বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

প্রথম ৯০ দিনে ১ লাখ,পরের ১৫ দিনেই ১ লাখ, ২ লাখ ছাড়ালো করোনায় মৃত্যু

মহামারি করোনায় মৃতের সংখ্যা দুই লাখ ছাড়িয়ে গেছে। এ ভাইরাসে বিশ্বের মোট মৃতের সংখ্যা এখন দুই লাখ এক হাজার ৫০৮। গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছে চার হাজার ৪০৯ জন। এসময় নতুন করে আক্রান্ত হয়েছে ৬২ হাজার ২৪৭ জন। করোনাভাইরাসের সর্বশেষ পরিসংখ্যান জানার অন্যতম ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য অনুযায়ী, শনিবার (২৫ এপ্রিল) রাত ১টা পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত হয়েছেন বিশ্বের ২৮ লাখ ৯১ হাজার ৭৩ জন। এদের মধ্যে বর্তমানে ১৮ লাখ ৬৪ হাজার ৫৩৪ জন চিকিৎসাধীন এবং ৫৮ হাজার ১৩৩ জন আশঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছেন। আক্রান্তদের মধ্যে ৮ লাখ ২৫ হাজার ৩২জন সুস্থ হয়েছেন। আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, করোনায় প্রথম মৃত্যুর পর ৫০ হাজার ছাড়াতে সময় লেগেছিল ৮২ দিন। এক লাখ মানুষ মারা যেতে সময় লেগেছে ৯০ দিন। আর গত ১৫ দিনে বিশ্বজুড়ে মারা গেছেন আরও এক লাখ মানুষ। এপ্রিলে গড়ে প্রতিদিন মারা যাচ্ছে ৬ হাজারের বেশি মানুষ। সব মিলে করোনা কেড়ে নিয়েছে দুই লাখ মানুষের প্রাণ। যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয় বলছে, বিশ্বজুড়ে ১৮৫টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়েছে করোনাভাইরাস। আজ মধ্যরাতে মৃতের সংখ্যা দুই লাখ ছাড়িয়ে যায়। বাংলাদেশ সময় রাত ১২টার দিকে এই সংখ্যা ছিল দুই লাখ ৬৯৮। আজ রাত পৌনে ১২টা পর্যন্ত ২৮ লাখ ৬৫ হাজারের বেশি মানুষের শরীরে খুঁজে পাওয়া গেছে ভাইরাসটি।এর মধ্যে ৮ লাখ মানুষ সুস্থ হয়েছেন।

করোনায় মৃত্যুর তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত ১১ জানুয়ারি করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রথম মৃত্যুর ঘোষণা দেয় চীন। ভাইরাসটি ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই আক্রান্ত ও মৃত্যু বাড়তে থাকে। ১৯ মার্চ প্রথম দিনে এক হাজার ছাড়ায় মৃত্যু। ওই দিন মারা যায় ১ হাজার ৭৯ জন। এপ্রিলে এসে ভয়াবহ রূপ নেয় করোনা। ২ এপ্রিল প্রথমবারের মতো এক দিনে ৫ হাজার ছাড়ায় মৃত্যু। আর ১০ এপ্রিল ছাড়িয়ে যায় ১০ হাজার। ১১ জানুয়ারি প্রথম মৃত্যুর পর ২ এপ্রিল ৫০ হাজার ছাড়ায় করোনায় মুত্যু। এরপর ১০ এপ্রিল এটি ছাড়িয়ে যায় ১ লাখ। আর ১৭ এপ্রিল এসে দেড় লাখ ও ২৫ এপ্রিল ছাড়িয়ে যায় দুই লাখ।করোনা প্রতিরোধে প্রায় ৩০০ কোটি মানুষ ঘরবন্দী।তবুও কমছে না করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। করোনায় আক্রান্ত প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ ইউরোপ আমেরিকার। করোনা মার্চের মাঝামাঝি সময় থেকেই বিধ্বংসী রূপ ধারণ করে ইউরোপ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। মৃত্যুর হার তখন থেকেই বাড়তে শুরু করে। যার ধারাবাহিকতায় শেষ দুই সপ্তাহেই মৃত্যুবরণ করেছে ১ লাখ মানুষ। শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই আছে আক্রান্তের ৩২ শতাংশ মানুষ। মৃত্যুর দিকে থেকেও শীর্ষে আছে যুক্তরাষ্ট্র। মোট মৃত্যুর ২৫ শতাংশ মানুষ যুক্তরাষ্ট্রের। দেশটিতে এখন পর্যন্ত মারা গেছে ৫২ হাজারের বেশি মানুষ।ইউরোপের দেশগুলোতে মারা গেছে এক লাখ ১৭ হাজারের বেশি মানুষ। করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যে ৭টি ইউরোপের। আর বাকি দুটি দেশ এশিয়ার। শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত ইতালিতে ২৬ হাজার ৩৮৪, স্পেনে ২২ হাজার ৯০২, ফ্রান্সে ২২ হাজার ২৭৯, যুক্তরাজ্যে ২০ হাজার ৩৮০, বেলজিয়ামে ৬ হাজার ৯১৭, জার্মানিতে ৫হাজার ৮০৫, ইরানে ৫ হাজার ৬৫০, চীনে ৪ হাজার ৬৩৬ ও নেদারল্যান্ডে মারা গেছে ৪ হাজার ৪২৪ জন।

তবে মৃত্যুর হারের দিক থেকে সবচেয়ে এগিয়ে বেলজিয়াম। দেশটিতে আক্রান্তের ১৫ শতাংশের বেশি মানুষ মারা গেছে। দেশটিতে আক্রান্ত হয়েছে ৪৫ হাজার। এর মধ্যে মারা গেছে ৬ হাজারের বেশি মানুষ। ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য ও ইতালিতে ১৩ শতাংশের বেশি মানুষ মারা গেছে।নেদারল্যান্ডে প্রায় ১২ শতাংশ ও স্পেনে সাড়ে ১০ শতাংশ মানুষ পৃথিবী ছেড়েছে করোনার আক্রমনে।

তবে ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে তুলনামূলক ভালো অবস্থানে আছে জার্মানি। আক্রান্তের দিক থেকে দেশটি পাঁচ নম্বরে থাকলেও মৃত্যুর হারের দিকে থেকে শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে দেশটির অবস্থান দশম।

১ লাখ ৫৫ হাজারের বেশি মানুষ আক্রান্ত হলেও দেশটিতে মৃতের সংখ্যা বাড়েনি। চীনে করোনা ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই দেশটি করোনা চিকিৎসা ব্যবস্থা প্রস্তত করে রেখেছিল। তাই চিকিৎসা দিতে তেমন বেগ পেতে হয়নি দেশটিকে। দেশটিতে মৃত্যুর হার ৪ শতাংশের কম।

এদিকে করোনায় আক্রান্তের শীর্ষে থাকা যুক্তরাষ্ট্র এখন পর্যন্ত মৃত্যু হার কমিয়ে রাখতে পেরেছে। ৯ লাখের বেশি করোনা শনাক্ত রোগীর মধ্যে মারা গেছে ৬ শতাংশের মতো। তবে দেশটিতে প্রতিদিনই মৃত্যু বাড়ছে। সুস্থ হয়েছে প্রায় এক লাখ মানুষ। আরও প্রায় সাড়ে ৭ লাখ করোনা আক্রান্ত এখনো চিকিৎসাধীন। এ ছাড়া চীনে ৫ শতাংশ আর ইরানে ৬ শতাংশের কিছু বেশি মানুষ মারা গেছে।

ডিসম্বেরের শেষ দিকে চীনে শুরু হয় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। এরপর এটি ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। ৬৭ দিনের মাথায় ১ লাখ লোকের করোনা শনাক্ত হয়। ইউরোপ ও আমেরিকায় করোনা ছড়িয়ে পড়ার পর মার্চের শেষদিকে আক্রান্তের হার বাড়তে শুরু করে। তিন মাসের মাথায় ৩১ মার্চ গিয়ে ৮ লাখ ছাড়ায় করোনা শনাক্তের সংখ্যা। আর এপ্রিলের ২৫ দিনে করোনা শনাক্ত হয়েছে ২০ লাখের বেশি।গড়ে প্রতিদিন পাওয়া যাচ্ছে ৮০ হাজার রোগী।

করোনার তথ্য অনুযায়ী, প্রথম ১০ লাখের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ায় রোগী ছিল ১ শতাংশের অর্ধেকের কম। ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশে আক্রান্ত বেড়ে যাওয়ায় এখন এটি ১ শতাংশ পার করেছে।এ অঞ্চলে মৃত্যুও বাড়ছে।

আক্রান্ত শীর্ষ দেশগুলোয় করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার প্রবণতা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সব দেশেই এক থেকে দেড় মাস পরে বড় ধরনের উত্থান ঘটেছে করোনার।৩৮ থেকে ৭৬ দিনের মাথায় সর্বোচ্চ সংক্রমণ খুঁজে পেয়েছে অধিকাংশ আক্রান্ত দেশগুলো।তবে দক্ষিণ এশিয়ায় চিত্র ভিন্ন।ভারত ইতিমধ্যে ৮৭ দিন পার করেছে কিন্তু এখনো বাড়ছে আক্রান্ত।

এ অঞ্চলে প্রথম করোনা আঘাত হানে ২৩ জানুয়ারি নেপালে।এখন পর্যন্ত দেশটিতে আক্রান্ত হয়েছে মাত্র ৪৯ জন। ২৬ জানুয়ারি করোনা শনাক্ত হয় শ্রীলঙ্কায়। সেখানে মোট রোগীর সংখ্যা ৪২০। ২৯ জানুয়ারি ভারত, ২৩ ফেব্রুয়ারি আফগানিস্তান, ২৫ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান, ৫ মার্চ ভুটান, ৬ মার্চ মালদ্বীপ ও সর্বশেষ ৮ মার্চ বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়।এর মধ্যে ভূটান, নেপাল, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা সংক্রমণ অনেকটা নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে।

ইউরোপের দেশগুলোতে এখন লকডাউন শিথিল করা হচ্ছে। তবে এখন ভারত, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুর, ফিলিপাইন, জাপান ও বাংলাদেশসহ দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে করোনায় সংক্রমণ আশঙ্কাজনক হারে বাড়তে শুরু করেছে উল্লেখযোগ্য হারে। এখন পর্যন্ত ভারতে ২৪ হাজার ছাড়িয়েছে করোনা শনাক্তের সংখ্যা।দেশটিতে মারা গেছে ৭৮০ জন।পাকিস্তানে শনাক্ত প্রায় ১২ হাজার ও মৃত্যু ২৫৩, আফগানিস্তানে শনাক্ত প্রায় দেড় হাজার ও মৃত্য হয়েছে ৪৭ জনের। এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, দেশে শনিবার পর্যন্ত মোট ৪ হাজার ৯৯৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে মারা গেছেন ১৪০ জন।প্রথম করোনা শনাক্তের পর ৪৭ দিন পার করেছে বাংলাদেশ।

প্রসঙ্গত, বিশ্বে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত ২৮ লাখ প্রায় ৯০ হাজার জনের মধ্যে এখনও আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে কিংবা হোম আইসোলেশনে রয়েছেন ১৮ লাখ ৬৪ হাজার ৬৬৪ ব্যক্তি। এদের মধ্যে ৫৮ হাজার ১৩৩ জন (৩ ভাগ) খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায়। বাকি ১৮ লাখ ৬ হাজার ৫৩১ জন এখনও ঝুঁকিমুক্ত।