শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

তিতাসের পাইপলাইনে লিকেজের তিন কারণ

নিজস্ব সংবাদদাতা : ঢাকা এবং ময়মনসিংহে মোট ১৩ হাজার ১৩৮ কিলোমিটার পাইপলাইনের মাধ্যমে বিতরণ কোম্পানি তিতাস গ্যাস সরবরাহ করে থাকে। এসব পাইপলাইনের মেয়াদ এরই মধ্যে শেষ হয়ে গেছে। মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় এসব পাইপলাইনে হাজারও লিকেজ সৃষ্টি হয়েছে। আর  লিকেজ দিয়ে গ্যাস বের হওয়ার কারণে তৈরি হচ্ছে মারাত্মক দুর্ঘটনার ঝুঁকি। 

তিতাস গ্যাস বিতরণ কোম্পানির সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তিনটি কারণে গ্যাসের পাইপলাইনে লিকেজ হচ্ছে। বিশেষ করে অতি পুরনো পাইপলাইন, পাইপলাইনে সঠিকভাবে জং প্রতিরোধী আবরণ না দেওয়া এবং মানহীন পাইপ দিয়ে লাইন নির্মাণের কারণেই লিকেজ হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, দুর্ঘটনা থেকে পরিত্রাণের জন্য যে প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে তা কেবল পেট্রোবাংলা আর তিতাসের মধ্যেই ঘুরপাক খাচ্ছে।

জানা গেছে, তিতাস গ্যাস বিতরণ কোম্পানি ১৯৬৮ সাল থেকে গ্যাস বিতরণ করে আসছে। তবে ৮০ এবং ৯০-এর দশকে এসে পাইপলাইনের ব্যাপক সম্প্রসারণ হয়েছে। ২০০০ সালের পর থেকে লাইনের সম্প্রসারণ অনেকটা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আর ২০১০ সালের পর থেকে তিতাসে নতুন পাইপলাইন খুব একটা বসানো হচ্ছে না বললেই চলে।

বিতরণ কোম্পানির ওয়েবসাইটে উল্লেখ রয়েছে, ১৯৬৭-৬৮ সালে ডেমরা থেকে তেজগাঁও পর্যন্ত ১২ ইঞ্চি এবং ডেমরা থেকে পোস্তগোলা পর্যন্ত ১৪ ইঞ্চি ও ১০ ইঞ্চি ব্যাসের পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়। এরপর সেখান থেকে দুই ইঞ্চি থেকে ছয় ইঞ্চি ব্যাসের বিতরণ নেটওয়ার্ক স্থাপন করে গ্রাহকদের গ্যাস সংযোগ দেওয়া হয়। ৯০ দশকের প্রথম ভাগ পর্যন্ত ঢাকা শহরের বিভিন্ন অংশে ৫০ পিএসআই চাপের বিভিন্ন ব্যাসের বিতরণ লাইন নির্মাণ করা হয়।

অর্থাৎ বিতরণ কোম্পানিটির এই হিসাবে বলছে, তাদের সব পাইপলাইনের মেয়াদই প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। ফলে পুরনো পাইপলাইন সরিয়ে এখন নতুন পাইপলাইন বসানো জরুরি হয়ে পড়েছে। তবে সরকার আবাসিক গ্যাস সংযোগ বন্ধ রাখায় এই খাতে নতুন করে অর্থায়নে খুব একটা আগ্রহ নেই কোম্পানির। একই কারণে নতুন পাইপলাইন প্রতিস্থাপন প্রকল্পেরও গতি নেই।

তিতাসের এক  ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে জানান, পাইপলাইনের এই লিকেজের কারণ মূলত দুইটি। এক. পাইপগুলো মাটির নিচে দেওয়ার সময় এক ধরনের জং নিরোধক কালো প্লাস্টিক দিয়ে মুড়িয়ে দিতে হয়। আনাড়ি অথবা অনেক সময় ইচ্ছা করে কেউ যদি সেটি দিয়ে না মুড়িয়ে মাটির নিচে স্থাপন করে তাহলে পাইপে জং ধরে লিকেজ হতে পারে।  দুই. পাইপের মানের ওপরেও অনেক সময় লিকেজ হওয়ার বিষয়টি নির্ভর করে। তিনি জানান, তিতাস মূলত চীন থেকে পাইপ কিনে আনে। চীনের পাইপ অন্য দেশের তুলনায় সস্তা। তবে অনেক ক্ষেত্রেই এর মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। এরপর অন্য দেশ বিশেষ করে কোরিয়া থেকে আমদানির চিন্তা করা হলেও পরবর্তীতে দাম বেশি বলে আর বিষয়টি এগোয়নি। তবে বেশিরভাগ পাইপ মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার কারণে যে লিকেজ হচ্ছে, তা উল্লেখ করেননি এই কর্মকর্তা।

পুরনো পাইপলাইন বদল করে নতুন লাইন বসানোর যে পরিকল্পনা, সেটার কী হলো? জানতে চাইলে এই কর্মকর্তা জানান, ডিপিপিতেই আটকে আছে প্রকল্পটি। প্রায় দুই বছর ধরেই ফাইল নাড়াচাড়া হচ্ছে, কিন্তু আসল কাজ হচ্ছে না।

তিতাস কোম্পানির সূত্র বলছে, পাইপলাইন প্রতিস্থাপনে তিতাস এক হাজার ৪০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে, যা দিয়ে অতি পুরনো পাইপলাইন প্রতিস্থাপন করা হবে। যদিও এই প্রকল্পের প্রস্তাবনাটি এখনও জ্বালানি মন্ত্রণালয়েই পর্যন্ত পৌঁছায়নি। গত বছরের শুরু থেকেই এই প্রকল্প নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। কিন্তু প্রকল্পটি এখনও আলোর মুখ দেখেনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পেট্রোবাংলার পরিচালক (পরিকল্পনা) আইয়ুব খান বলেন, ‘ডিপিপি (ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রপোজাল) পুনঃসংশোধনের জন্য তিতাসে আবারও পাঠানো হয়েছে। খুব শিগগিরই তিতাস পেট্রোবাংলায় জমা দেবে এবং আমরা দ্রুত মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে তিতাসকে কাজের নির্দেশ দেবো।’ চলতি বছরের শেষ নাগাদ কাজ শুরু করা যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আলী মামুন বলেন, ‘প্রকল্পটি সংশোধন করে তিতাসের বোর্ডে অনুমোদন করা হয়েছে। প্রকল্পটিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নীতিগতভাবে অনুমোদন দিয়েছেন। শিগগিরই অনুমোদনের জন্য আবারও পেট্রোবাংলায় পাঠানো হবে।’

প্রসঙ্গত, তিতাসের মোট পাইপলাইন রয়েছে ১২ হাজার ২৫৩ কিলোমিটার। গ্রাহক সংখ্যা আছে ২০ লাখেরও বেশি। মোট পাইপলাইনের মধ্যে ঢাকায় রয়েছে সাত হাজার কিলোমিটার। এছাড়া ঢাকার আশেপাশে অর্থাৎ নরসিংদী, মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, শেরপুর, জামালপুর এবং কিশোরগঞ্জেও  তিতাসের পাইপলাইন আছে।