শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

যেভাবে দিন কাটছে সেই ইমরান এইচ সরকারের

আজকের দেশবার্তা রিপোর্টঃ ২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি। শাহবাগে জ্বলে ওঠে প্রতিবাদের স্ফুলিঙ্গ। মানবতাবিরোধী অপরাধে দায়ী কাদের মোল্লার রায়কে ঘিরে সরব হয় শাহবাগ। তরুণ প্রজন্মের পাশাপাশি জেগে ওঠে দেশের আপামর জনতা। শাহবাগ চত্বরে গড়ে ওঠে গণজাগরণ মঞ্চ। আরব বসন্তের আদলে এ স্ফুলিঙ্গের নাম দেওয়া হয় বাংলা বসন্ত। মঞ্চের মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করেন ডা. ইমরান এইচ সরকার।

পরে বিভক্তি ও দ্বন্দ্বের কারণে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে গণজাগরণ মঞ্চ। তবে শাহবাগে সেই তুমুল আন্দোলনের ফলে গতি এসেছিল মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্তদের বিচারে। শীর্ষ অপরাধীদের বিচার অনেক দূর এগোলেও এখনো শেষ হয়নি।

শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করে ব্যাপক আলোচনায় আসেন ডা. ইমরান এইচ সরকার। পরে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠন এবং আধিপত্যের দ্বন্দ্বে বিভক্ত হয় মঞ্চ। অনেকে মঞ্চ ছেড়ে গেলেও একে আগলে বিভিন্ন প্রতিবাদী কর্মসূচি অব্যাহত রাখেন ইমরান এইচ সরকার।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রৌমারী-রাজীবপুর ও চিলমারীর কুড়িগ্রাম-৪ আসনে সংসদ সদস্য পদে নির্বাচনে অংশ নিয়ে হেরে যান ইমরান। অভিযোগ তোলেন কারচুপির। নির্বাচনে হারার পর তাঁকে আর প্রকাশ্যে দেখা যায়নি। অনলাইন বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিছুটা সরব থাকলেও প্রকাশ্যে মাঠে নেই তিনি।

কুড়িগ্রামের সন্তান ইমরান এইচ সরকার পেশায় ডাক্তার। অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ও ব্লগার। সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের মেয়ের সঙ্গে বিয়ের পর তা টেকেনি। বর্তমানে অনেকটা আড়ালে ইমরান এইচ সরকার।

অবশ্য তিনি জানান, প্রকাশ্যে না এলেও তাঁর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ঠিকই চলছে। করোনা মহামারিতে জনসেবায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। পেশায় চিকিৎসক হওয়ায় করোনার এই সময়ে চিকিৎসাসেবা নিয়ে মানুষের দুয়ারে দুয়ারে যাচ্ছেন। টেলিমেডিসিন কার্যক্রমে পরিচিতজনদের চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন।

‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশ বিনির্মাণে বিচারহীনতার সংস্কৃতি দূর করে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় তরুণরা রাস্তায় নেমেছিল, এখনো আমরা সেই আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ পাইনি,’ বললেন ইমরান এইচ সরকার। 

তিনি বলেন, ‘আমি রাজনৈতিক কার্যক্রমের মধ্যেই আছি, মাঠে মিছিল-সমাবেশ করছি না বটে। স্বাস্থ্যকর্মী হওয়ায় দায়বদ্ধতা একটু বেশি। আমার সামগ্রিক কার্যক্রমই রাজনীতির অংশ। প্রতিদিন যে অন্যায় হচ্ছে, তা  নিয়ে সোচ্চার আছি। অনলাইনে লিখছি। একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে মানুষের অধিকারের পক্ষে প্রতিনিয়ত লড়াই করছি।’ 

অবসরে কী করেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘লেখালেখি করি। ব্লগে লিখি। আন্তর্জাতিক কিছু গণমাধ্যমেও লিখছি। এ ছাড়া মেডিক্যাল রিসার্চ নিয়ে কাজ করছি। মেডিক্যাল ফ্রিল্যান্সিং নিয়েও কিছু কাজ করছি। টেকনিক্যাল জ্ঞান কাজে লাগিয়ে রুটি-রুজির গবেষণার কাজও করছি। আর আমার নিজস্ব টেলিমেডিসিনসেবা চালু রেখেছি। পরিচিত কেউ অসুস্থ হলে তাঁকে সহযোগিতা করছি, মানসিক সাহস জোগাচ্ছি।’

একটু থেমে আবার যোগ করেন, ‘এর বাইরে বর্তমান করোনাকালে যেহেতু বাসায় আছি, রান্নায় সহযোগিতা করি। বাসায় মা-বাবা, ভাই-বোন আছে। সবাইকে নিয়ে আনন্দে থাকার চেষ্টা করছি।’

করোনাকালে নিজের কার্যক্রম সম্পর্কে ইমরান এইচ সরকার বলেন, “করোনার এই সময়ে একজন চিকিৎসক হিসেবে মনে করি, মাঠে গিয়ে সভা-সমাবেশ করার সময় এখন নয়। শুরুতে বেশ কিছু কর্মসূচি হাতে নিয়েছিলাম। ত্রাণ কার্যক্রম, আর্থিক বা খাবার দিয়ে সহযোগিতা করা। এর সঙ্গে মেডিক্যাল সাপোর্ট দিতে কাজ করেছি। ‘জীবন বাঁচাতে প্রতিভা’—এই নামে আলাদা টিম করে আমরা কাজ করেছি। করোনার শুরুতে মেডিক্যাল টিম নিয়ে নেমে পড়ি ঢাকার রাস্তায়।” 

মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের দাবিতে যে আন্দোলন হয়েছিল, সেটিকে এখন কিভাবে দেখছেন, প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘সামগ্রিকভাবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বৈষম্যমুক্ত একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যেই আমাদের আন্দোলনের সূত্রপাত। অসাম্প্রদায়িক সমাজ গঠনে প্রয়োজন আইনের শাসন। আর আইনের শাসনের জন্য যুদ্ধাপরাধের বিচারটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। মুক্তিযুদ্ধ মানে সামগ্রিক একটা বিষয়। ২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি যখন শাহবাগে দাঁড়াই, সেই থেকে বলে আসছি, যুদ্ধাপরাধের বিচার হলো, কিন্তু হত্যা-ধর্ষণের বিচার হলো না, তাহলে কোনো লাভ হলো না।’

বিচারপ্রক্রিয়া সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমরা বলেছিলাম যুদ্ধাপরাধের বিচার যেমন করতে হবে, একইভাবে চলমান অন্যায়ে বিচারহীনতার সংস্কৃতি যেন তৈরি না হয়, তা-ও বন্ধ করতে হবে। এ আশায়ই যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবি নিয়ে রাস্তায় নেমেছিলাম। যুদ্ধাপরাধ বিচারের অনেকটা পূরণ হয়েছে। কয়েকজনের ফাঁসি হয়েছে। আরো অনেক মানবতাবিরোধীর বিচার চলছে। এই বিচার কোনোভাবে বাধাগ্রস্ত হলে তরুণরা আবারও প্রতিবাদ করবে। চুপ থাকব না। আমাদের আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ এখনো পাইনি আমরা।’