শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

২০ বছরেও হয়নি পদ-পদবির পরিবর্তন

নিজস্ব সংবাদদাতা : জেলা প্রশাসক (ডিসি), উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীদের পদবি পরিবর্তন হয়নি কুড়ি বছরেও। ২০০১ সাল থেকে পদবি পরিবর্তন ও বেতন স্কেল সমন্বয় করার দাবি জানিয়ে আসছে বাংলাদেশ কালেক্টরেট সহকারী সমিতি (বাকাসস)।

দাবি বাস্তবায়নে কর্মবিরতি থেকে শুরু করে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। কিন্তু সংশ্লিষ্টদের সাড়া মেলেনি। ৮ বছর আগে ২০১১ সালে পদ-পদবি পরিবর্তন সংক্রান্ত সার-সংক্ষেপে প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দিলেও তা আজও আলোর মুখ দেখেনি।

এমন অবস্থায় দাবি আদায়ে চলতি মাস জুড়ে বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বাকাসস। এর মধ্যে দাবি পূরণ না হলে আগামী ৫ ডিসেম্বর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে সংগঠনটি।

জানা যায়, বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়, ডিসি অফিস, ইউএনও অফিস এবং সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয়ে কর্মরত ১১ থেকে ১৬ (দ্বিতীয় ও তৃতীয়) গ্রেডের কর্মচারীর পদ-পদবি সচিবালয়ের আদলে পরিবর্তনের দাবি দীর্ঘদিনের। একইসঙ্গে বেতন গ্রেড উন্নীতকরণের দাবি জানিয়ে আসছেন তারা। বাংলাদেশ কালেক্টরেট সহকারী সমিতি (বাকাসস) ব্যানারে ২০০১ সাল থেকে আন্দোলন করে আসছেন ভুক্তভোগীরা।

এই সময়ের মধ্যে একাধিক বার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটির মাধ্যমে আশ্বাস দিলেও এখনও তা বাস্তবায়ন হয়নি বলে অভিযোগ আন্দোলনকারীদের। তাদের মতে, পদ-পদবি ও বেতন স্কেল সমন্বয় সংক্রান্ত প্রস্তাবের সার সংক্ষেপে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ২০১১ সালের ১৯ জুন অনুমোদন দেন। এরপর তা বাস্তবায়নের জন্য ২০১৩ সালের ৩ জুলাই সুপারিশ করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।

একই বছরের ডিসি সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ডিসিদের মুক্ত আলোচনায় বিষয়টি উপস্থাপন করা হলে ২ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এটি বাস্তবায়নে ২০১৪ সালের ১৭ জুন চিঠি দেয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। ২০১৮ সালে ২৩ এপ্রিল প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়।

একই বছরে ডিসি সম্মেলনের মাধ্যমে মাঠ প্রশাসনে কর্মরত কর্মচারীদের বেতন গ্রেড অনুযায়ী প্রতিটি পদের নাম পরিবর্তন, অথবা মাঠ প্রশাসনে কর্মরত ৩য় শ্রেণির কর্মচারীদেরকে সচিবালয়ের কর্মচারীদের ন্যায় পদোন্নতির বিষয়টি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কার্যবিবরণীতে স্বল্পমেয়াদি ১নং ক্রমিকে ও মধ্যমেয়াদি ১নং ক্রমিকে লিপিবদ্ধ করা হয়, যা বাস্তবায়নে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করা হয়। কিন্তু বাস্তবে এখন পর্যন্ত এর কোনো ফল পাওয়া যায়নি।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ কালেক্টরেট সহকারী সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি আকবর হোসেন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। বাংলাদেশের সব সেক্টরই এগিয়ে যাচ্ছে। উন্নয়ন বাস্তবায়ন ও গতিশীল রাখতে তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীদের একটি ভূমিকা রয়েছে। কিন্তু অন্যান্য দফতরের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীদের পদ-পদবি ও গ্রেড উন্নীত হলেও বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সহকারী কমিশনার ভূমি কার্যালয়ের কর্মরত তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীদের পদ-পদবি ও বেতন গ্রেড উন্নীত হয়নি। তাই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দাবি বাস্তবায়ন না হলে আন্দোলন ছাড়া আমাদের সামনে বিকল্প আর কিছুই নেই।’

কর্মসূচির বিস্তারিত তুলে ধরে আকবর হোসেন বলেন, ৩০ অক্টোবর থেকে ৭ নভেম্বর পর্যন্ত কর্মসূচি বাস্তবায়নে বিভিন্ন জেলায় সাংগঠনিক সফর। ৮ ও ৯ নভেম্বর ডিসির মাধ্যমে স্ব-স্ব অফিস প্রধান ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কর্মসূচির বিষয়ে অবহিতকরণ। ১৫ থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত হাজিরা খাতায় সই করে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি এবং অফিস চত্বরে ব্যানারসহ অবস্থান গ্রহণ। এর মধ্যে দাবি আদায় না হলে ৫ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে ১০টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করা হবে। ওই সমাবেশ থেকে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা দেয়া হবে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) মো. আলী কদর বলেন, মাঠপর্যায়ের কর্মচারীদের পদ-পদবি পরিবর্তন ও বেতন-ভাতা উন্নীতকরণসহ নানা ধরনের দাবি রয়েছে। ইতোমধ্যে তাদের পদোন্নতির পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। প্রশাসনিক কর্মকর্তার পদ বাড়ানো হয়েছে, যা শিগগিরই প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটিতে অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। তাদের বেতন-ভাতা সমন্বয়ের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। অনুমোদনের জন্য অর্থ বিভাগে পাঠানো হয়েছে। পদ-পদবি পরিবর্তনের বিষয়টি পর্যালোচনা চলছে।