মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

ফিফা রেফারি সালমার ফিটনেস ধরে রাখতে ঘরের মেঝেই ভরসা

০৬ মে – ফিফা রেফারি হওয়ার পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হয়েও বয়সের গ্যাড়াকলে পড়েছেন নেত্রকোনার কন্যা সালমা আক্তার মনি। ফিফার নিয়ম, যেকোন রেফারির বয়স হতে হবে কমপক্ষে ২৩ বছর। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার সময় এক বছর কম ছিল সালমা আক্তার মনির।

যে কারণে গত বছর আগস্টে একই সঙ্গে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে আরেক নারী রেফারি জয়া চাকমা ম্যাচ পরিচালনার জন্য ফিফার আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পেলেও, ফের পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছেন মনি। যদিও এবার ঠিক কবে পরীক্ষা হবে তা নিশ্চিত নয়। জুন-জুলাইয়ে হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনায় বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গন লন্ডভন্ড। এ অবস্থায় পরীক্ষাটা কতদূর গিয়ে ঠেকে তা জানেন না কেউ।

ফুটবল মাঠে বাঁশি বাজাতে রেফারিদের ফিটনেস ধরে রাখাটা জরুরি। ফিফার পরীক্ষায় শতভাগ ফিট না হলে উপায় নেই। কিন্তু করোনাকালে কিভাবে ফিটনেস ধরে রাখবেন তারা? ঘরোয়া খেলা পরিচালনার সুযোগ তো নেই, নেই মাঠে নেমে দৌড়ঝাঁপ করারও, পুরোপুরি ঘরবন্দী। তাই বলে দমে যাননি সালমা মনি। ফিটনেস ধরে রাখতে ঘরেই চালিয়ে যাচ্ছেন প্রয়োজনীয় শরীরচর্চা।

‘ফিটনেস ধরে রাখার জন্য ফিফার কিছু গাইডলাইন আছে। কিছু ভিডিও আছে। সেগুলোই বাসায় অনুশীলন করি। ঘরে তো আর জিমের সুবিধা নেই। মেঝেতে মাদুর পেতে চালিয়ে নেই প্রয়োজনীয় শরীরচর্চার কাজ’-নেত্রকোনা থেকে নিজের ফিটনেস ধরে রাখার কৌশলটা জানালেন দেশের অন্যতম প্রধান নারী ফুটবল রেফারি সালমা আক্তার মনি।

নেত্রকোনার এই যুবতী কিভাবে হয়েছেন ফুটবল রেফারি?

নেত্রকোনা আদর্শ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী সালমা আক্তার মনি অ্যাথলেটিকস অনুশীলন শেষ করেই নেমে পড়তেন ফুটবল নিয়ে। ফুটবলের সঙ্গে মনির পরিচয় সেখান থেকেই। ছোটবেলা থেকে ঝোঁক ছিল অ্যাথলেটিকসে, খেলতেন ১০০ ও ২০০ মিটার স্প্রিন্ট, দীর্ঘ লম্ফ ও উচ্চ লম্ফ। ২০১২ সালে জাতীয় জুনিয়র চ্যাম্পিয়নশিপে দীর্ঘ লম্ফে ব্রোঞ্জও জিতেছিলেন তিনি।

অ্যাথলেটিকস-ফুটবলের পাশপাশি হ্যান্ডবলও খেলতেন মনি। ময়মনসিংহ অঞ্চলের হয়ে জাতীয় অনূর্ধ্ব-১৬ হ্যান্ডবল চ্যাম্পিয়নশিপেও অংশ নিয়েছেন। ফুটবলে তার গন্ডিটা ছিল জেলা পর্যায়েই। লেখাপড়ার পাশপাশি ফুটবল রেফারি হওয়ার জন্য যে পরিশ্রম করে যাচ্ছেন মনি।

গত বছর ২৩ আগস্ট দিনটি তার জন্য স্মরণীয়। ওই দিনটিতেই যে প্রথম দুইজন নারী ফিফা রেফারি পেয়েছিল বাংলাদেশের ফুটবল। কিন্তু বয়স কম হওয়ায় স্বীকৃতি পাননি মনি।

অ্যাথলেটিকসে ভালো। রানিং আর ফিটনসে যুতসই দেখেই তার গ্রামের এক ফিফা রেফারি ফেরদৌস আহমেদ পছন্দ করেন সালমা আক্তার মনিকে। একদিন মনিদের বাড়ি গিয়ে তার মায়ের কাছে ফেরদৌস প্রস্তাব দেন তাকে রেফারিং শেখানোর। মনির মা সম্মতি দিলে শুরু হয়ে মনির রেফারিং জগতে পথচলা।

২০১৩ সালে বাফুফে আমাদের নেত্রকোনায় ৭ দিনের একটা রেফারিং কোর্স করেছিল। ছেলেদের সঙ্গে একমাত্র নারী অংশ গ্রহণকারী ছিলেন মনি। বাধা ছিল অনেক। সে বাধা টপকিয়ে অবিচল ছিলেন নিজের ইচ্ছায়। তারপরও কোর্সে হয়েছিলেন তৃতীয়। এভাবে কোর্সের প্রতিটি ধাপ পার হয়ে ২০১৬ সালে জাতীয় রেফারি হন মনি।

অথচ মনি এক পর্যায়ে রেফারি প্রশিক্ষণ ছেড়েই দিয়েছিলেন। ২০১৭ ও ২০১৮ সালে রেফারি প্রশিক্ষণে ছিলেন না। আবার ফিরে এসে ফিফা রেফারি হওয়ার পরীক্ষা দেন। গত বছর দ্বিতীয়বার দিয়ে পাশ করেন সালমা আক্তার মনি।