শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

এবার মাস্ক দিয়ে সাজলো পূজা মণ্ডপ

নিজস্ব সংবাদদাতা : করোনার এই মহামারীর ভয়াবহতা না কাটলেও মানুষের মধ্যে মাস্ক ব্যবহারে উদাসীনতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আর এই উদাসীনতা কাটিয়ে মানুষকে সচেতন করতে অভিনব কায়দায় সাজানো হয়েছে নারায়ণগঞ্জের একটি পূজা মণ্ডপ।

এরই মধ্যে ২২ অক্টোবর বৃহস্পতিবার শুরু হতে যাচ্ছে সনাতনী ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা।

করোনা মহামারীতেই দেবী দুর্গার বোধন ও অধিবাসের মধ্যে দিয়ে শুরু হতে যাচ্ছে শারদীয় দুর্গোৎসব। আর এ সময় দর্শনার্থীদের জন্য অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক। এ মাস্কে ঘিরেই নারায়ণগঞ্জ শহরের নিতাইগঞ্জ এলাকায় ‘বলদেব জিউর আখড়া শিব মন্দির’ দুর্গাপূজা মণ্ডপ।

২১ অক্টোবর বুধবার বিকেলে সরেজমিনে মণ্ডপটিতে গিয়ে দেখা গেছে, ‘পূজা মণ্ডপ সাজানোর শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলছে। এখন চলছে প্রতিমার সাজসজ্জার কাজ।

পূজা মণ্ডপের মধ্যের অংশে মাস্ক ও স্যানেটাইজার বোতল দিয়ে সাজানো হয়েছে। সিলিংয়ে সারিবদ্ধ ভাবে কয়েক হাজার মাস্ক ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়াও মণ্ডপের দুই পাশে মাস্ক ব্যবহৃত দেবী দুর্গার প্রতিকৃতি স্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি প্রতিকৃতি ছিল নার্সের সাদা পোশাকে, অন্য প্রতিকৃতিটি ছিল বাংলাদেশের প্রতীক হিসেবে লাল সবুজ শাড়িতে। আর এসব প্রতিকৃতিগুলো ছিল নার্সের সাদা দুই প্রতিকৃতিতে দেবী দুর্গা সিরিঞ্জ হাতে করোনা ভাইরাস আকৃতির অসুর বধ করছেন।

এছাড়া মণ্ডপের বাইরে সচেতনতামূলক আলোকচিত্র প্রদর্শনী করা হয়েছে। একেকটি আলোকচিত্রতে বিভিন্ন সামাজিক সচেতনতা মূলক লেখা রয়েছে।

বলদেব জিউর আখড়া শিব মন্দির দুর্গাপূজা কমিটির সভাপতি জয় কে রায় বাপ্পী বলেন, করোনার এই পরিস্থিতিতে মাস্ক ব্যবহার না করা শুধু ভুলই নয়, বরং একটি সামাজিক অপরাধ বলা যায়। কেউ পূজা দেখতে এসে যদি মাস্ক আনতে ভুলে যান তাহলে মণ্ডপের এই সাজসজ্জা তাকে মনে করিয়ে দিবে যে মাস্ক পরতে হবে। এতে করে করোনা সংক্রমণ রোধ করা যাবে। আমাদের আর মাস্ক ছাড়া কেউ মণ্ডপে প্রবেশ করতে পারবেন না। তবে যারা মাস্ক আনবে না তাদের মধ্যে আমরা বিনামূল্যে মাস্ক বিতরণ করবো। এ চিন্তাধারা থেকেই এবার মাস্ক দিয়ে মণ্ডপ সাজানো হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, সরকারি ভাবে ঘোষণা রয়েছে পূজা মণ্ডপে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করা। এজন্য আমরা মণ্ডপের সামনে জীবাণুনাশক স্প্রে করার ব্যবস্থা করবো। কোনোভাবে যেনো ভিড় না হয় সেজন্য স্বেচ্ছাসেবক কাজ করবে। মণ্ডপে কোনো সাউন্ড বা অতিরিক্ত আলোকসজ্জা করা হবে না। এ বছর আমরা দুর্গাপূজা করবো কিন্তু জাঁকজমকপূর্ণ উৎসব করবো না।

প্রতিমা সাজসজ্জার কারিগর জগদীশ পাল বলেন, প্রতিমার শাড়ি পরানোর কাজ শেষ। এখন অলংকার ও অন্যান্য সাজসজ্জা করা হচ্ছে। আজ রাতেই সব কাজ শেষ হয়ে যাবে।

মন্দিরের পূজারী অজয় চক্রবর্তী বলেন, বৃহস্পতিবার মহাষষ্ঠীর দিন মায়ের বোধন ও অধিবাসের মধ্যে দিয়ে দুর্গাপূজা শুরু হবে। তবে এ পৃথিবী যেনো করোনা মুক্ত হয় এটাই মায়ের কাছে প্রার্থনা। এ মণ্ডপে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পুষ্পাঞ্জলি দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আর ২৬ অক্টোবর দেবী দুর্গার বিসর্জনের মধ্যে দিয়ে সমাপ্ত হবে।

এদিকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পূজার আয়োজন করতে জেলা প্রশাসনের সভায় পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এবার সাউন্ড ও আলোকসজ্জা করা যাবে না। ২৫ জনের বেশি যেন মণ্ডপে ভিড় না হয়।

নারায়ণগঞ্জ সিভিল সার্জন ডা. মুহাম্মদ ইমতিয়াজ বলেন, ধর্মীয় কাজ যেহেতু একেবারে বন্ধ রাখা সম্ভব না। ফলে মানুষকে সচেতনতার সাথে নিরাপত্তা নিশ্চিত করে ধর্মীয় কাজ পালন করতে হবে। ফলে বলদেব জিউর আখড়া শিব মন্দির পূজা মণ্ডপের এমন ব্যতিক্রম আয়োজনের জন্য আমি তাদের অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জানাই। তাদের কাছ থেকে শিক্ষা নেয়ার জন্য অন্য পূজা মণ্ডপের নেতাদের বলবো। কারণ আমাদের স্বাস্থ্যটাই সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ।