শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সামনে কমবে না বাড়বে করোনা?

বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতি গত ১৫ দিন যাবত একইরকম। ৩ হাজারের বেশি এবং ৪ হাজারের কম, শতাংশের হিসেবে ২১ থেকে ২৩ শতাংশে ঘোরাফেরা করছে প্রতিদিন করোনা শনাক্তের সংখ্যা। এই হার নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক তা নিয়ে কারো সন্দেহ নেই, কোন দ্বিমত-ও নেই।

কিন্তু সমস্যা দেখা গিয়েছে বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতি কোন পর্যায়ে রয়েছে তা নিয়ে। বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞরা এই নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছেন এবং দুই ধরণের মতামত এক্ষেত্রে পাওয়া যাচ্ছে। একপক্ষ মনে করছে যে, বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতির এখনো পিক সিজন শুরু হয়নি এবং করোনা সংক্রমণ ধাপে ধাপে বাড়তে থাকবে। এরপর প্রতিদিন ৪ হাজার বা ৫ হাজার হবে কিংবা বেড়ে ৬ হাজারে দাঁড়াবে এবং এইভাবে বাড়তেই থাকবে। এই পক্ষের বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন যে, করোনা সংক্রমণ ঠেকানোর জন্য একমাত্র পথ লকডাউন, অধিক পরিমাণে টেস্ট করা, শনাক্তদের আলাদা করা এবং শনাক্তদের সংস্পর্শে যারা এসেছে তাঁদেরকেও আলাদা করা, অর্থাৎ কন্টাক ট্রেসিংয়ের মাধ্যমে যারা আক্রান্ত বা আক্রান্তদের সংস্পর্শে এসেছে তাঁদেরকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা। কিন্তু বাংলাদেশ যে কারণেই হোক সে পথে হাটছে না। বরং বাংলাদেশ করোনার সঙ্গে বসবাসের নীতি গ্রহণ করেছে। এখন যে পরিমাণ পরীক্ষা দৈনিক করা হচ্ছে তা অপ্রতুল- এই নিয়ে কারো মাঝে কোন সংশয় নেই। যার ফলে বাংলাদেশে সামাজিক সংক্রমণ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে, মানুষ যার-তাঁর সাথে মেলামেশা করছে- এই বাস্তবতায় বাংলাদেশের করোনা সংক্রমণের হার প্রতিনিয়ত বাড়তে থাকবে এবং যতক্ষণ পর্যন্ত লকডাউন এবং আক্রান্ত আর আক্রান্তদের সংস্পর্শে যারা এসেছে তাঁদেরকে পৃথক না করা পর্যন্ত বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ কমার কোন সম্ভাবনা নেই।

অবশ্য এই বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে একমত নন অনেকেই। তাঁরা মনে করছেন যে, বিশ্বের করোনা সংক্রমণের যে ট্রেন্ড, সেই ট্রেন্ডের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায় যে এই মাসের মধ্যেই বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতি আস্তে আস্তে কমতে শুরু করবে এবং এখন বাংলাদেশে করোনার পিক সিজন চলছে। তাঁরা মনে করেন যে, বাংলাদেশ করোনার ১১০ তম দিন পার করেছে। অর্থাৎ এখন বাংলাদেশের সামাজিক সংক্রমণ যা হওয়ার হয়ে গেছে। পরীক্ষা যতই অপ্রতুল হোক না কেন বাংলাদেশে যারা আক্রান্ত হওয়ার বা আক্রান্ত হবে তাঁরা আক্রান্ত হয়ে যাবে এবং এক পর্যায়ে গিয়ে এটা স্বাভাবিকভাবেই কমতে শুরু করবে। যেহেতু বাংলাদেশে অপ্রতুল পরীক্ষা হয়েছে এবং যেহেতু বাংলাদেশে উপসর্গহীন বা মৃদু উপসর্গের রোগীর সংখ্যা বেশি তাই এই বাস্তবতায় বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, এখন হয়তো অনেকেই আক্রান্ত। তাঁরা নিজেরাও বুঝছেন না এবং ৯০ ভাগ রোগী কোন চিকিৎসা ছাড়াই আপনা আপনি সুস্থ হয়ে ওঠে। কাজেই বাংলাদেশে অনেক বেশি লোক আক্রান্ত হয়েছে এবং যে আক্রান্তের হার বলা হচ্ছে এটাই সর্বোচ্চ। এখন আস্তে আস্তে এই হার কমতে থাকবে এবং যারা আক্রান্ত হয়েছেন তারাও সুস্থ হয়ে উঠবেন। বাংলাদেশে যেহেতু অপ্রতুল পরীক্ষা হচ্ছে তাই এখন বাংলাদেশে কত রোগী আছে তা বোঝার উপায় নেই।

তাছাড়া কয়েকদফা বাংলাদেশের মানুষ স্থানান্তর হয়েছে। গ্রাম থেকে শহরে এসেছে। শহর থেকে গ্রামে গেছে। এই বাস্তবতায় বাংলাদেশে সামাজিক সংক্রমণ যা হওয়ার তা হয়েই গেছে। নতুন করে সামাজিক সংক্রমণ ছড়ানোর কোন সুযোগ নেই। বাংলাদেশে যে আক্রান্ত বলা হচ্ছে, সেই আক্রান্তের চেয়ে হয়তো অনেক বেশি আক্রান্ত হয়েছে। কিছু কিছু সুস্থ হয়েও উঠেছে। আর এ কারণেই চলতি মাসেই হয়তো আমাদের পিক সিজন শেষ হবে। জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময় থেকে আমাদের দেশে করোনা সংক্রমণের হার কমতে থাকবে। অনেক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এটি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। কোন ব্যবস্থা না নিলেও আপনা আপনি করোনা কমে যায়। বাংলাদেশেও করোনা সংক্রমণ চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে গেছে। অনেকেই হয়তো বুঝেনইনি যে তিনি সংক্রমিত হয়েছেন। এই বাস্তবতায় বাংলাদেশে করোনা ব্যাপক হারে বাড়ার সম্ভাবনা খুবই কম।