শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১

ধর্ম ‘অবমাননা দায়ে জগন্নাথ শিক্ষার্থীর নামে ছাত্রলীগকর্মীর মামলা

নিজস্ব সংবাদদাতা : ফেইসবুক পোস্টে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার হওয়া শিক্ষার্থী তিথি সরকারের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রলীগকর্মী।

বৃহস্পতিবার ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক আস সামছ জগলুল হোসেনের আদালতে মামলাটি করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী আবু মুসা রিফাত।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের বর্তমানে কোনো কমিটি না থাকলেও ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের রিফাত পরবর্তী কমিটিতে পদপ্রত্যাশী।

এই মামলার সাক্ষীদের একজন কোনিক স্বপ্নীলও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী।

মামলার আরজিতে বলা হয়েছে, তিথি সরকার নামের ওই শিক্ষার্থী ইসলাম ধর্মের মূল্যবোধ ও অনুভূতিতে আঘাতের উদ্দেশ্যে ফেইসবুকে বিভিন্ন সময় কটূক্তি ও অবমাননাকর বক্তব্য লিখেছেন।

আদালত রিফাতের জবানবন্দি গ্রহণ করে এ বিষয়ে ৮ ডিসেম্বরের মধ্যে তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দিতে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছে।

রিফাতের আইনজীবী হাবিবুল্লাহ হাবিব এ প্রতিবেদককে বলেন, “বাদীর বক্তব্য রেকর্ড করে রাখা হয়েছে। সব ডকুমেন্ট রেখে পুলিশের সাইবার টিমকে তদন্ত করতে দিয়েছে আদালত।”

মামলার বিষয়ে আবু মুসা রিফাত এ প্রতিবেদককে বলেন, “অনেক দিন ধরে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। আর্থিক সংকটের কারণে এতদিন করা হয়নি, আজকে করলাম।

“যেখানে আমরা প্রত্যেকটা ধর্মকে সম্মান করি সেখানে একজন উগ্র, যার জন্য আমাদের সম্প্রদায়ে দাঙ্গার সৃষ্টি হোক তা আমি কখনও চাইনি।”

তিথি সরকার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ত্রয়োদশ ব্যাচের শিক্ষার্থী, রিফাত একই বিভাগের দশম ব্যাচের শিক্ষার্থী।

“জুনিয়ররা তার সাথে ক্লাস করতে চায় না। এর থেকে বোঝা যায়, সে যে কাজগুলো করতেছে সেগুলা অবশ্যই দুইটা সম্প্রদায়কে আলাদা করছে। সেজন্য সামনে যাতে সে এগুলো না করতে পারে, সে দায়িত্ব নিয়েই কোর্টে গিয়েছি।”

গত ২৪ অক্টোবর তিথি সরকারের বিরুদ্ধে ফেইসবুকে ধর্ম নিয়ে কটূক্তির অভিযোগ তুলে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেছিল একদল শিক্ষার্থী। যেখানে ইসলামিক শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন, আহলে হাদিসের মতো ধর্মভিত্তিক সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে অংশ নিয়েছিলেন ছাত্রদল ও ছাত্রলীগের কর্মীরাও।

এর আগের দিন ২৩ অক্টোবর তিথি ফেইসবুক অ্যাকাউন্ট ‘হ্যাকড’ হয়েছে জানিয়ে ক্ষতির শঙ্কা প্রকাশ করে পল্লবী থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছিলেন।

পরে ২৫ অক্টোবর সকালে পল্লবী থানার উদ্দেশে কালশীর বাসা থেকে বেরিয়ে তিথি আর ফেরেননি বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন তার বড় বোন স্মৃতি সরকার।

তিথি সরকার নিখোঁজ রয়েছেন জানিয়ে ২৭ অক্টোবর থানায় জিডিও করেন তিনি।

মোবাইল বন্ধ থাকায় ধর্ম অবমাননার অভিযোগের বিষয়ে তিথি সরকারের বক্তব্য জানতে পারেনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। তার ফেইসবুক অ্যাকাউন্টও সচল নেই।

তবে তিথি সরকার ‘ধর্ম অবমাননার স্ট্যাটাস দিতে পারে না’ বলে দাবি করেছেন বোন স্মৃতি সরকার।

এদিকে শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে ২৭ অক্টোবর এই শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে।

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে গড়ে ওঠা ডাকসুর সাবেক ভিপি নূরুল হক নূরের সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার দপ্তর সম্পাদক ছিলেন তিথি সরকার।

ধর্ম অবমাননার অভিযোগ ওঠার পর গত ২৩ অক্টোবর এই সংগঠন থেকেও তাকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছিল।

তিথি সরকারকে উদ্ধারে পুলিশ চেষ্টা চালাচ্ছে বলে জানিয়েছেন পল্লবী থানার ওসি কাজী ওয়াজেদ আলী।