মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

একতরফা নির্বাচন হলে সংকট নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে

ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। অর্থনীতিবিদ। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর। অধ্যাপনা করছেন বেসরকারি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে। রাজনীতির চলমান পরিস্থিতি ও অর্থনীতিতে এর প্রভাব নিয়ে মতামত ব্যক্ত করেন জাগো নিউজের কাছে। রাজনৈতিক সংকট চলতে থাকলে দেশ ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হতে পারে বলে অভিমত তার। মতামত নিয়ে লিখছেন সায়েম সাবু

ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ: রাজনীতি শুধু অর্থনীতিকেই প্রভাবিত করে না, রাজনীতি দ্বারা সব কিছুই নিয়ন্ত্রিত। রাজনৈতিক জবাবদিহিতা না থাকলে সবকিছুই ভেঙে পড়ে। রাষ্ট্র, সমাজে কোনো কিছুই আর স্বাভাবিকভাবে চলে না।সরকার উন্নয়ন করছে। উন্নয়ন সবাই চায়। কিন্তু জবাবদিহি ছাড়া উন্নয়ন সবার কল্যাণে আসে না। দেশে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে বলে বলা হচ্ছে। কিন্তু বৈষম্য বাড়ছে কেন? দরিদ্রের হার বাড়ছে কেন? মানুষের মধ্যে এত হতাশা কেন? প্রবৃদ্ধি বাড়লেই তাকে আমরা প্রকৃত উন্নয়ন বলতে পারি না। উন্নয়নের সুবিধা কত সংখ্যক মানুষ পাচ্ছে তা আগে বিবেচনায় আনতে হবে।

বলা হচ্ছে, সরকার ব্যবসাবান্ধব। ব্যবসার সুবিধাটা কে পাচ্ছে? মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাচ্ছে কেন? বেতন বাড়ানোর জন্য শ্রমিকরা রাস্তায় নামছে কেন? মরছে কেন? উন্নয়নের সুবিধা তো তাদেরও পাওয়ার কথা। মূলত জবাবদিহিতা না থাকার কারণেই এ বৈষম্য।উন্নয়নের ন্যারিটিভ সরকার দিচ্ছে। অর্থনীতিবিদ, গবেষকরা বারবার এ ন্যারিটিভগুলোর (ধারণা) সমালোচনা করে আসছে। এ ধারণাকে ভাঙতে হবে। সরকারের উন্নয়ন সার্বিক উন্নয়ন নয়।আপনি দেখেন বিশাল বিশাল হাসপাতাল করছে। সেখানে যন্ত্রপাতি নেই। ভালো ডাক্তার নেই। মন্ত্রী, আমলারা সামান্য অসুস্থ হলেই বিদেশে চিকিৎসা নিচ্ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বড় বড় ভবন হচ্ছে। অথচ ভালো শিক্ষক নেই। গবেষণা নেই। তাহলে এ উন্নয়নের মানে কী? সরকার জ্বালানিখাতে বিনিয়োগ করলো। রেন্টাল-কুইক রেন্টাল নিয়ে এখন কী হচ্ছে? কত টাকা গচ্চা গেলো এর হিসাবও তো রাখতে হবে।

হরতাল-অবরোধ কোনোভাবেই সমাধানের পথ নয়। তবে সরকার যে অবস্থান নিয়েছে সেটাও কোনো সমাধান দেবে বলে মনে করি না। সমাঝোতার দরকার। জবাবদিহিতা দরকার। এভাবে চলতে থাকলে সংকট নিরসন করা এক সময় সম্ভব হবে না। এ আন্দোলন অবশ্যই যৌক্তিক। বেতন না বাড়লে শ্রমিকরা চলে কীভাবে। সব পণ্যের দাম বেড়েছে। বেতন না বাড়াতে পারলে কারখানা বন্ধ রাখুক। যারা বেতন দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন, তারা কারখানা চালু রাখবেন।

সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে আমাদের টেকসই অবস্থানে আসা দরকার। ক্ষমতায় কে এলো আর কে গেলো সেটা বিষয় নয়। এ কাঠামো থাকলে ক্ষমতার পরিবর্তন হলেও কোলো লাভ হবে না। প্রতিষ্ঠানগুলোর কাঠামো পরিবর্তন করতে হলে রাজনীতির আমূল পরিবর্তন দরকার।

চলমান রাজনৈতিক সংকট মানুষের মধ্যে উদ্বেগ বাড়িয়ে তুলছে। কী হবে সামনে এমন এক অনিশ্চয়তায় কাটছে সময়। কাঠামোগত উন্নয়ন দেখে সাধারণ মানুষ কোনোভাবেই আশ্বস্ত হতে পারছে না। বরং বাজারে গিয়ে যখন সে ক্রয়ক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে, তখন সে দিশেহারা হয়ে পড়ছে।