শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

‘এখন যদি মরেও যাই, আমার আফসোস থাকবে না’

সেবা দিতে গিয়ে করোনা আক্রান্ত হওয়া বেশ গর্ববোধ করছেন বিজয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সেই নারী চিকিৎসক। আখাউড়ায় বাড়ি ওই নারী চিকিৎসক তাঁর ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন ‘এখন যদি মরেও যাই আমার আফসোস থাকবে না’। ওই নারী বর্তমানে যেখানে আছেন সেখানকার মানুষের আচরণ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন ফেসবুক স্ট্যাটাসে।

সর্বশেষ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় যে দুজন করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন এর মধ্যে একজন হলেন বিজয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একজন চিকিৎসক। তিনি আখাউড়ার শ্বশুর বাড়িতে থেকে সেখানে দায়িত্ব পালন করতেন। বর্তমানে তিনি স্বামীর সঙ্গে ময়মনসিংহে ভাড়া বাসায় হোম কোয়ারেন্টিনে আছেন। বিজয়নগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি হোম কোয়ারেন্টিন হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

এদিকে ওই নারীর শ্বশুর বাড়ি এলাকা আখাউড়ার পৌর এলাকার দেবগ্রাম দক্ষিণ-পূর্বপাড়া লকডাউন করা হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সেখানে উপস্থিত হয়ে এলাকাটি লকডাউন করে সংশ্লিষ্টদের জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে না বেরুনোর নির্দেশনা দেন। একই সঙ্গে ওই চিকিৎসকের পরিবারের সদস্যদের নমুনাও সংগ্রহ করা হয়। এ ছাড়া নারী চিকিৎসকের স্বামীর নমুনাও সংগ্রহ করা হয়েছে। নারী চিকিৎসক বর্তমানের ময়মনসিংহে আইসোলেশনে আছেন।

মঙ্গলবার রাতে দেওয়া ফেসবুক স্ট্যাটাসে লেখেন :

‘সবাই বলছে কাউকে বলো না। কেন বলব না?? আমি তো কোনো দোষ করি নাই। আমি আপনাদের সেবা করতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছি। লকডাউনে যখন আপনারা বাড়িতে বসে সময় কিভাবে কাটাবেন, তা নিয়ে দুশ্চিতাগ্রস্ত ছিলেন তখন আমি হয়তো কোনো কভিড-১৯ পজিটিভ ব্যক্তির পাশে দাঁড়িয়ে।

হ্যাঁ আমি কভিড-১৯ পজিটিভ। এতে আমার কোনো লজ্জা বা ভয় বা আফসোস নাই। বরং আমি খুব গর্বিত। কারণ আমি শেষদিন পর্যন্ত কাজ করে এসেছি। এখন যদি মরেও যাই, আমার আফসোস থাকবে না। কারণ আমি ডাক্তার হিসেবে যে শপথ নিয়েছিলাম তা পালন করে এসেছি।

আমি যতদিন পেরেছি আপনাদের জন্যে হাসপাতালে এবং মাঠে কাজ করেছি। যেদিন আমার মনে হলো আমার নিজেরই স্যাম্পল পাঠানো দরকার, আমি সাথে সাথে স্যাম্পল পাঠিয়ে নিজেকে কোয়ারেন্টাইনড করেছি। আমার পক্ষে যতদূর সম্ভব মানুষ এড়িয়ে চলেছি। নিজের বাড়িতেও ফিরিনি, যেহেতু আমারো পরিবার আছে, বাড়িতে বৃদ্ধ শ্বশুর-শাশুড়ি আছেন।

তারপরও আজ আমার এলাকার মানুষের কাছে (যে এলাকায় ভাড়া থাকি) যে ব্যবহার পেয়েছি আমি ও আমার স্বামী তা আমি কোনোদিন ভুলব না।
একটা কথা বলে যাই…নগর পুড়লে কি দেবালয় এড়ায়?????
আগামী বছর বেঁচে থাকলে এই স্মৃতিটা ভেসে উঠবে ফেসবুকের পাতায়।
শুভ নববর্ষ, ১৪২৭! সবার মঙ্গল হোক।’

ওই নারীর এক নিকট আত্মীয় কালের কণ্ঠকে বলেন, আমাদের পরিবারের সদস্য সেবা দিতে গিয়ে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এটা আমাদের গর্বের। এ নিয়ে লুকোচুরির কিছু নেই। সন্দেহ হওয়ার পর থেকেই তিনি হোম কোয়ারেন্টিনের নিয়ম পালন করেছেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উপপরিচালক ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সাবেক সিভিল সার্জন ডা. মো. শাহ আলম বলেন, মৃত্যুর ভয় থাকা সত্ত্বেও আমাদের কেউ রোগী দেখা থেকে পিছপা হচ্ছে না। সেবা দিতে গিয়েই ওই চিকিৎসক আক্রান্ত হয়েছে। এটা আমাদের জন্য গর্বের। জনগণকে সেটা বুঝতে হবে। তবে ময়মনসিংহের লোকজন চিকিৎসকের করোনা পজিটিভ জানার পর যেটা করল সেটা মোটেও ঠিক হয়নি।