শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ভূ-রাজনীতির উদ্যোগে ঢাকাকে পাশে চায় দিল্লি

আজকের দেশবার্তা রিপোর্টঃ বৈশ্বিক পটভূমিতে দ্রুত পরিবর্তনশীল ভূ-রাজনীতির প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের নতুন দিক উন্মোচন করার উদ্দ্যেশে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রীংলা ঢাকা সফর করেছেন বলে মনে করেন সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ও নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র ফেলো মোহাম্মাদ শহীদুল হক।

গণমাধ্যমে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘শক্তির ভারসাম্য পশ্চিমা বিশ্ব থেকে এশিয়ার দিকে ঝুঁকে পড়েছে এবং এর ফলে এশিয়াতে যে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে সেটিকে আরও ঘনীভূত করেছে কোভিড-১৯। এই টেনশন স্বাভাবিক অবস্থায় তৈরি হলে সবদেশ মিলে এটিকে কমানোর জন্য সফল উদ্যোগ নিতে পারতো। কিন্তু এই মহামারি পরিস্থিতিতে সেটি সম্ভব নয়।’

এই টেনশন কমানোর জন্য এশিয়ার একটি বড় শক্তি হিসাবে ভারত উদ্যোগ নিয়েছে এবং একজন বন্ধু হিসাবে তারা ঢাকাকে পাশে চাইবে—এটি খুব স্বাভাবিক বলে মনে করেন সাত বছর ধরে পররাষ্ট্র সচিব হিসাবে দায়িত্ব পালনকারী শহীদুল।

ভারত শুধু এ বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে যোগাযোগ করছে বিষয়টি সেরকম নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ’তারা আঞ্চলিক ও অন্যান্য দেশের সঙ্গেও এ বিষয়ে নিবিড়ভাবে যোগাযোগ রাখছে বলে আমি মনে করি।’

ভূ-রাজনীতির খেলায় সব দেশের উদ্দেশ্য হচ্ছে নিজের স্বার্থ সংরক্ষণ করা এবং এ বিষয়ে বাংলাদেশের বেশি মনোযোগ দেওয়া উচিৎ বলে মনে করে শহীদুল বলেন, ‘এখন সবার খুঁজে বের করতে সর্ব্বোচ্চ সুযোগ কীভাবে অর্জন করা যায়।’

হঠাৎ কেন সফর

এ বিষয়ে তিনি বলেন, ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের সফর কোনও প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হয়েছে সেটির থেকে বেশি জরুরি তার ফলাফল কী। এক্ষেত্রে দুই পররাষ্ট্র সচিবই বলেছেন, সফর সফল হয়েছে। শহীদুল বলেন, ’ঢাকঢোল পিটিয়ে সবাইকে জানিয়ে পররাষ্ট্র সচিব সফর করার পরে অসন্তোষজনক ফলাফলের থেকে এধরনের সফরে সন্তোষজনক ফলাফল ভালো।’

তিনি আরও বলেন, ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের ঢাকা সফর একটি বার্তা দিচ্ছে সামনের দিনগুলোতে দুদেশের সম্পর্ককে তারা কীভাবে দেখতে চায়। আমার ধারণা পররাষ্ট্র মন্ত্রী পর্যায়ের যে বৈঠক খুব শিগগিরই হবে বলে যে সিদ্ধান্ত হয়েছে এটাকে তার প্রস্তুতি হিসাবে দেখা যেতে পারে।

পররাষ্ট্র সচিব হিসাবে নিজের অভিজ্ঞতা থেকে তিনি বলেন,  ‘আমাকে যখন কোনও দেশে পাঠানো হতো তখন আমি একটি বার্তা নিয়ে যেতাম এবং ওইদেশ থেকে একটি বার্তা নিয়ে আসতাম। এর ওপর ভিত্তি করে ভবিষ্যৎ সম্পর্ক বিষয়ে দুদেশ একত্রে কাজ করতো।’

তিনি বলেন, ‘আমি নিশ্চিত ভারতের পররাষ্ট্র সচিব যেমন একটি বার্তা নিয়ে এসেছেন তেমনি একটি বার্তা নিয়ে গেছেন যা তিনি দিল্লির নীতিনির্ধারকদের জানাবেন ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা ঠিক করার জন্য।’

দরকারি সম্পর্ক

বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক একে অপরের সম্পূরক হিসাবে দেখা যেতে পারে বলে মন্তব্য করেন সাবেক সচিব। তিনি বলেন, ‘দুদেশের একে অপরকে দরকার আছে এবং এই সম্পর্কের ভিত্তি তৈরি করেছেন বঙ্গবন্ধু, ১৯৭২ সালে। পরবর্তীতে অন্য সরকারের সময়ে সম্পর্ক উঠা-নামা করেছে কিন্তু শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে সম্পর্ক ক্রমান্বয়ে ভালো হয়েছে, একটি বিশেষ উচ্চতায় উন্নীত হয়েছে। ২০১৯ সালে এ সম্পর্ককে দুদেশের প্রধানমন্ত্রী ‘বিয়ন্ড স্ট্র্যাটেজিক রিলেশন্স’ হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন।’ দুদেশের সুসম্পর্ক ধরে রাখার কারণে উভয় দেশের জনগণ লাভবান হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন,  ‘এই প্রেক্ষাপটে এ সফরকে বিবেচনা করতে হবে।’