শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিদেশি জাতের তরমুজ চাষাবাদ করেছেন উজ্জ্বল টাঙ্গাইলে পরীক্ষামূলকভাবে

টাঙ্গাইলে জহুরুল হক নামের এক ব্যবসায়ী পরীক্ষামূলকভাবে কোরিয়ার সাকেরা, থাইল্যান্ডের ব্লাক বেরী ও ইয়োলো বেরী এবং সৌদি আরবের সাম্মাম জাতের তুরমুজ চাষাবাদ করেছেন। এসব জাতের তরমুজ বার মাস পাওয়া যাওয়া যায়। বাজারে এ জাতের তরমুজের চাহিদা ও ভালো দাম রয়েছে। দেখতে আকর্ষণীয় হওয়ায় প্রতিদিন বিভিন্ন স্থান থেকে এই নতুন জাতের তরমুজ দেখতে তার মাঠে ভিড় করছেন অনেকেই। ফলন ভালো হওয়ায় অধিক লাভের আশা করছেন তিনি। জহুরুল হক সদর উপজেলার বাঘিল ইউনিয়নের ফৈলারঘোনা এলাকার হযরত আলীর ছেলে। পরীক্ষামূলক চাষে তিনি সফল হলে পরবর্তীতে তিনি অধিক জায়গায় তরমুজের চাষ করবেন। এ ব্যাপারে জহুরুল হক বলেন, ঢাকার পুরানা পল্টনে প্রিন্টিং এর ব্যবসা করেন তিনি। ব্যবসার সুবাধে গাজীপুর কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউটে তার যাতায়াত শুরু হয়। যাতায়াতে এক পর্যায়ে সেখান থেকে তিনি বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেন। বর্তমান করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে তার ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। অলস সময়ে সখের বশে তিনি সিদ্ধান্ত নেন গ্রামের বাড়িতে কৃষি চাষাবাদ করবেন। তখন তিনি বিদেশী জাতের তরমুজ চাষ করার সিদ্ধান্ত নেন। সদর ও জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে বিদেশী জাতের তরমুজের বীজ পাননি। তার ঢাকার নবাবপুরের বন্ধু ছোটন কুমার ঘোষ এক্সপোর্ট ও ইমপোর্টের ব্যবসায় করেন।

তার মাধ্যমে বিদেশ থেকে তরমুজের বীজ সংগ্রহ করেছেন। পরে তার বাসার পাশে দুই বিঘা জমিতে তিনি তরমুজের চাষাবাদ করেছেন। ফলনও অনেক ভাল হয়েছে। দুই মাসে গাছ বড় হয়ে তরমুজ ধরতে শুরু করেছে। আগামী তিন সপ্তাহ পর তরমুজ বিক্রি করা যাবে। তরমুজের সাথে তিনি শসা, ইস কোয়াস, চিচিঙ্গা, জিঙ্গা ও ভূট্টার মিশ্র চাষ করেছেন তিনি। তিনি আরও বলেন, ব্লাক বেরী তরমুজের উপরে কালো ও ভিতরে লাল, ইয়োলো বেরী তরমুজের উপরে হলুদ ও ভিতরে লাল এবং সাম্মাম জাতের তরমুজে উপরে গারো হলুদ ভিতরে লাল। প্রতিটি তরমুজ পাঁচ থেকে ছয় কেজি ওজন হবে। বাজারে এর প্রচুর চাহিদা রয়েছে। প্রতিটি তরমুজ পাইকারি ৪০-৫০ টাকা ও খুচরা ৭০-৮০ টাকায় বিক্রি করা যাবে। দুই বিঘা জমিতে তার হাল চাষ, সার, বীজ, শ্রমিক মজুরি সব মিলে ৮০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। দুই বিঘা জমির তরমুজ তিনি প্রায় চার লাখ টাকা বিক্রি করতে পারবে বলে তিনি আশা করছেন। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, জহুরুল হকসহ আরও দুই শ্রমিক তরমুজ গাছ পরিচর্যা করছেন। সারি সারি গাছে তরমুজ ধরেছে অসংখ্য। তরমুজের সাথে শসা, ইস কোয়াস, চিচিঙ্গা, জিঙ্গা ও খেতের চতুরপাশ দিয়ে ভূট্টার চাষ করেছেন তিনি। ভূট্টার জাতটিও বিদেশি। পোকা মাকড় ধমনের জন্য বাগানের বিভিন্ন স্থানে বিশটি সেক্স ফেরোমন ফাঁদ বসানো আছে।

জহুরুল ইসলাম বলেন, অনেকটা সখের বশে পরীক্ষামূলকভাবে এই তরমুজ চাষ শুরু করি। বাড়ি পাশে দুই বিঘা জমি লিজ নিয়ে কোরিয়ার সাকেরা, থাইল্যান্ডের ব্লাক বেরী ও ইয়োলো বেরী এবং সৌদিআরবের সাম্মাম জাতের তরমুজ চাষ শুরু করি। চারা রোপণের দুই মাসের বেশি সময়ে প্রতিটি গাছে ফল ধরতে শুরু করেছে। জ্যৈষ্ঠের শুরুতেই তরমুজ বাজারে তোলা যাবে। এলাকায় নতুন হওয়ায় এই জাতের তরমুজ চাষে বেশ সাড়া পেয়েছি। আগামীতে আরও ব্যাপকভাবে এই জাতের তরমুজ চাষের ইচ্ছা আছে। আল্লাহর রহমতে এতে করে আমার ভালোই লাভ থাকবে। এ ব্যাপারে সদর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মুহাম্মদ আরিফ বলেন, সদর উপজেলার বিচ্ছিন্নভাবে এক একর জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছে। কৃষি অফিসের নিয়োগকৃত উপ-সহকারীরা প্রতি সপ্তাহের একবার গিয়ে কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছেন।