় যে, পণ্যটি নিম্ন মানের ডাইস দিয়ে ডাইং করা হয়েছিল এবং একজন ক্রেতা ওই উৎপাদিত পণ্যের একটি শার্ট ক্রয় করেন ও অন্যান্য পোশাকের সঙ্গে ওয়াশ করতে গিয়ে শার্টটির থেকে কালার ব্রিডিং হয়। ফলে তার সমস্ত পোশাক নষ্ট হয়। ওই ক্রেতা পোশাকগুলো নিয়ে পুলিশের কাছে যায় এবং কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা করে দেয়। তার প্রেক্ষিতে ওই পণ্যের আমদানীকৃত কোম্পানীকে ৪০০ কোটি ডলার জরিমানা দিতে হয়’। তিনি এরপর আরো বলেন, ‘প্রোডাক্ট সুর্দিষ্ট সময়ে শিপমেন্ট করতে হবে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে বাংলাদেশের মার্চেন্ডাইজাররা অদক্ষতার পরিচয় দেয়। অনেক সময় তাদের সোসির্ং ঠিক থাকে না। আবার বায়ারদের ইমেইল আসলে সঠিক সময়ে রেসপন্স করে না। অন্যদিকে, যদি সাউথ এশিয়ার অন্যান্য দেশ যেমন ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলংকার মার্চেন্ডাইজাররা বিশেষ করে সাউথ ইন্ডিয়ান মার্চেন্ডাইজাররা বায়ারদের ইমেইলের খুব দ্রুত ফিডব্যাক দেন এবং কাস্টমারদের সঙ্গে খুব সুন্দরভাবে কমিউনিকেট করেন।

প্রধান অতিথি জনাব অধ্যাপক ড: মোহম্মদ একরামুল ইসলাম, ট্রেজারার, এস ইউ, তার বক্তব্যের শুরুতে বলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিন্টন ২০০৭ সালে ভারত এবং বাংলাদেশে এসেছিলেন। তাজমহল দেখে তিনি বলেছিলেন, পৃথিবীর মানুষকে আজ আমি দুই ভাগে ভাগ করলাম। যারা তাজমহল দেখেছে আর যারা তাজমহল দেখেনি। একইভাবে আমি আজ সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটির টেক্সটাইল বিভাগের এই সেমিনারে যারা উপস্থিত হয়েছে আর যারা উপস্থিত হয়নি।’ তিনি আরো বলেন,‘মার্চেন্ডাইজিং এর ক্ষেত্রে দেখা, পড়া এবং শোনা যেমন দরকার সেই সঙ্গে লজিক, ফিলোসফি ও সাইকোলজি এই বিষয়গুলো বুঝতে পারাও কিংবা পড়াশোনাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’

বিশেষ অতিথি অধ্যাপক আর্কিটেক্ট জনাব মোহম্মদ আলী নকী বলেন, ‘আমার আর্কিটেক্ট বিভাগের সঙ্গে টেক্সটাইল বিভাগের একটি সামঞ্জস্য রয়েছে। আমরা যখন কোন কিছু ডিজাইন করি তখন আমরা ফাইনাল প্রোডাক্টটা নির্ধারণ করি। তার ডিজাইন কেমন হবে, তার কালার কি হবে, কত তলা হবে ইত্যাদি রিকোয়ারমেন্টগুলো বাস্তবায়ন করি। আমরা আগে ড্রয়িং করি তারপর এই ড্রয়িং এর সাথে ইঞ্জিনিয়র, কনস্ট্রাক্টরসহ আরো অনেকগুলো পার্টি যুক্ত হয় আর এই পুরো সময়ে লিডারশীপ থাকতে হয় আর্কিটেকদের, তেমনি টেক্সটাইলের মার্চেন্ডাইজার ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।’

অনুষ্ঠানের সভাপতি, টেক্সটাইল বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও সহযোগি অধ্যাপক জনাব রেজাউল করিম স্বাগত বক্তব্যে বলেন, ‘একজন শিক্ষার্থীর প্রথম গোল হচ্ছে টার্গেট ঠিক করা। পাশাপাশি তার প্যাশন সম্পর্কে কিংবা ভালোলাগার বিষয়টি কি- সে সম্পর্কে নিজেকে প্রশ্ন করা। যে প্যাশনটাকে পেশা হিসেবে নেয়া যায় সেটিকেই নিতে হবে এবং জব সেক্টরে সেই প্যাশনটাকে বাস্তবায়ন করতে গেলে কি কি চ্যালেঞ্জ এর সম্মুখীন হতে হবে সে সম্পর্কে অবগত থাকা।’

তিনি এ বিষয়ে আরো বলেন, ‘ক্যারিয়ারের গোলকে চার ভাগে ভাগ করা যায় এক. গোল নির্ধারণ দুই. কেরিয়ার এওয়ারনেস তিন. সেলফ অ্যাসেসমেন্ট এবং চার. স্কিল ডেভেলপমেন্ট। একাডেমিক পড়াশুনার পাশাপাশি এই বিষয়গুলো নিয়ে শিক্ষার্থীদের কাজ করে যেতে হবে। ’

এছাড়া তিনি অর্থনৈতিক সম্ভাবনা নিয়ে আরো বলেন, ‘বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের বিশ্বজুড়ে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশ এখন ডেনিম পোশাক রপ্তানীর শীর্ষ দেশ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। এ কারণে পোশাক খাতে উদ্যোক্তাতারা নতুন ন তুন পোশাক কারখানা স্থাপন করে চলেছে। এর মধ্যে ২০৬টি সবুজ কারখানা নিয়ে সমগ্র বিশ্বে নেতৃত্ব দিচ্ছে বাংলাদেশ।

অনুষ্ঠানের সভাপতি সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান রেজাউল করিম সমাপনী বক্তব্যে তিনি বলেন এরকম সেমিনার প্রতিনিয়তই ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য আয়োজন করা হবে। সেই সাথে ইন্ড্রাস্ট্রি ও একাডেমিয়া কলাবরেশন বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে কাজ করে যাবেন। যাতে করে ইন্ডাস্ট্রির এক্সপার্টরা নতুন নতুন প্রযুক্তি সম্পর্কে ইউনিভার্সিটির ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে তাদের নলেজ শেয়ার করতে পারেন।

উক্ত সেমিনার শেষে অংশগ্রহণকারী ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে সনদ বিতরণ করা হয়।